• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

‘সেনাপতি পথ দেখাক’, আরজি কর কাণ্ডে অভিষেককে চাইছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংসদীয় এলাকার নেতৃত্বগণ এমন কিছু করেননি এখনও পর্যন্ত

আরজি কর কাণ্ডে তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল সাংসদ তথা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা প্রয়োজন। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তিনি অপরাধীর ফাঁসি চান। অভিষেকের দাবি, সাত দিনের মধ্যে অপরাধীকে এনকাউন্টার করে মেরে ফেলা প্রয়োজন। সম্প্রতি ‘মেয়েদের রাত দখল’ অভিযানের মধ্য দিয়ে সাধারণ জনতা আরজি কর কাণ্ডের বিচার চেয়ে পথে নামে। সেই সাথে বিরোধীরাও একযোগে আক্রমণ শানাতে আরম্ভ করেছে রাজ্যের শাসকদলকে। স্বাভাবিকভাবেই চাপ বেড়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের উপর।

তবে এই চাপের সম্মুখীন হয়েও ঝুঁকতে নারাজ দল। এবার দলেরই একাংশ চাইছেন তৃণমূল সেনাপতি অভিষেক বন্দোপাধ্যায় আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে সামনের সারিতে থেকে লড়াই করুক। উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই এই ঘটনার প্রতিবাদে কলকাতার রাজপথে নেমেছেন তাঁর মহিলা ব্রিগেড নিয়ে। কিন্তু এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে অপরাধীদের শাস্তির নিদান শুনিয়ে দিলেও এখনও আন্দোলনের ময়দানে নেমে আওয়াজ তোলেননি অভিষেক। এই পরিস্থিতিতে দলের নেতা, কর্মী-সমর্থকদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর আদর্শকে পাথেয় করে যুবরাজই পথ দেখাক। দিন-দুয়েক ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল একটি পোস্ট। যেখানে লেখা রয়েছে — “সময়ের ডাক, সেনাপতি পথ দেখাক।” বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে তৃণমূল সমর্থকদের তৈরি এই স্লোগান নিতান্তই তাৎপর্যপূর্ণ, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

প্রসঙ্গত সম্প্রতি রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ তাঁর এক্স পোস্টে লিখেছিলেন, “আরজি কর: আমরাও প্রতিবাদী। দোষী/দোষীদের ফাঁসি চাই। জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসব রুখতে লড়াইতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও সক্রিয়ভাবে সামনে চাই। আমাদেরও কিছু ভুল শুধরে সঠিক পদক্ষেপে সব চক্রান্ত ভাঙতেই হবে।” তৃণমূলের ঘরোয়া আলোচনায় আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ প্রসঙ্গে অভিষেকের নাম উঠে আসলেও, কুনালই প্রথম জনসমক্ষে অভিষেককে প্রতিবাদী আন্দোলনের ময়দানে প্রত্যক্ষভাবে সামিল হওয়ায় আর্জি জানান। তাহলে কি অভিষেক প্রত্যক্ষভাবে প্রতিবাদে সামিল নন? সেই অর্থে, প্রত্যেকেই যখন অপরাধীর ফাঁসির দাবি জানাচ্ছেন, তখন অভিষেকই একমাত্র উল্টো স্রোতে হেঁটে অপরাধীর এনকাউন্টারের দাবি জানিয়েছিলেন।

এ প্রসঙ্গে নিজ যুক্তি দিয়ে দলীয় অবস্থানকেও স্পষ্ট করেছিলেন অভিষেক। ১০ আগস্ট আমতলায় আয়োজিত প্রশাসনিক বৈঠক সেরে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অভিষেক বলেছিলেন, “আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন না আসলে এই ধরণের অপরাধ ঠেকানো যাবে না। আইন সভায় কঠোর আইন প্রণীত না হলে এই অপরাধ বন্ধ হবে না। কেন সাত, আট বছর ধরে ট্রায়াল চালানো হবে? একজন অপরাধীকে জেলে রাখা হলে তার প্রতিদিনের খাবার খরচ ২০০ টাকা, বার্ষিক খরচ হয় ৭৩ হাজার টাকা! সাত বছর সেই অপরাধীর ট্রায়াল চললে পাঁচ লক্ষ টাকার খরচা। কেন এত খরচা করা হবে অপরাধীর জন্য? পারিপার্শ্বিক তথ্যের বা প্রমাণের ভিত্তিতে ধর্ষককে এনকাউন্টার করা হোক সাত দিনের মধ্যে, এই বিল কেন্দ্র আনতে পারে এবং তৃণমূল তাতে সমর্থন জানাতে পারে।”

আরজি কর কাণ্ডের আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অভিষেক এও বলেছিলেন, “রাজনৈতিক রং না দেখে অপরাধীর কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি হোক।” এমনকি বুধে ‘মেয়েদের রাত দখল’ অভিযানের সময়ও যখন আরজি করে কার্যত তান্ডব চলেছিল, সেই সময়ও তৎপর ছিলেন অভিষেক। তিনি নিজেই বুধের রাতে কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের সঙ্গে কথা বলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার আর্জি জানিয়েছিলেন। সুতরাং আন্দোলনের মূল স্রোতে না এসেও রাত-দিন এই ঘটনার গতিবিধির পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছেন সেনাপতি। আর অভিষেকের এই কার্যেই ভরসা পাচ্ছেন তাঁর সমর্থকরা। তৃণমূল নেতৃত্ব থেকে কর্মী-সমর্থকরা মনে করছেন, মুখ্যমন্ত্রীর আদর্শে এই জটিল পরিস্থিতির হাল যদি দলীয় সেনাপতি ধরেন, তাহলে দ্রুতই এর সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে।

উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বর্তমানে রাজ্যজুড়ে তৃণমূল আরজি করের প্রতিবাদী আন্দোলনে পথে নামলেও ব্যতিক্রমী রয়েছে অভিষেক-গড় ডায়মন্ড হারবার। দক্ষিণ ২৪ পরগনার গঙ্গাসাগর, নামখানা, রায়দিঘি, মথুরাপুর পাথরপ্রতিমা, কুলপি এবং জেলার অন্যান্য প্রান্তে বিক্ষোভ, ধর্ণা দিতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা, কর্মীদের। কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংসদীয় এলাকার নেতৃত্বগণ এমন কিছু করেননি এখনও পর্যন্ত। এই পরিস্থিতিতে অভিষেক ঘনিষ্ঠ ডায়মন্ড হারবারের এক তৃণমূল কংগ্রেস নেতা বলেন, “স্বাস্থ্য দফতর এবং পুলিশ প্রশাসনের সমন্বয় না থাকার ফলে একের পর এক ভুল পদক্ষেপ হয়েছে। তাতেই বিতর্ক বেড়েছে। তাই ক্ষোভ প্রকাশ করে দূরে সরে রয়েছেন অভিষেক।” বাস্তবেই কি তাই? যদিও এই বিষয়টিকে উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের অন্দরমহলই বলছে, অভিষেকের প্রতিবাদের ময়দানে অবতীর্ণ হওয়া কেবল সময়ের অপেক্ষা।

এদিকে পাঁচদিন হয়ে গেলেও সিবিআই তদন্ত এখন প্রশ্নের মুখে। কারণ এখনও কোনও গ্রেফতার হয়নি। বড় কোনও তথ্যপ্রমাণও সামনে নিয়ে আসতে পারেনি তদন্তকারীরা। ডায়মন্ড হারবারের স্থানীয় নেতা, কর্মীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করেই চলেছেন। মথুরাপুরের তৃণমূল সাংসদ বাপি হালদারের প্রোফাইলেও জ্বলজ্বল করছে অভিষেক কেন্দ্রিক এই ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর খানের বক্তব্য, “আমাদের নেত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাঁরই আদর্শে বেড়ে ওঠা নেতার নাম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গত পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে লোকসভা নির্বাচনেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে লড়াই করেছি। সিপিএম, বিজেপি নোংরামি করছে এই ইস্যুতে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মাঠে নামলে বিরোধীদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই আমরা এই স্লোগানকে সামনে রেখে এগিয়ে চলেছি।” এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বিরোধী দমনে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া শিক্ষাকে একশো ভাগ কাজে লাগান অভিষেক। তাই স্বল্প বয়সেই তিনি ‘প্রাকটিক্যাল’ রাজনৈতিক নেতৃত্ব। ঠিক এই কারণেই কুনাল ঘোষ অভিষেককে ‘সক্রিয়ভাবে সামনে’ থাকার আর্জি জানিয়েছেন, মনে করছে রাজনৈতিক মহল।