অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগে সরব হওয়ার পর একের পর এক কেচ্ছা সামনে আসতে শুরু করেছে। মালয়ালম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আরও বেশি সংখ্যক মহিলা অভিনেতা প্রকাশ্যে তাঁদের যৌন হয়রানির বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এই ঘটনায় মলিউডের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। কখন তাঁদের গ্ল্যামারাস ভাবমূর্তি উড়িয়ে দেওয়া হবে তা তাঁরা নিজেরাই জানেন না।
সম্প্রতি মলিউডের একজন মহিলা চিত্রনাট্যকার মালয়ালম অভিনেতা-পরিচালক ভি কে প্রকাশের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে, গত ২০২২ সালের ৪ এপ্রিলে কোল্লামে একটি কথিত চলচ্চিত্র আলোচনার সময় তাঁকে লাঞ্ছিত করেছিলেন। তিনি অনভিপ্রেত প্রস্তাব, অবাঞ্ছিত স্পর্শ এবং চুম্বনের চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ জানিয়েছেন। তিনি কোচিতে ফিরে এসে তাঁর ক্ষমা এবং ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পরে একটি পুলিশ অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরে হওলিউডের ‘মি টু’-র মতো মলিউডে একটি আন্দোলন দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। যা মনে করিয়ে দিচ্ছে আরও একটি ঘটনা। ২০১৭ সালে ‘মিরাফ্যাক্স’ ফিল্মসের শক্তিশালী প্রযোজক এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা হার্ভে ওয়েইনস্টেইনের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় হয় বিনোদন জগৎ।
প্রসঙ্গত গত রবিবার, বাঙালি অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র এবং একজন মালায়ালাম অভিনেত্রীর অভিযোগের ফলে চলচ্চিত্র পরিচালক রঞ্জিত কেরালা রাজ্য চলচ্চিত্র একাডেমির চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। অন্যদিকে অভিনেতা সিদ্দিকি অ্যাসোসিয়েশন অফ মালয়ালম মুভি আর্টিস্টস (এএমএএমএ) এর সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
হেমা কমিটির রিপোর্ট প্রকাশের পরে এক এক করে প্রতিবাদে মুখর হতে থাকেন অভিনেত্রীরা। সেই রেশ সোমবারও প্রতিনিয়ত চলতে থাকে। ফের বহু মহিলা অভিনেত্রী চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য, অভিনেত্রী মিনু মুনি দাবি করেছেন যে, অভিনেতা মুকেশ, মানিয়ান পিল্লা রাজু, ইদাভেলা বাবু এবং জয়সূর্য ২০১৩ সালের একটি সিনেমার প্রজেক্টের সেটে তাঁকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করেছিলেন। তিনি বলেন যে, তিনি অ্যাডভোকেট চন্দ্রশেখরন, প্রোডাকশন কন্ট্রোলার, কোল্লামের সিপিআই-এম বিধায়ক ভিচু মুকেশের কাছ থেকে অপব্যবহারের সম্মুখীন হয়েছেন। যিনি কাস্টিং ডিরেক্টর টেস জোসেফের কাছ থেকে আরেকটি হামলার অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন। শনিবার টেস জোসেফ, কয়েক বছর আগে একটি ইভেন্টের সময় মুকেশকে অনুপযুক্ত আচরণের জন্য অভিযুক্ত করেছিলেন।
অভিনেত্রী গীতা বিজয়ন মিডিয়াকে বলেছিলেন যে ১৯৯১ সালে পরিচালক থুলাসিদাসের সঙ্গে তাঁর চলচ্চিত্র ‘চানচত্তন’-এর শুটিংয়ের সময় তাঁর খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘চানচত্তন’- সিনেমার শুটিং চলাকালীন তিনি তাঁর সঙ্গে অনুচিত আচরণ করেছিলেন।
আরেক অভিনেত্রী শ্রীবেদিকাও থুলাসিদাসের বিরুদ্ধে কিছু গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। তিনি বলেন যে, তিনি ২০০৬ সালের চলচ্চিত্র ‘আভান চান্দিযুতে মাকান’-এর সেটে তাঁর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিলেন।
অ্যাসোসিয়েশন অফ মালয়ালম মুভি আর্টিস্টস-এর যুগ্ম সম্পাদক বাবুরাজও এমন অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন। একজন জুনিয়র শিল্পী বলেন, কয়েক বছর আগে একটি ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়ার সময় তিনি অভিনেতার ‘আলুভা’ বাসভবনে যৌন নিপীড়নের শিকার হন।
এদিকে অভিনেত্রী রেবতী সম্পাতের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন অভিনেতা সিদ্দিকী। পুলিশের মহাপরিচালকের কাছে তিনি অভিযোগ করেছেন যে, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের পিছনে কিছু এজেন্ডা রয়েছে।
রেবতী সম্পাথ, শনিবার, অভিযোগ করেছেন যে, সিদ্দিক তাঁকে ২০১৬ সালে একটি হোটেলে যৌন হয়রানি করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে ২০১৬ সালে একটি চলচ্চিত্র প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করার আড়ালে তিনি একটি জাল সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।
এই প্রসঙ্গে, বাঙালি অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র চলচ্চিত্র পরিচালক রঞ্জিতের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। যা ইমেলের মাধ্যমে কোচি শহরের পুলিশ কমিশনারের কাছে পাঠানো হয়েছিল।
শুক্রবার মিত্রা জানিয়েছেন, ২০০৯ সালে রঞ্জিত পরিচালিত সিনেমা ‘পালেরি মানিক্যম’-এর অডিশনের জন্য কেরালায় এসে রঞ্জিত তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছিলেন। এরপরে, তিনি রবিবার সন্ধ্যায় কেরালা রাজ্য চলচ্চিত্র একাডেমির চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।