• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

ভারতীয় দলে বাঙালি ফুটবলারদের বঞ্চনায় আইএফএ উদাসীন

৯জন ৭রাজ‍্য থেকে সুযোগ পেয়েছে

ভারতীয় দলে বাঙালি ফুটবলারদের এখন দূরবীন দিয়ে দেখতে হচ্ছে।সিনিয়র ভারতীয় দলে কখনও একজন বা দু’জন বাঙালি ফুটবলার সুযোগ পায়। বয়স ভিত্তিক জুনিয়র পর্যায়ের ভারতীয় দলেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। জুনিয়র পর্যায়ের টুর্নামেন্টে ভারতীয় দলে বাঙালি ফুটবলাররা সুযোগ পাচ্ছেনা বলেই পরবর্তী সময়ে সিনিয়র সর্বভারতীয় স্তরের ক্লাব দলগুলোতে বাঙালি ফুটবলারদের চাহিদা তৈরি হচ্ছেনা। এমন অবস্হা যে,বাংলার তিনপ্রধানেও বাঙালি খেলোয়াড়দের উঠে আসার ক্ষেত্র তৈরি নেই।জুনিয়র পর্যায় থেকে বাঙালি খেলোয়াড়দের তুলে আনার ক্ষেত্রে আইএফএর কোনোও পরিকল্পনা আছে বলে মনে হয়না।
বাংলার যে ক্লাবগুলো সর্বভারতীয় স্তরের টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে তাদের পরিকল্পনার সাথে আইএফএর চিন্তাভাবনার কোনও সামঞ্জস্য নেই। কিন্তু বাংলার ক্লাবগুলোর সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতেই বাংলা দলের সাফল্য নির্ভর করে। এদিকে কেবল বাংলা দলের সাফল্যের উপর ভারতীয় দলে বাঙালি খেলোয়াড়দের সুযোগ পাওয়া নিশ্চিত হয়না। কারন,ভারতীয় দলগঠনের ক্ষেত্রে নির্বাচকমন্ডলী ক্লাব দলের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স বিচার করে খেলোয়াড় স্কাউট করে থাকে। সিনিয়র ও জুনিয়র উভয়ক্ষেত্রেই সাধারণত এই নিয়ম মেনে চলা হচ্ছে। সিনিয়র পর্যায়ে আইএসএল ও আইলিগের ক্লাবদলের খেলোয়াড়দের উপর নজর দেওয়া হয়। সিনিয়রদের সন্তোষ ট্রফির তাই এখন গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে।জুনিয়র পর্যায়েও আইলিগের ক্লাবদলের উপর নজর দেওয়া হয়।
ফলত: সর্বভারতীয় পর্যায়ে বাংলার ক্লাবদলগুলোর সাফল্যের উপর বাঙালি ফুটবলারদের ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়া নির্ভর করে।কিন্তু সর্বভারতীয় স্তরে রাজ‍্যদল হিসেবে বাংলা দলের সাফল্যের উপর ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়া নিশ্চিত হয়না। এক্ষেত্রে বয়সের তারতম্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। জুনিয়র পর্যায়ের আইলিগে ও জাতীয় স্তরের রাজ‍্য দলের জন্য বয়সের নির্দেশনামায় ফাঁরাক আছে। তুলনামূলকভাবে ভারতীয় দলগঠনের জন্য যে বয়সের টার্গেট করা হয়,তা আইলিগে অংশগ্রহণকারী ক্লাবদলগুলোর খেলোয়াড়দের মধ্যে থেকেই পাওয়া যায়।  জুনিয়র পর্যায়ের ক্ষেত্রে বয়সের  মাপকাঠিতে তাই নজর দেওয়া প্রয়োজন।
ভারতীয় অনূর্ধ-২০ ও অনূর্ধ-১৭ ফুটবল দল আগামী কয়েকমাস সাফ গেমস ও এএফসি এশিয়ান কাপের খেলায় ব‍্যস্ত থাকবে।এই দুই ভারতীয় দলে বাংলা থেকে ৩জন ফুটবলার সুযোগ পেয়েছে।অনূর্ধ-২০দলে ইষ্টবেঙ্গল এফসির ২জন ফুটবলার সুযোগ পেয়েছে।গুনরাজ সিং ও গুইতে দুজনেই অবশ‍্য ভিন্নরাজ‍্যের ফুটবলার।এবং অনূর্ধ-১৭ ভারতীয় দলে মোহনবাগান এসজির গোলকিপার ও অধিনায়ক নন্দন রায় সুযোগ পেয়েছে।দুটো বয়সভিত্তিক ভারতীয় দলের জন‍্য সাকুল‍্যে ২জন ফুটবলার সুযোগ পেয়েছে।মোহনবাগানের নন্দন রায় ছাড়া ব‍্যাঙ্গালরু এফসির বাঙালি ফুটবলার মণিরুল মোল্লা সুযোগ পেয়েছে।
ভারতীয় দলগঠনের ক্ষেত্রে সর্বভারতীয় স্তরে ক্লাবদলগুলোর ফুটবলারদের পারফরম্যান্স নজরে রাখা হয়। অনূর্ধ-২০ ভারতীয় দলে গতবছর অর্থাৎ ২০২৩এর এএফসি এশিয়ান কাপের যোগ‍্যতাপর্বের অনূর্ধ-১৭ভারতীয় দল থেকে ১১জন ফুটবলার সুযোগ পেয়েছে। এবং অনূর্ধ-১৯ ভারতীয় দলের ৪জন ফুটবলার বয়সের ভিত্তিতে সুযোগ পেয়েছে। অবশিষ্ট ৮জন ফুটবলারের সবাই আইএসএল ও আইলিগ খেলা টিমের থেকে সুযোগ পেয়েছে।এখান থেকেই বোঝা যায় যে,ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বভারতীয় স্তরে ক্লাব ফুটবলের গুরুত্ব অপরিসীম।
অথচ অনূর্ধ-২০ ভারতীয় দলের কোচ ও গোলকিপার কোচ দুজনেই বাঙালি ও বাংলার ফুটবলার। ওনারা সম্প্রতি অনুষ্টিত অনূর্ধ-১৭ জাতীয় লিগে জোনাল স্তরে বাংলার ৪দলের খেলা দেখেছেন।ইষ্টবেঙ্গল এফসির গুনরাজ সিং ছাড়াও প্রাজ্বল সাহা,দেবোজিৎ রায়,হারু রায়,কার্তিক হাঁসদারা ভালো খেলেছিল।মোহনবাগান এসজির নন্দন রায় ছাড়া পবিত্র মান্ডি,জয় দাস,দেব মাল,সুরোজ সোরেন,প্রিতম গায়েন,আকাশ সিংরাও খারাপ খেলেনি।ইউনাইটেড স্পোর্টসের দেবার্ঘ আইন,শেখ শামিন আলি,দেবোজ‍্যোতি দাস,সোহেল মন্ডল,দেবাশীষ হালদাররা ভালো খেলেছিল।এবং মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের রেহান আলম দারুণ প্রতিভার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু বাঙালি কোচেরা বাংলার ছেলেদের ভারতীয় দলের উপযুক্ত মনে করেননি।শুধু তাই নয়,যে ৩৬জনকে প্রস্তুতি শিবিরে ডাকা হয়েছিল তারমধ্যে একমাত্র ব‍্যাঙ্গালরু এফসির মণিরুল মোল্লা ছাড়া বাঙালি কোচেরা বাঙালি খেলোয়াড়দের কাউকেই নূন‍্যতম সুযোগটুকু দেননি।অনূর্ধ-২০ ভারতীয় দলে নর্থইস্টের ৪রাজ‍্য থেকে ১৫জন ফুটবলার সুযোগ পেয়েছে।এবং ৭রাজ‍্যের ৮জন ফুটবলার ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে।এরমধ্যে ৯জন মণিপুরের ফুটবলার।
একইভাবে অনূর্ধ-১৭ ভারতীয় দলে যে ৩১জন ফুটবলার ডাক পেয়েছে তাদের মধ্যে একমাত্র নন্দন রায় ছাড়া কাউকেই ডাকা হয়নি।অথচ,গতবছর বাংলা দল ডা:বি সি রায় ট্রফিতে রার্নাস হয়েছিল।কিন্তু বাংলা দলের তনভীর দেরা বঞ্চিত থেকে গেছে।৩১জনের প্রস্তুতি শিবিরে নর্থইস্টের সেই ৪রাজ‍্য থেকে ২২জন ফুটবলার সুযোগ পেয়েছে। অবশিষ্ট ৯জন ৭রাজ‍্য থেকে সুযোগ পেয়েছে। গোয়া,কেরল,পাঞ্জাব, দিল্লির সাথে বাংলার একই হাল হয়েছে। সুদেভা এফসি,পাঞ্জাব এফসি ও দিল্লি এফসির ৩দল থেকে ১০জন ফুটবলার এই অনূর্ধ-১৭ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে। এই ১০জনের মধ্যে ৮জন নর্থইস্টের ফুটবলার।৮জন নর্থইস্টের ফুটবলারদের মধ্যে ৭জন মণিপুরের ফুটবলার।এই ক্লাবগুলো তাদের এ্যকাডেমিতে এমনভাবেই খেলোয়াড় চয়েস করে।কিন্তু বাংলায় নার্সারি লিগ থেকে কলকাতা লিগের দ্ধিতীয় বিভাগে পর্যন্ত বয়সভিত্তিক কত ক্লাব আছে।সেখানে হাজার হাজার বাঙালি ফুটবলার খেলছে।দেশের অন‍্যান রাজ‍্যের থেকে বাংলার ফুটবল পৃথক হয়েও ভারতীয় দলের যেকোনো পর্যায়ের দলগঠনে বাঙালি ফুটবলাররা বিবেচিত হয়না।
এমন পরিস্থিতিতে আইএফএ ও বাংলার যে ক্লাবগুলো সর্বভারতীয় স্তরে অংশগ্রহণ করে,তাদের সাথে আলোচনার প্রয়োজন। কিভাবে ভারতীয় বিভিন্ন দলে বাঙালি খেলোয়াড়দের সুযোগ মিলতে পারে,তা ভাবা উচিত। এবছর বাংলা দল ডা: বি.সি.রায় ট্রফিতে চ‍্যাম্পিয়ান হয়েছে। অর্নব রায়,আদিত‍্য মন্ডল,মাসুদ আলি,সব‍্যসাচী ধর,শুভরুপ সর্দাররা সর্বভারতীয় স্তরে তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছে।এবার আইএফএকে তাদের উদাসীনতা সরিয়ে রেখে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সাথে আলোচনায় বসতে হবে।কেন বাংলার খেলোয়াড়দের ভারতীয় দলের প্রস্তুতি শিবিরেও ডাকা হয়না–এর উত্তর ফেডারেশনকে দিতে।ভবিষ্যতে আইএফএও এর দায় এড়িয়ে থাকতে পারবেনা।