সন্তানদের নিয়ে একবছর পর ঘরে ফিরছেন উমা। কিন্তু কোলের শিশুকে নিয়ে মায়ের মণ্ডপে যেতে এখনও বুক কাপে এই শহরের উমাদের। তবে এবার মাতৃবন্দনায় মাতৃত্বকে মর্যাদা দিতে চাইছেন শহর কলকাতার পুজো উদ্যোক্তারা। মণ্ডপের মধ্যেই স্তন্যপানের জন্য আলাদা কক্ষ করছেন সল্টলেকের জিডি ব্লক এবং বেহালা ক্লাবের পুজো উদ্যোক্তারা।
কোলের শিশুকে প্রকাশ্যে স্তন্যপান করাতে গেলে শ্যেন দৃষ্টির পাশাপাশি মায়ের দিকে কড়া শব্দ ধেয়ে আসার ঘটনা নতুন নয়। কয়েক মাস আগের একটি ঘটনা চাকচিক্যের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক হতশ্রী মানসিকতার ছবি সামনে এনেছিল। শহরের একটি ঝুঁ-চকচকে অভিজাত শপিং মলে স্তন্যপান করাতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল এক মহিলাকে। ধেয়ে এসেছিল প্রশ্নবাণও। পরে ফেসবুকে শপিং মল কর্তৃপক্ষের ব্যবহার নিয়ে সরব হয়েছিলেন ওই মহিলা। ঘটনায় সরব হয়েছিলেন ইন্টারনেট দুনিয়ার বাসিন্দারাও।
বেহালা ক্লাবের সহসভাপতি সায়ন্তন ভট্টাচার্য জানান, ওই ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে প্রথম দৃষ্টি আকর্ষিত হয় তাদের। প্রতিদিন ওই মহিলার মতাে বহু মা-কে একই সমস্যার মুখােমুখি হতে হয়। কিন্তু মাতৃবন্দনাতে যাতে মাতৃত্বের কোনও ভাবে অবমাননা না হয়, সেজন্য প্রথম ‘চাইল্ড কেয়ার রুম’-এর বিষয়টি মাথায় আসে বলে জানান তিনি।
সল্টলেক জিডি ব্লকের সম্পাদক, সৌমিত্র মুখােপাধ্যায় জানান, পুজোর সময় দূরদূরান্ত থেকে দেবী দর্শনে আসেন সাধারণ মানুষ। এক্ষেত্রে মায়েদের যাতে কোনও অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয়, সেই কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত। মণ্ডপের মধ্যেই একটি সুরক্ষিত ঘর শিশুদের স্তন্যপান করানাের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে, জানান এই দুই পুজো কমিটির উদ্যোক্তারাই।
সায়ন্তন ভট্টাচার্য জানান, চলতি বছর ৭৫ বছরে পা দিল বেহালা ক্লাবের পুজো। মণ্ডপের সাজসজ্জা, উপস্থাপনাতে ষােল আনা বাঙালিয়ানা থাকবে এমনটাই জানান তিনি। ক্লাব কর্তৃপক্ষের কথায়, বাঙালির বারাে মাসে তেরাে পার্বন তুলে ধরা হবে পুজোতে। টুসু, ভাদু, চড়ক, গাজন- বঙ্গ সংস্কৃতির এই অঙ্গগুলি শহুরে জীবনযাত্রায় কোথাও গিয়ে ঢাকা পড়ে গেছে। মণ্ডপসজ্জায় বাঙালি পরম্পরার এই উৎসবগুলির ঝলক দেখা যাবে, জানাচ্ছেন উদ্যোক্তারা।
মণ্ডপসজ্জার দায়িত্বে থাকা শিল্পী অদিতি চক্রবর্তী জানান, মঞ্চের সামনে ঝুমুরগান শােনাবেন শিল্পীরা, যা অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠবে বলেও আশাবাদী তিনি। এদিকে ডিজি ব্লকের চলতি বছরের থিম, ‘এলেম নতুন দেশে’। মূলত গালিভার ট্রাভেল্স উপন্যাসের কাহিনির আদলেই মণ্ডপসজ্জা করা হচ্ছে, জানান শিল্পী মিন্টু পাল। তিনি জানান, অনেকেই এই কাহিনি পড়েননি বা জানেন না। মণ্ডপসজ্জায় ‘লিলিপুটের দেশ’-এর ঝলক রয়েছে, এমনটাও জানান তিনি।