আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে শনিবার সারা দেশ জুড়ে কর্মবিরতি পালন করল দেশের সর্ববৃহৎ চিকিৎসক সংগঠন আইএমএ। শনিবার দেশের মোট ৫৫ হাজার হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা থমকে যায়। কর্মবিরতেতে অংশ নেন দেশের প্রায় সাড়ে চার লক্ষ চিকিৎসক। আইএমএ-র যেসব সদস্য বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত তাঁরা এদিন আউটডোরে বসেননি, বন্ধ রাখেন চেম্বারও। তবে বেশ কিছু সংগঠন কর্মবিরতিতে অংশ নেয়নি। এরমধ্যে দিল্লির অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল সায়েন্সেস, পিজিআই চণ্ডীগড়, ওড়িশা এইমস, পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণী এইমস বা ইএসআই জোকা’র মতো কেন্দ্রীয় হাসপাতাল রয়েছে । আইএমএ সভাপতি আরভি অশোকান আগেই বলেন, ‘সিসিটিভি, নিরাপত্তাকর্মীদের মোতায়েন এবং হাসপাতালের যাবতীয় প্রোটোকল অনুসরণ করতে হবে সকলকে। কর্মবিরতিকালে জরুরি অবস্থা এবং এমারজেন্সি পরিষেবা চালু থাকবে। সাধারণ কোনও সার্জারিও হবে না।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষানবিশ মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল দেশ। ২৪ ঘণ্টা কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে চিকিৎসকদের সর্বভারতীয় সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন তথা আইএমএ। দেশজুড়ে ব্যহত হয় চিকিৎসা পরিষেবা। ভোগান্তি বাড়ে রোগী ও রোগীর পরিবারের সদস্যদের। চিকিৎসকেরা আগেই জানিয়েছিলেন, শনিবার সকাল ৬টা থেকে রবিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত জরুরি পরিষেবা ছাড়া চিকিৎসকেরা অন্য কোনও পরিষেবা দেবেন না। ফলে রাজ্য থেকে দেশ সকাল থেকেই হাসপাতালে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়-পরিজনেরা।
আইএমএ সংগঠনের জাতীয় সভাপতি আর ভি অশোকান ও সাধারণ সম্পাদক অনিলকুমার জে নায়েকের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের সব রাজ্যেই ‘সফট টার্গেট’ চিকিৎসকেরা। রোগী মৃত্যু কিংবা চিকিৎসারত অবস্থায় কোনও রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক হলে প্রথমেই রোষ গিয়ে পড়ে চিকিৎসকদের উপর। এছাড়াও আরজি কর কাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ করা হয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বুধবার রাতে নিরস্ত্র চিকিৎসকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন আইএম-এর দাবিতে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে।
আইএমএ-র দাবি, ১৮৯৭ সালের মহামারী রোগ আইনে ২০২৩ সালের সংশোধনীগুলিকে ২০১৯ সালের খসড়া হাসপাতাল সুরক্ষা বিলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে শক্তিশালী করা উচিত আইনটিকে। আরও বলা হয়েছে, ৩৬ ঘন্টার ডিউটি শিফটে যে চিকিৎসক ছিলেন, তাঁর বিশ্রামের জন্য নিরাপদ স্থান ছিল না। আবাসিক চিকিৎসকদের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রামকক্ষও নিশ্চিত করতে হবে। এরই সঙ্গে, আইএমএ-এর তরফে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে অপরাধের তদন্ত এবং ন্যায়বিচার প্রদানের দাবি করা হয়েছে। হাসপাতাল ভাঙচুরের ঘটনায় দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি তোলা হয়েছে। মৃতার পরিবারের জন্য উপযুক্ত এবং মর্যাদাপূর্ণ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। চিকিৎসক সংগঠন দাবি জানিয়েছে, সব হাসপাতালের নিরাপত্তা বিমানবন্দরে চেয়ে কোনও অংশে কম হওয়া উচিত নয়।
আইএমএ কর্মবিরতির ডাক দিলেও পশ্চিমবঙ্গে এদিনই স্বাস্থ্যভবন থেকে রাজ্যের ২৮টি মেডিক্যাল কলেজ ও মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের ভার্চুয়াল বৈঠকে আউটডোর, জরুরি বিভাগ এবং রোগীভর্তি স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। রাজ্যের সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত প্রায় ৫৫ হাজার চিকিৎসকের মধ্যে শনিবার যাঁদের ডিউটি ছিল , তাঁদের নির্দিষ্ট সময়ে কর্মস্থলে হাজির থাকার নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট উপাধ্যক্ষ ।