• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’

এই ধরনের সংবেদনশীল (ধর্ষণ) বিষয়ের মোকাবিলা করতে কঠোর কেন্দ্রীয় আইন প্রয়োজন

ধর্ষণ রুখতে কঠোর কেন্দ্রীয় আইনের পক্ষে সওয়াল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল যুব কংগ্রেস নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আরজি কল মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলন চলছে। চলতি এই প্রতিবাদ আন্দোলনের মধ্যেই কয়েক দিন আগে মহারাষ্ট্রের থানেতে স্কুলে দুই শিশুকে যৌন নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে। সেই ঘটনার প্রতিবাদে মহারাষ্ট্রে বনধ হয়েছে। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে যখন আন্দোলন চলছে, সেই সময়ে দেশে অন্তত ৯০০ টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য। সাম্প্রতিক অতীতে উন্নাও, হাথরস, মণিপুরে নারী-নিগ্রহের ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে প্রতিবাদ হয়েছে। তথ্য বলছে, ধর্ষণ ও নারী-নিগ্রহ কোনও একটি রাজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। তাই এই অপরাধের মোকাবিলা করতে কঠোর কেন্দ্রীয় আইন প্রয়োজন বলে মনে করেন মমতা এবং অভিষেক।

ইউপিএ জমানায় দিল্লিতে নৃশংস গণধর্ষণের ঘটনার পরে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার ‘নির্ভয়া অ্যাক্ট’ তৈরি করেছিল। সেই আইন তৈরি হওয়ার এক দশক কেটে গিয়েছে। কিন্তু ধর্ষণ, নারী-নিগ্রহ বন্ধ হয়নি। তাই এই অপরাধী বন্ধ করতে আরও কঠোর আইন চাইছেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে দ্রুত এই আইন তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে মমতা চিঠি দেওয়ার আগেই অভিষেক তাঁর এক্স হ্যান্ডলে এই কেন্দ্রীয় আইন তৈরির পক্ষে সওয়াল করেন। দেশজুড়ে ধর্ষণের ঘটনার তথ্য পরিসংখ্যান তুলে ধরে অভিষেক ব্যাখ্যা করেছেন কেন দ্রুত এমন কেন্দ্রীয় আইন প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা মমতার চিঠিতেও এই তথ্য-পরিসংখ্যানের প্রতিফলন হয়েছে।

দেশজুড়ে ধর্ষণ ও খুনের বাড়বাড়ন্তের প্রবণতা দেখেই যে মমতা প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন তা তিনি শুরুতেই পরিষ্কার করে দিয়েছেন। নয়া আইন তৈরির প্রস্তাব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে লিখেছেন, ‘এই ধরনের সংবেদনশীল (ধর্ষণ) বিষয়ের মোকাবিলা করতে কঠোর কেন্দ্রীয় আইন প্রয়োজন। এমন নৃশংস ঘটনায় অভিযুক্তকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। দ্রুত বিচার শেষ করতে এই আইনে ফাস্ট ট্র্যাক স্পেশাল কোর্ট তৈরির বন্দোবস্ত করতে হবে। দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে ১৫ দিনের মধ্যে ট্রায়াল শেষ করার ব্যবস্থাও করতে হবে।’

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তদন্তভার এখন আদালতের নির্দেশে সিবিআইয়ের হাতে। ঘটনার ১২ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত হিসাবে সঞ্জয় রায়কে কলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। সিবিআই এখনও নতুন কাউকে গ্রেফতার করেনি। ট্রায়াল শেষ করে সিবিআই কত দিনের মধ্যে দোষীকে সাজা দিতে পারবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এই কারণে মমতা-অভিষেক দু’জনেই চাইছেন দোষীকে সাজা দেওয়ার নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকুক নয়া আইনে। এক্স হ্যান্ডলে অভিষেক বলেছেন, ‘প্রতিদিন ৯০টি ধর্ষণের ঘটনার অভিযোগ দায়ের হচ্ছে। যার অর্থ প্রতি ঘণ্টায় চারটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। প্রতি ১৫ মিনিটে একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এই পরিস্থিতিতে নির্ণায়ক সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। আমাদের এমন একটি কঠোর আইন প্রয়োজন যেখানে ৫০ দিনের মধ্যে ট্রায়াল শেষ করে কঠোর সাজা নিশ্চিত করা যাবে।’

নরেন্দ্র মোদি সরকার যাতে দ্রুত নয়া এই আইন তৈরি করতে উদ্যোগী হয়, তার জন্য সমস্ত রাজ্য সরকারের চাপ বাড়ানো উচিত বলে মনে করছে তৃণমূল নেতৃত্ব। মমতার কথায়, ‘যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা ভয়ঙ্কর। সারা দেশে প্রতিদিন অন্তত ৯০ টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এই তথ্য দেশ ও সমাজের আত্মবিশ্বাস ও বিবেক নাড়িয়ে দেয়। মহিলারা যাতে নিজেদের নিরাপদ ও সুরক্ষিত মনে করতে পারেন, তার জন্য এই ধরনের ঘটনা বন্ধ করা আমাদের সকলের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।’ অভিষেকের পর্যবেক্ষণ হল, ‘রাজ্য সরকারগুলি কেন্দ্রের উপরে চাপ তৈরি না-করলে দোষীকে কঠোর শাস্তি দেওয়ার আশ্বাস স্রেফ মৌখিক প্রতিশ্রুতিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। এই পরিস্থিতিতে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। নতুন অ্যান্টি-রেপ আইন তৈরি করতে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর চাপ বাড়াতে হবে।’

কঠোরতম শাস্তির দাবি জানিয়ে কলকাতা-সহ দেশজুড়ে বিক্ষোভ-আন্দোলন অব্যাহত। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ শুধু স্লোগান নয়, এখনই আইনে পরিণত হোক। দোষীর উপযুক্ত শাস্তিই বন্ধ করতে পারে সমাজের এই ঘৃণ্য অপরাধকে।