• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

আয় কমে ব্যয় বৃদ্ধি

১৯টি রাজ্যের ৬ হাজার মানুষের উপর এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে

ফরওয়ার্ড লুকিং সার্ভে রিপোর্ট। প্রতি দু’মাস অন্তর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এই রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকে। রিপোর্টে দেশের অর্থনীতির উপর মানুষের কতটা ভরসা আছে, তা প্রকাশ করা হয়। চলতি বছরে দেশে মূল্যবৃদ্ধির জেরে পরিবারের দৈনন্দিন খরচ আরও বাড়বে, কিন্তু বাড়বে না আয়। দেশের ৭৫ শতাংশ মানুষ এই রকমই ভাবছেন বলে জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই সর্বসেষ রিপোর্ট।

করোনা মহামারীর বিপর্যয় কাটিয়ে দেশের অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও ফের তা বিপর্যয়ের মুখে। এই কথা জানিয়ে তিন দফার এই সার্ভে রিপোর্ট জানাচ্ছে, অর্থনীতির উপর মানুষের ভরসা প্রতি মুহূর্তে কমছে। মূলত মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারি চরম আকার নেওয়ায় অর্থনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা নিয়ে ভরসা কমছে মানুষের। গত এপ্রিল, জুন এবং আগস্ট এই তিন মাসের প্রকাশিত রিপোর্ট তুলনা করে দেখা গেছে, প্রতি মাসেই দেশের অর্থনীতির উপর মানুষের ভরসা কমছে।

জুলাই মাসে মূল্যবৃদ্ধির হার কিছুটা কম হলেও তাতে দাম নিয়ন্ত্রণ হয়েছে বলে মনে করছে না রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। বিশেষজ্ঞদের মত, শুধু চলতি জুলাই মাসে গত বছরের জুলাই মাসের তুলনায় মূল্যবৃদ্ধির হার সামান্য কমলেও মোট মূল্যবৃদ্ধির হার কমার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। ফলে অর্থনীতিতে মূল্যবৃদ্ধির চাপ অব্যাহত থাকায় দাম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মানুষের ভরসা কমছে।

কেন্দ্রের প্রকাশিত জুলাই মাসের ভোগ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সূচকের হারে বলা হয়েছে, গত বছর জুলাই মাসে মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৭.৪৪ শতাংশ। তুলনায় এবছর জুলাই মাসে তা কমে হয়েছে ৩.৫৪ শতাংশ। এক মাস কমলেও, ২০২৪ সালে গড় বৃদ্ধির হার ৪.৮ শতাংশের উপর রয়েছে। খাদ্যপণ্যের দামও বৃদ্ধিরই পথে। জুলাই মাসে এই বৃদ্ধির হার হলো ৫.৪৩ শতাংশ। এছাড়া ডাল, দানা শস্যের দামও চড়া রয়েছে। তার দাম বৃদ্ধির হার হলো ১৪.৭৭ শতাংশ।

বাজারে অঢেল খাদ্য মজুত, কিন্তু তা কেনার ক্ষমতা নেই সাধারণ মানুষের। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আগস্ট মাসের সার্ভে রিপোর্টে সেই কথাই তুলে ধরা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হচ্ছে, মার্চ মাসের সার্ভে নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছিল এপ্রিলে। তাতে ৯৮.৬ শতাংশ সাধারণ মানুষ দেশের অর্থনীতির যে সমস্যা রয়েছে, তা কেটে যাবে বলে ভরসা প্রকাশ করেছিল। মে মাসের রিপোর্ট জুন মাসে প্রকাশ হয়। তাতে দেখা গেছে ভরসা কমে গিয়ে ৯৭.১ শতাংশ মানুষ আশা প্রকাশ করছেন সংকট কেটে যাবে বলে। জুলাই মাসের রিপোর্টে ভরসা আরও কমে হয়েছে ৯৩.৯ শতাংশ। তিন মাসে ৪ শতাংশ মানুষের ভরসা কমে গিয়েছে।

প্রসঙ্গত, করোনা মহামারীর সময় মানুষের ভরসা কমে দাঁড়িয়েছিল ৪৮.৬ শতাংশ। মহামারীতে লকডাউন উঠে যাওয়ার পর ফের অর্থনীতি স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসে। কিন্তু চলতি বছর থেকে আবার অর্থনীতির বেহাল দশা চলায় মানুষের ভরসা প্রতিদিন কমছে।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট জানাচ্ছে, ১৯টি রাজ্যের ৬ হাজার মানুষের উপর এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে। জানুয়ারি সমীক্ষায় ৬৮.৬ শতাংশ সাধারণ মানুষ জানিয়েছিলেন, দেশে নতুন চাকরি নেই, কাজ চলে যাচ্ছে, ফলে আয় কমে গেছে। অন্যদিকে চড়া মূল্যবৃদ্ধির জেরে সংসার খরচ প্রতিদিন বাড়ছে। আয় নেই অথচ পরিবারে ব্যয় বেড়ে চলেছে বলে সকলেই জানান। মে মাসেও আয় কমে ব্যয় বেড়ে চলার সমস্যা জানিয়েছেন আরও বেশি মানুষ। দেশের মোট ৭৫.৮ শতাংশ মানুষ জানাচ্ছেন, আয় কমে ব্যয় বেড়ে চলায় সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্টে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, দেশের মোট ৭৫.৮ শতাংশ মানুষ সমীক্ষায় জানিয়েছে, তাদের আয় কমে গিয়ে ব্যয় বেড়ে গিয়েছে।