২৭ আগস্টের সকাল। পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের আগাম পূর্বাভাস মতো নবান্ন অভিযান আটকাতে তৎপর ছিল পুলিশ প্রশাসন। কোথাও বাঁশের ব্যারিকেড, তো কোথাও আবার স্টিলের গার্ডরেল। অভিযান আটকাতে তৈরি ছিল ১০ ফুটের অভেদ্য লোহার প্রাচীর। অলিগলিতে মোতায়েন পুলিশ। শহরের দিকে দিকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। আন্দোলনকারীদের তাণ্ডব স্তব্ধ করতে, কার্যত শহর পরিণত হয়েছিল দুর্গে। তবে নবান্নের চারিপাশ সুরক্ষিত থাকলেও, অবরুদ্ধ হল শহর।
অন্যদিকে বেলা গোড়াতেই চোখে পড়ল পুলিশি তৎপরতা। ঘড়ির কাঁটা বেলা দুটো ছুঁইছুঁই। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ধরে ধর্মতলা চত্বরে হাজির হল একটা ছোট্ট জমায়েত। মুখে একটাই স্লোগান, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। ঠিক কিছুক্ষণের মধ্যেই এসএন ব্যানার্জি রোড ধরে প্রবেশ করল একটা বড় মিছিল। সবার পরনে ‘দফা এক, দাবি এক। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ’ লেখা টি-শার্ট।
বেলা দুটো পনেরো। মেয়ো রোডের সংযোগস্থলে নেতাজি মূর্তিকে পিছনে ফেলে মিছিল তখন ইডেন গার্ডেনকে পাশ কাটিয়ে গোষ্ঠ পাল সরণির দিকে। মুহুর্মুহু ভেসে আসছে, ‘পুলিশ তুমি চিন্তা কর! তোমার মেয়ে হচ্ছে বড়।’
বেলা পৌনে তিনটে। মিছিল তখন দ্বিতীয় হুগলি সেতুর খুব কাছে। ওপর প্রান্ত থেকে ক্রমাগত ভেসে আসছিল পুলিশের সতর্কবাণী, ‘আপনারা শান্তি বজায় রেখে ফিরে যান’। তবে পুলিশের সতর্কবাণীর তোয়াক্কা না করেই মিছিল এগোলো। কিন্তু বেশি দূর নয়। ফোর্ট উইলিয়ামের জর্জ গেটের সামনে আগে থেকেই আন্দোলনকারীদের পথ আটকে দিয়েছিল পুলিশ। আন্দোলন হোঁচট খেল। আদতে শান্তিপূর্ণ মিছিল বলা হলেও, ক্রমেই রণক্ষেত্র হয়ে উঠল পরিস্থিতি।
দুপুর দুটো পঞ্চান্ন। জল কামান চলল ব্যারিকেডের পেছন থেকে। পড়ল কাঁদানে গ্যাসের শেল, স্মোক বোম্ব। নিমেষে ভিড় ছত্রভঙ্গ। মাঝে কিছুটা সময় ধাতস্থ হলেন আন্দোলনকারীরা। কাঁদানে গ্যাসের ঝাঁজে কাঁদানে গ্যাসের ঝাঁজে তখন অনেকেরই শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। তখন পুলিশকে লক্ষ্য করে শুরু হল ইটবৃষ্টি। অগত্যা ব্যারিকেড সরিয়ে এগিয়ে এল পুলিশ। সঙ্গী র্যাফ, জল কামান, কাঁদানে গ্যাস। এবার আন্দোলনকারীদের দিকে ধেয়ে আসতে শুরু করে পুলিশ। অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। মুহুর্মুহু চলতে থাকে জল কামান। ফাটতে শুরু করে স্মোক বোম্ব, ছোঁড়া হয় কাঁদানে গ্যাস। পাল্টা আন্দোলনকারীদের তরফ থেকে ছোঁড়া হয় ইট। তাতেই গুরুতর আহত হন দেবাশিস চক্রবর্তী নামে কলকাতা পুলিশের এক সার্জেন্ট।
অন্যদিকে বাবুঘাটের সামনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া পুলিশের বাইকেও। তবে তার পরেই, বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ অবশেষে আন্দোলন থামে। পুলিশের তাড়া খেয়ে তখন ‘নবান্ন’ বিমুখ অভিযান। অন্যদিকে এদিন রাত পর্যন্ত শহরে অবৈধ আন্দোলন এবং জমায়েতের ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে ১২৬জন আন্দোলনকারী। আহত হয়েছেন ১৫জন পুলিশকর্মীও।