টেক্সাস ইন্ডিয়া ফোরাম আয়ােজিত ‘হাউডি মোদি’ প্রােগ্রামে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডােনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মােদি উপস্থিত ছিলেন। গতকাল তিনি মার্কিন মুলুক পৌঁছেছেন। সাতদিনের মার্কিন সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি টুইট করে লেখেন, ‘হাউডি হিউস্টন–রােদ ঝলমলে দুপুরে বেশ ভালাে লাগছে। আজ ও আগামিকাল একগুচ্ছ বৈঠক রয়েছে- সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলােচনা হবে।’ প্রায় ৫০ হাজার ভারতীয় বংশােদ্ভূত জমায়েতে অংশ গ্রহণ করছেন। প্রধানমন্ত্রী মােদির মার্কিন সফরকে স্মরণীয় করে তােলার লক্ষ্যে মেগা ইভেন্টের আয়ােজন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদি একাধিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পাশাপাশি রাষ্ট্রসঙেঘর সাধারণ সভার অধিবেশনে যােগ দেবেন। মার্কিন মুলুকে পা রেখে প্রধানমন্ত্রী মোদি মার্কিন এনার্জি কোম্পানিগুলাের সিইওদের সঙ্গে গােলটেবিল বৈঠক করেন। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রভীশ কুমার জানান, এনার্জি কোম্পানিগুলাে সিইও’দের সঙ্গে গােলটেবিল বৈঠক সফল হয়েছে। বৈঠকে মুলত এনার্জি সিকিউরিটি ও পারস্পরিক বিনিয়ােগের সুযােগ নিয়ে আলােচনা হয়েছে।
মঙ্গলবার মোদি ও ট্রাম্প মুলত দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযােগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। পাশাপাশি চিনের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য সংঘাত নিস্পত্তি নিয়ে আলােচনা হতে পারে। হােয়াইট হাউসের তরফে নিশ্চিত করে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারত আমেরিকার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের সম্পর্ককে আরও জোরদার করে তােলার ব্যাপারে আলােচনা করবেন।
বুধবার প্রধানমন্ত্রী মোদি আমেরিকার ৪০টি বড় কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিনিয়ােগ নিয়ে গােলটেবিল বৈঠকে যােগ দেবেন। এই বৈঠকটি ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আগামি ২৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ সভার অধিবেশনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের উজ্জল উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাবে। অধিবেশনে ইমরান কাশ্মীর ইস্যু তােলার ব্যাপারে অঙ্গীকার করেছেন। যদিও ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদি সন্ত্রাস দমন প্রসঙ্গ নিয়ে আলােচনা করতে নয়, বিশ্বের দরবারে ভারতের সাফল্যকে তুলে ধরতেই মার্কিন সফরে গেছেন।
পাক বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, কাশ্মীরের পরিস্থিতি ওপর দুনিয়ার নজর টানতে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার রক্ষা পরিষদে গৃহীত পদক্ষেপ যাতে কাশ্মীরে প্রভাব ফেলতে পারে তার জন্য রাস্তা খােলা রাখা হবে।
ভারতের বিদেশ সচিব বিজয় গােখলে বলেন, প্রধানমন্ত্রী মােদির এক সপ্তাহ ব্যাপী মার্কিন সফরের লক্ষ্য সন্ত্রাসমন প্রসঙ্গে আলােচনা নয়, বিশ্বের দরবারে ভারতের সাফল্যকে তুলে ধরা। কাশ্মীরের ওপর থেকে বিশেষ সাংবিধানিক অধিকার প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর থেকে পাকিস্তান কাশ্মীর ইস্যুকে আন্তর্জাতিকরণের চেষ্ট করলেও সফল হয়নি। কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, পাকিস্তানের হস্তক্ষেপ গুরুত্বহীন।
পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেছে। ভারতীয় হাইকমিশনারকে বহিষ্কার করেছে। ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্ততার সম্ভাবনাকে খারিজ করে দিয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এটা শুধুমাত্র ভারত- পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে পড়ে। ভারতের তরফে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ‘কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার– ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ভারতের একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। সন্ত্রাসবাদও তার মধ্যে একটি ইস্যু।’ আন্তর্জাতিক স্তরে সন্ত্রাস দমনের প্রশ্নে ভারতের ভুমিকা স্পষ্ট করে দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হবে।
নিউ ইয়র্কে আয়ােজিত জলবায়ু সম্পর্কিত সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মােদি যােগ দেবেন। জলবায়ু পরিবর্তনে ভারত কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা ব্যক্ত করার পাশাপাশি আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে সম মনােভাবাপন্ন দেশগুলাের থেকে ভারতের প্রত্যাশাও ব্যক্ত করবেন।
অ-চিরাচরিত শক্তি উৎপাদন ক্ষেত্রে বিনিয়ােগকারীরা প্রধানমন্ত্রী মার্কিন সফরের ওপর নজর রাখছেন। ওয়াশিংটন ও বেজিংয়ের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে বাণিজ্য সংঘাত চলছে– ফেব্রুয়ারি থেকে বেজিং আমেরিকার কোনও জিনিষ আমদানি করছে না। কিন্তু ভারত কিনতে প্রস্তুত। মার্কিন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের ষষ্ঠ বৃহত্তম ক্রেতা ভারত। পাশাপাশি ভারত বেশ কিছু মার্কিন ডেয়ারি জাত সামগ্রী আমদানি করতে পারে। ভারত চায় মার্কিন মুলুকে ভারতের কৃষিজাত সামগ্রীর বাজার তৈরি করতে।