মঙ্গলবার নবান্ন অভিযান ঘিরে মোট ৬ হাজার পুলিশকর্মী শহরের রাস্তায় মোতায়েন ছিল। ২৬ জন ডেপুটি কমিশনার আধিকারিকও ছিলেন । এদিন সকাল ৮টা থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। নবান্নের চারপাশে কার্যত মাছি গলতে না পারা নিরাপত্তার বলয়। সাদা পোশাকেও মোতায়েন বহু পুলিশ। এর মধ্যে সকাল পৌনে এগারোটা নাগাদ নবান্নে এসে পৌঁছলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিরাপত্তার মাঝখান দিয়ে নবান্নে ঢুকলেন তিনি। এদিন অবশ্য নবান্ন অভিযান ঘিরে এই সাজো-সাজো রবের মাঝে বাধ সেধেছিল একনাগাড়ে বৃষ্টি। রাজ্য পুলিশ অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছে যে, নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে তা বেআইনি। কারণ, একে তো কোনও নির্দিষ্ট সংগঠনের তরফে এই অভিযানের ডাক দেওয়া হয়নি। নিয়ম মেনে পুলিশের কাছে কোনও আবেদন জানানো হয়নি। তাই পুলিশ কোনও অনুমতি দিচ্ছে না।
রাজ্য পুলিশ এ কথা জানিয়ে দেওয়ার পর দুটি ই-মেল বার্তা পাঠায় তথাকথিত ছাত্র সমাজের যৌথমঞ্চ। পরে সোমবার সন্ধেয় ফের সাংবাদিক বৈঠক করে এডিজি সাউথ বেঙ্গল সুপ্রতিম সরকার বলেন, ‘আমাদের কাছে ছাত্র সমাজের থেকে দু’টো ই-মেল এসেছে। কোনও অনুমতি চেয়ে তারা ই-মেল করেনি। শুধু মাত্র তারা এই তথ্য জানিয়েছে যে তারা নবান্ন অভিযান করতে চায়’। এডিজি সাউথ বেঙ্গল বলেন, ‘আগেও বলেছি যে মঙ্গলবার ইউজিসি-নেট পরীক্ষা রয়েছে। তাই আমরা অনুমতি দিচ্ছি না। মঙ্গলবারের অভিযান তাই বেআইনি ও অবৈধ। ‘
পুলিশের দাবি, কলকাতা হাইকোর্টের নিয়ম মেনে কর্মসূচি সংক্রান্ত যে সমস্ত জরুরি তথ্য দেওয়ার প্রয়োজন হয়, যেমন তাঁরা কোন পথে এগোবেন, কী কর্মসূচি, কোথায় অবস্থান করবেন, সেই সব তথ্যও জানানো হয়নি। আর সে জন্যই ওই অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। দ্বিতীয় ই-মেলে সংগ্রামী যৌথমঞ্চের তরফে অনুমতি চাওয়া হলেও তাঁদের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
তবে ছাত্রসমাজের প্রতিনিধিরা সোমবার প্রেসক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করে দাবি করেন, তাঁদের কোনও রাজনৈতিক মদত দেওয়া হচ্ছে না। এটা ভ্রান্ত প্রচার। তাঁরা এও বলেন, নবান্ন অভিযানে কোনও রাজনৈতিক নেতা যোগ দিন তা তাঁরা চান না। সাধারণ ছাত্র সমাজের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদান তাঁরা আশা করছেন। তবে অনুমতি-সংক্রান্ত জটিলতা থাকলও প্রস্তুতিতে কোনও খামতি রাখছে না পুলিশ। লাঠি থেকে শুরু করে হেলমেট, বডি প্রটেক্টিভ গিয়ার রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সকলকে। সাদা পোশাকেও বহু পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে নবান্নের ভিতরে ও বাইরে। হাওড়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখভালের জন্য চারজন আইজি পদমর্যাদার পুলিশ অফিসার ছাড়াও ডিআইজি এবং এসপি পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিকরাও ছিলেন।
ইতিমধ্যেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছিল, কোনা এক্সপ্রেস (নিবরা থেকে দ্বিতীয় হুগলি সেতু), আন্দুল রোডের একাংশ, জিটি রোড (মল্লিক ফটক থেকে বেতাইতলা), হাওড়া স্টেশন থেকে গ্র্যান্ড ফোরশোর রোড এইচআইটি ব্রিজ থেকে আরবি সেতুসহ একাধিক রাস্তায় গাড়ি চলাচল করবে না মঙ্গলবার। পাশাপাশি জানানো হয়েছে, যে সমস্ত গাড়ি কোলাঘাট, ডানকুনি, হাওড়া, হাওড়া স্টেশন থেকে কলকাতার দ্বিতীয় হুগলি সেতু দিয়ে আসতে চায় তাদের নিবেদিতা সেতু ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় মিছিল আটকাতে ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছে।