কলকাতার চিকিৎসক ধর্ষণ-হত্যা এবং মহারাষ্ট্রের বদলাপুরে চার বছরের দুই শিশুকে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় উত্তাল গোটা দেশ। নারীদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদে পথে নামছে আপামর জনগণ। এরই মধ্যে নারী সুরক্ষা নিয়ে বড় মন্তব্য করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
রবিবার প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য পাপ। যেই দোষী হোক না কেন, তাকে ছাড় দেওয়া উচিত নয়।
মহারাষ্ট্রের জলগাঁওয়ের লাখপতি দিদি সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল এবং রাজ্য সরকারকে বলব মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য পাপ। যেই দোষী হোক না কেন, তাকে ছাড় দেওয়া উচিত নয়। যাঁরা অপরাধীকে কোনওভাবে সাহায্য করে, তাঁদেরও ছাড় দেওয়া উচিত নয়। হাসপাতাল, স্কুল, অফিস বা পুলিশ ব্যবস্থা যে স্তরেই গাফিলতি ঘটুক না কেন, প্রত্যেককে জবাবদিহি করতে হবে। আমাদের সরকারও নারী নির্যাতনকারীদের কঠোরতম শাস্তি দেওয়ার জন্য আইনকে ক্রমাগত কঠোর করছে।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ২৫০০ কোটি টাকার তহবিলে ছাড়পত্র দিয়েছেন। এর ফলে দেশের ৪.৩ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রায় ৪৮ লক্ষ সদস্য উপকৃত হবেন। ২.৩৫ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ২৫.৮ লক্ষ সদস্যের সুবিধার্থে তিনি ৫০০০ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক ঋণও বিতরণ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার মহিলাদের ক্ষমতায়নে বিশেষ জোর দিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই আগে বিধিনিষেধ ছিল, সরকার তা শিথিল করেছে। আজ তিনটি স্থল-নৌ ও বিমান বাহিনীতে মহিলা অফিসার মোতায়েন করা হচ্ছে। ফাইটার পাইলটও হচ্ছে মেয়েরা। গ্রামে কৃষি ও দুগ্ধোৎপাদন থেকে শুরু করে স্টার্ট আপ – সবই আমাদের মেয়েরা সাফল্যে সঙ্গে সামলাচ্ছে।
মোদি বলেন, আজ ১ লক্ষ ২৫ হাজারের বেশি ব্যাঙ্ক সখীরা গ্রামে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা দিচ্ছেন। এখন আমরা বোনেদেরও ড্রোন পাইলট বানাচ্ছি, যাতে তাঁরা ড্রোনের সাহায্যে কৃষকদের আধুনিক চাষের কাজে সাহায্য করতে পারেন। আমরা আধুনিক কৃষিকাজ এবং প্রাকৃতিক চাষের জন্য মহিলাদের নেতৃত্বের ভূমিকা দিচ্ছি, এর জন্য আমরা কৃষি সখী কর্মসূচি শুরু করেছি।
মহিলাদের জন্যই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হতে চলেছে এবং মহিলারা এতে বিশাল ভূমিকা পালন করবেন।
তিনি বলেন, নারীরা প্রতিটি ঘর ও পরিবারের সমৃদ্ধির নিশ্চয়তা দেয়। কিন্তু তাদের সাহায্যের নিশ্চয়তা দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। মহিলাদের নামে সম্পত্তি ছিল না, ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিতে পারতেন না তাঁরা। ক্ষুদ্র ব্যবসা গড়ে তুলতে পারতেন না। সেই সমস্যা আজ মিটে গিয়েছে। আমরা বছরের পর বছর নারীদের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মহিলাদের ক্ষমতায়নে কেন্দ্র কীভাবে এগিয়ে এসেছে, সেই দৃষ্টান্তও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, আমাদের সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার গরিবদের জন্য যে ঘর তৈরি করবে, সেগুলি মহিলাদের নামে নথিভুক্ত করতে হবে। এ পর্যন্ত নির্মিত চার কোটি বাড়ির অধিকাংশই মহিলাদের নামে। এখন আমরা আরও তিন কোটি বাড়ি তৈরি করতে চলেছি, এই বাড়িগুলির বেশিরভাগই আমাদের মা ও বোনেদের নামে থাকবে।
লাখপতি দিদি প্রকল্প সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লোকসভা ভোটের সময় আমি বলেছিলাম, আমাদের তিন কোটি বোন লাখপতি দিদি তৈরি করতে হবে। গত ১০ বছরে এক কোটি লাখপতি দিদি তৈরি হয়েছে এবং গত দু’মাসে আরও ১১ লক্ষ লাখপতি দিদি তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
ইউপিএ সরকারের সঙ্গে তুলনা টেনে মোদি বলেন, গত ১০ বছরে ১০ কোটি মহিলা লাখপতি দিদি অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তাঁরা সহজেই ব্যাঙ্কের দুয়ারে পৌঁছে গিয়েছেন। ২০১৪ সাল পর্যন্ত সখী মণ্ডলদের ২৫ হাজার কোটি টাকারও কম ব্যাঙ্ক ঋণ দেওয়া হত। অন্যদিকে গত ১০ বছরে প্রায় ৯ লক্ষ কোটি টাকা সাহায্য দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নারীদের জন্য সরকারের প্রত্যক্ষ সহায়তাও ৩০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।