আর জি কর হাসপাতালের ট্রেনি ডাক্তারের শরীরে ব্যাপক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নির্যাতিতার শরীরে ১৪টিরও বেশি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাঁকে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে। জোর করে শারীরিক সম্পর্কেরও প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, যা যৌন নিপীড়নের ইঙ্গিত দেয়।
নিহত ডাক্তারের মাথা, মুখ, ঘাড়, হাত এবং গোপনাঙ্গে ১৪টিরও বেশি আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। শ্বাসরোধের কারণেই মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর পদ্ধতিটি হত্যাকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। নিহতের গোপনাঙ্গে একটি ‘সাদা, ঘন, আঠালো তরল’ পাওয়া গিয়েছে। রিপোর্টে ফুসফুসে রক্তক্ষরণ এবং শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। হাড় ভাঙার কোনও চিহ্ন ছিল না। রক্ত এবং অন্যান্য শারীরিক তরলের নমুনা আরও বিশ্লেষণের জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
সপ্তাহ খানেক আগে আর জি কর হাসপাতালে এক ট্রেনি ডাক্তারকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে। হাসপাতালের সেমিনার কক্ষ থেকে ওই ট্রেনি চিকিৎসককে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। হত্যার আগে তাঁকে পাশবিক নির্যাতন ও ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। সেই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জেরার সে দোষ কবুলও করে।
প্রাথমিক ভাবে কলকাতা পুলিশ ঘটনার তদন্ত চালালেও দিন কয়েক আগে ধর্ষণ-খুব কাণ্ডের তদন্তভার সিবিআইকে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। সিবিআই তদন্ত চলাকালীনই আবার আর জি করে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ‘রাত দখল’ কর্মসূচি চলাকালীন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে হামলা চালায় একদল দুষ্কৃতী। গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর চালানো হয়। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট), সিসিইউ (ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট), ওষুধের স্টোররুমে ভাঙচুর চলানো হয়।
আর জি করের পুলিশ ফাঁড়ি এবং আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের মঞ্চেও ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। ঘটনাস্থলে কিছু পুলিশকর্মী উপস্থিত থাকলেও প্রাথমিকভাবে তারা কিছু করে উঠতে পারেননি। পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। নামানো হয় র্যাফও।ভিড়কে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। ভাঙচুর করা হয়েছে পুলিশের একাধিক গাড়ি। দুষ্কৃতীদের ছোঁড়া ইটে জখম হন বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী।
দুটি ঘটনায় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিবিআই। এদিকে আর জি কর ইস্যুতে উত্তাল গোটা রাজ্য। প্রতিবাদ, বিক্ষোভে নাজেহাল কলকাতা পুলিশ ইতিমধ্যেই কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কলকাতা পুলিশের তরফে শনিবার জারি করা এক নির্দেশিকায় স্পষ্ট জানানো হয়েছে, ১৮ অগস্ট থেকে ২৪ অগস্ট পর্যন্ত একাধিক রাস্তা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে মিটিংয়েও জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। ৫ বা তার বেশি লোকের জমায়েত হলেই পুলিশ কড়া পদক্ষেপ করবে।
আর জি কর ইস্যুতে শুধু বাংলাতেই নয়, দেশের একাধিক প্রান্তেও এই ইস্যুতে চলছে বিক্ষোভ। এই পরিস্থিতিতে দেশের সব রাজ্যকে আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কে তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দেশের সমস্ত রাজ্যের পুলিশ বাহিনীকে মেল, ফ্যাক্স বা হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে প্রতি দুই ঘণ্টা অন্তর রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।
সূত্রের খবর, এই রিপোর্ট যাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কন্ট্রোল রুমে। শুধু তা-ই নয়, যদি কোনও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে তবে তৎক্ষণাৎ তা কেন্দ্রকে জানাতে হবে। কেন্দ্রের কাছে রাজ্যগুলির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে যাতে সব রকম তথ্য থাকে, সেই কারণেই এই নির্দেশ বলে জানানো হয়েছে। গত ১৬ অগস্ট রাজ্যগুলির কাছে এসে পৌঁছেছে এই বার্তা।