দেশ থেকে বিদেশ গর্জে উঠেছে আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে। শহর, রাজ্য, দেশ, সর্বত্র চলছে শুধুমাত্র এই একটিই আলোচনা। যদিও আরজি কর কাণ্ডের জেরে সাধারণ মানুষকে ভুগতেও হচ্ছে। কারণ গোটা দেশের চিকিৎসক মহল বর্তমানে এই ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছে ফলে বহু জায়গায় জরুরি পরিষেবা ছাড়া চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে। সুরক্ষা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছে কেন্দ্র, কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট নন প্রতিবাদী চিকিৎসকরা। শুধু কলকাতার ডাক্তাররা নন, দেশের প্রায় সব হাসপাতালের চিকিৎসকরা এই প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন। কর্মবিরতি পালন করছে একাধিক চিকিৎসক সংগঠন। তবে এবার এই ঘটনায় একদন অন্যধরনের প্রতিবাদে নামতে চলেছে চিকিৎসক মহল। দিল্লি এইমসও আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার প্রতিবাদে আগেই গর্জে উঠেছে। এবার তাঁরা অভিনব পন্থা বেছে নিল।
রাস্তায় দাঁড়িয়ে রোগী দেখবেন চিকিৎসকরা! এমনই অভিনব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এইমসের প্রতিবাদী ডাক্তাররা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দফতরের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাঁরা রোগী দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সোমবার থেকেই তাঁরা এই অভিনব প্রতিবাদ শুরু করতে চলেছে।সোমবার দিল্লির নির্মাণ ভবনের সামনে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক থাকবেন। রোগীদের জন্য চিকিৎসা করবেন তাঁরাই। চিকিৎসকদের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আন্দোলন-প্রতিবাদ সত্ত্বেও সুবিচার মিলছে না। সেই কারণেই প্রতিবাদ জানানোর এই পন্থা বেছে নেওয়া হয়েছে। দেশ জুড়ে কর্মবিরতি পালনের জেরে বহু সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়েছেন। ইতিমধ্যে একাধিক জায়গায় তা নিয়ে আলোচনাও শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় এইমসের চিকিৎসকরা এমন সিদ্ধান্ত নিলেন যাতে রোগী দেখাও হবে, আবার আরজি কর কাণ্ডে প্রতিবাদও জানানো যাবে।
রবিবার দিল্লির রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের অ্যাসোসিয়েশনের তরফে একটি বিবৃতি জারি করা হয়। সেখানেই জানানো হয়, হাসপাতাল নয়, বরং পথে বসে মানুষের সেবা করবেন তাঁরা। কারণ লাগাতার আন্দোলন সত্ত্বেও বিচার পাননি আর জি করের নির্যাতিতা। তাই চিকিৎসকদের ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়া হবে। মেডিক্যাল কলেজের পঠনপাঠন থেকে শুরু করে ওপিডি পরিষেবা-সমস্ত কিছুই বন্ধ রাখা হবে। তবে এমারজেন্সি পরিষেবাগুলো চলবে হাসপাতালে। উল্লেখ্য, রবিবার সন্ধে পর্যন্ত দেশজুড়ে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। সোমবার থেকেও সেই প্রতিবাদ জারি রাখবেন তাঁরা।
যদিও ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের তরফে আন্দোনলকারী চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আবেদন কেন্দ্রের তরফে ইতিমধ্যেই একটি কমিটি গঠনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, যেখানে রাজ্য সরকারও স্টেকহোল্ডার হিসাবে থাকবে এবং চিকিৎসক-স্বাস্থ্য়কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের পরামর্শ দেবে।
কিন্তু তা সত্ত্বেও হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ছাড়া সব বিভাগে পরিষেবা আপাতত বন্ধই থাকছে। চিকিৎসকদের সাফ বক্তব্য, হাসপাতালে নিরাপত্তা এবং আরজি কর কাণ্ডে সুবিচার না দেওয়া পর্যন্ত তাঁদের এই প্রতিবাদ বজায় থাকবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার অবস্থা কতখানি বেহাল, সেই ছবি তুলে ধরতেই এমন প্রতিবাদের সিদ্ধান্ত। যেহেতু মানুষের সেবা করার শপথ নিয়ে তাঁরা কর্মক্ষেত্রে এসেছেন, সেই কথা মাথায় রেখেই প্রতীকী ওপিডির ব্যবস্থা করেছেন দিল্লির চিকিৎসকরা। কলকাতার ঘটনার পর তাঁর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন ডাক্তার, হাসপাতালের কর্মীরা। প্রসঙ্গত, গত ৯ অগস্ট কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। তারপর থেকেই কার্যত কর্মবিরতিতে গেছেন চিকিৎসকরা।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক শনিবার ঘোষণা করেছে যে, কেন্দ্র একটি কমিটি গঠন করবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে কী কী পদক্ষেপ করা উচিত তা নিয়ে সরকারকে সুপারিশ দেবে এই কমিটি। এই কমিটির কাছে রাজ্য সরকারগুলি সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই তাদের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিতে পারবে। এরই মাঝে আরজি করের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী মোদীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছে আইএমএ।