• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

অদ্বিতীয় ভাষাবিদ হরিনাথ দে (1877-1911)

রাজু পারাল বেশিদিন বেঁচে থাকলে তিনি আমাদের অনেককিছু দিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় তাঁর জীবনকাল ছিল খুবই সীমিত। মাত্র ৩৪ বছর বয়সেই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যান। রেখে যান ভাষা চর্চার অমূল্য সব সম্পদ। তিনি ‘হরিনাথ দে’ (1877-1911)। খ্যাতিলাভ করেছিলেন অসাধারণ ও বিস্ময়কর ভাষা প্রতিভার জন্য। ভাষাতত্ত্বের চর্চায় তিনি আজীবন ছিলেন আগ্রহী। কেমব্রিজের

রাজু পারাল

বেশিদিন বেঁচে থাকলে তিনি আমাদের অনেককিছু দিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় তাঁর জীবনকাল ছিল খুবই সীমিত। মাত্র ৩৪ বছর বয়সেই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যান। রেখে যান ভাষা চর্চার অমূল্য সব সম্পদ। তিনি ‘হরিনাথ দে’ (1877-1911)। খ্যাতিলাভ করেছিলেন অসাধারণ ও বিস্ময়কর ভাষা প্রতিভার জন্য। ভাষাতত্ত্বের চর্চায় তিনি আজীবন ছিলেন আগ্রহী। কেমব্রিজের কীর্তিমান অধ্যাপকরা ভাষাতত্ত্বের চর্চায় হরিনাথের বিস্ময়কর নৈপুণ্যের কথা একাধিকবার উল্লেখ করেছেন। ভাবলে বিস্ময় জাগে যে ত্রিশ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগেই তিনি গ্রীক, লাতিন, প্রাচীন ফরাসি, গথিক, পর্তুগীজ, ইতালীয়, স্পেনীয়, ফরাসী, রুমানীয়, সংস্কৃত, পালি, তুর্কী, আরবি, হিন্দি, বাংলা, ওড়িয়া, মারাঠী, গুজরাতি সহ একাধিক ভাষায় পারদর্শিতা লাভ করেন।

প্রখ্যাত প্রাচ্য তত্ত্ববিদ উইলিয়াম হর্নেল হরিনাথ সম্পর্কে বলেছেন যে, হরিনাথ যখন কোনও নতুন ভাষা শিক্ষার জন্য অগ্রসর হতেন, সেই ভাষার একটি অভিধান তিনি সংগ্রহ করতেন। তারপর অভিধানের শব্দগুলি তিনি মুখস্থ করতেন অর্থ, উচ্চারণ ও শব্দের ব্যুৎপত্তিসহ। ফলে ভাষা তাঁর আয়ত্তে থাকত। যে কোনও ভাষা শিক্ষার পরে তিনি সেই ভাষায় রচিত সাহিত্য ও অন্যান্য রচনা পাঠ করতেন। ফলে কেবল ভাষা নয়, সেই ভাষার সাহিত্যেও তিনি পাণ্ডিত্য অর্জন করতেন। শোনা যায়, কোনও ল্যাটিন নাটকের যে কানও একটি লাইন বললে হরিনাথ পরবর্তী লাইনটি বলতে পারতেন অনায়াসে। এমনই বিস্ময়কর ছিল হরিনাথের স্মৃতিশক্তি।

একবার লর্ড কার্জন ঢাকা পরিদর্শনে গেলে, স্থানীয় তথ্য সংগ্রহ করে হরিনাথ তাঁকে ঢাকার ইতিহাস উপহার দিয়েছিলেন। বইটির উৎসর্গপত্র হরিনাথ রচনা করেছিলেন অলঙ্কারবহুল ল্যাটিন ভাষায়। তাতে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন কার্জন। হরিনাথ তখন ঢাকার এক কলেজের অধ্যাপক। আর একবার, বর্ধমানের মহারাজার দোভাষী হয়ে হরিনাথ ভ্যাটিক্যান (ইতালি) প্রাসাদে মহামান্য পোপের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। মহামান্য পোপকে হরিনাথ সম্ভাষণ করেন নির্ভুল ল্যাটিন ভাষায়। হরিনাথের চোখা চোখা ল্যাটিন উচ্চারণে স্তম্ভিত হন পোপ। তিনি হরিনাথকে পরামর্শ দেন ইতালীয় ভাষা শিখে নেবার জন্য। হরিনাথ তৎক্ষণাৎ পোপকে স্তম্ভিত করে সরাসরি ইতালীয় ভাষাতেই কথা বলতে শুরু করলেন। এইভাবে হরিনাথের ভাষাজ্ঞান হয়ে উঠেছিল তাঁর অসামান্য প্রতিভার পরিচয়। তবে হরিনাথের ভাষার প্রতি অনুরাগ জন্মায় মা এলোকেশী দেবীর কাছ থেকে। সংসারের দৈনন্দিন কাজকর্মের অবসরে মা একদিন ছেলেকে খেলাচ্ছলে বাংলা বর্ণমালা চিনিয়ে দিলেন। ছেলে সহজেই অক্ষরগুলি শিখে নিয়ে তরকারির খোসা ও কাঠকয়লা দিয়ে সারা বাড়ির মেঝে ও দেওয়ালে অক্ষরগুলি লিখতে শুরু করে। এভাবে একদিনেই তাঁর অক্ষর পরিচয় হয়ে গিয়েছিল।

পিতার চাকরির সূত্রে হরিনাথের বাল্যশিক্ষা মধ্যপ্রদেশের রায়পুরে শুরু হলেও পরে তিনি কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৯২ সালে এই স্কুল থেকেই তিনি এন্ট্রান্স পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরে এই কলেজের ছাত্র হিসেবে তিনি ১৮৯৪ এফ.এ. পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ভাষাবিষয়ে কৃতিত্বের জন্য হরিনাথ ‘ডাফ’ স্কলারশিপ অর্জন করেন। তারপর তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে অনার্স সহ বি.এ. ক্লাসে ভর্তি হন। ১৮৯৬ সালে তিনি ল্যাটিন ও ইংরাজিতে ডাবল অনার্স সহ কৃতিত্বের সঙ্গে বি.এ. পাশ করেন এবং মাসিক ৪০ টাকার স্কলারশিপ অর্জন করেন। একই বছরে (১৮৯৬) হরিনাথ ল্যাটিন ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রী লাভ করে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে স্বর্ণপদক পান। এই পরীক্ষায় তিনি শতকরা সাতাত্তর নম্বর পেয়েছিলেন। 1897 সালে হরিনাথ উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ড যাত্রা করেন এবং ভর্তি হন সেখানকার (কেমব্রিজের) ‘ক্রাইস্ট’ কলেজে। কেমব্রিজের ক্ল্যাসিকাল ট্রাইপস্ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে হরিনাথ এক দুর্লভ সম্মান অর্জন করেন। ইতিপূর্বে আর একজন ভারতীয় ছাত্র (শ্রী অরবিন্দ ঘোষ) ট্রাইপস্ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর হরিনাথকে সেখানকার শিক্ষকেরা যেসব প্রশংসাপত্র দিয়েছিলেন তা থেকে ওই তরুণ বয়সে তাঁর ভাষা ও সাহিত্যে পাণ্ডিত্যের যথেষ্ট পরিচয় মেলে।

হরিনাথের কর্মজীবনও ছিল সমান কৃতিত্বপূর্ণ। তিনি তাঁর সময়কালের প্রথম ও একমাত্র ভারতীয় যিনি কোনও অভিজ্ঞতা ছাড়াই ভারত সরকারের শিক্ষা বিভাগ থেকে নিয়োগপত্র পেয়েছিলেন ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, তাঁর এই নিয়োগের খবরে লর্ড কার্জন ভীষণ খুশি হন।

অধ্যাপক হিসাবে হরিনাথের কৃতিত্বের পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর ছাত্রদের স্মৃতিকথায়। এ প্রসঙ্গে তাঁর ছাত্র অঘোরনাথ ঘোষের লেখায় পাওয়া যায় : ‘একদিন শুনিলাম ঢাকা কলেজ থেকে প্রফেসর হরিনাথ দে আমাদের পড়াইতে আসিতেছেন। ইতিপূর্বেই আমরা তাঁহার বিশ্ববিখ্যাত ঔৎসুক্যের সহিত তাঁহার আগমন প্রতীক্ষা করিতে লাগিলাম।… আমার বেশ মনে পড়ে, হরিনাথ দে যখন প্রথম পড়াইতে আসেন সেদিন ছেলেরা কোনও রকম গোলমাল করে নাই। জানি না তাঁহার বিশাল চক্ষু দুটির ভিতর কেমন একটা জ্যোতি ছিল, তাঁহার কণ্ঠের স্বরে কেমন একটা গাম্ভীর্য ছিল, ছেলেরা সকলেই বেশ মনোযোগের সহিত তাঁহার নিকট পাঠ গ্রহণ করিয়াছিল।’

ঢাকা কলেজে কিছুকাল অধ্যাপনার পর হরিনাথ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯০২ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ.এ. (লাতিন) এবং বি.এ. (গ্রীক) পরীক্ষার পরীক্ষক নিযুক্ত হন। তিন বছর পর হরিনাথ যখন প্রেসিডেন্সি কলেজে বদলি হন, তখন অধ্যাপক ও পণ্ডিত হিসাবে তাঁর খ্যাতি কলকাতার ছাত্রসমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রেসিডেন্সি কলেজের অধিকাংশ অধ্যাপকরা হরিনাথের গুণমুগ্ধ ছিলেন। লাতিন ও গ্রীকভাষায় হরিনাথের পাণ্ডিত্য কলেজের বিখ্যাত অধ্যাপক প্যার্সিভ্যাল সাহেবকে মুগ্ধ করেছিল।

1907 সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ভাষাবিজ্ঞান’ বিভাগে চালু হলে হরিনাথ সেখানে প্রথম অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন। বলাবাহুল্য, ভারতে ভাষাবিজ্ঞান (Linguistics) চর্চার অন্যতম পথিকৃত বলা যায় তাঁকে।

1907 সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি হরিনাথ কলকাতার ‘ইমপিরিয়াল লাইব্রেরির’ (বর্তমানে যার নাম ন্যাশনাল লাইব্রেরি) সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি এখানে লাইব্রেরির ‘গ্রন্থাগারিক’ পদে নিযুক্ত হন। হরিনাথের এই গ্রন্থাগারিক পদলাভের পক্ষে দু’টি বিষয়ে হরিনাথের যোগ্যতা বিশেষভাবে সহায়ক হয়। প্রথমতঃ এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন ভাষায় তাঁর বিস্ময়কর দক্ষতা। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন বিষয়ের গ্রন্থ সম্পর্কে তাঁর অপরিসীম জ্ঞান। হরিনাথের আশা ছিল ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরির সুবিশাল গ্রন্থ সংগ্রহ তাঁর ব্যক্তিগত জ্ঞান-চর্চার সহায়ক হবে এবং ভবিষ্যতে পাঠক ও গবেষকদের মধ্যে তিনি জ্ঞানচর্চার আগ্রহ ও প্রেরণা সঞ্চার করতে পারবেন।

হরিনাথ ‘গ্রন্থাগারিক’ পদের কার্যভার সামলান 1907 সাল থেকে ১৯১১ সাল পর্যন্ত। সেকালে এই ধরনের সরকারি উচ্চপদে ভারতীয়দের নাম বিবেচনাই করা হত না। সেদিক থেকে হরিনাথের এই পদপ্রাপ্তি শুধু তাঁর ব্যক্তিগত অর্জনই ছিল না, ছিল সেকালের বাঙালি মনীষার সার্থক ও যথাযথ স্বীকৃতি, যা ওই ঔপনিবেশিক যুগে এক ব্যতিক্রমী গর্বের বিষয়। হরিনাথের এই পদলাভের সংবাদে ইংল্যান্ড থেকে বিদ্যানুরাগী লর্ড কার্জন তাঁকে এক অভিনন্দন পত্রে লেখেন— ‘যোগ্য ব্যক্তিই যোগ্য কাজ নিযুক্ত হয়েছেন।’

‘লাইব্রেরিয়ান’ পদে যোগদান করে তিনি চেষ্টা করেছিলেন একদিকে প্রাচীন ও দুষ্প্রাপ্য বই সংগ্রহ করতে এবং অন্যদিকে প্রয়োজনীয় সদ্য প্রকাশিত বই সংগ্রহ করতে। যে সমস্ত বইয়ের প্রতি তাঁর অপরিসীম অনুরাগ ছিল, সেগুলি কেবল সংগ্রহ করেই উৎফুল্ল হতেন না, বিদ্যানুরাগী বন্ধু ও পরিচিতজনকে তা উপহার দিয়ে সন্তুষ্ট হতেন। একাধিক সময়ে বহু বিশিষ্ট মানুষের গবেষণার প্রয়োজনে নানা দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থের সন্ধান জুগিয়েছিলেন তিনি। স্যার যদুনাথ থেকে শুরু করে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ বিশিষ্ট জনেরা তাঁদের গবেষণার প্রয়োজনে বারে বারে হরিনাথের দ্বারস্থ হতেন।

দুষ্প্রাপ্য বই সংগ্রহের জন্য হরিনাথ কোথায় না কোথায় গিয়েছেন ভাবলে বিস্ময় জাগে। একবার বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে আবিষ্কার করলেন কালিদাসের ‘অভিজ্ঞান-শকুন্তলাম’-র প্রাচীনতম পুঁথিটি। যেটি তিনি বার্লিনের ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরিকে উপহার দেন। একদিন কলেজ স্ট্রিটের একটি পুরনো বইয়ের দোকান থেকে আবিষ্কার করেন ওয়ারেন হোস্টিংসের স্বহস্তে লেখা চিঠি। এই চিঠিটি তিনি কলকাতার ইমপিরিয়াল লাইব্রেরিকে দান করেন। এভাবে ঢাকা থেকে সংগ্রহ করেন তুর্কী ও পারসিক ভাষায় রচিত বৈরাম খানের সমগ্র কবিতার পাণ্ডুলিপি। বহু পরিশ্রম ও আগ্রহে তিলে তিলে নিজের সংগ্রহশালাও গড়েছিলেন তিনি। যেখানে স্থান পেয়েছিল তিব্বতী, চিনা, সংস্কৃত, আরবি, পারসিক ভাষার দুষ্প্রাপ্য সব বই। শোনা যায়, সেই সময়ে হরিনাথ মাসে ৬০০ টাকারও বেশি বই কিনতেন। একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে লেখা হয়, মৃত্যুর সময়ে হরিনাথের সংগ্রহে ছিল হাজার সাতেক পুঁথি ও বই। ১৯১১ সালের হিসেবে যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২৫,০০০ টাকা। দুর্ভাগ্য, হরিনাথের মৃত্যুর পর তাঁর পরম সাধের সংগ্রহশালাটি মাত্র হাজার তিনেক টাকায় বিক্রি হয়ে যায়।

এক সময়ে নিজের সঞ্চিত পুস্তকভাণ্ডার সম্পর্কে তিনি নিজে নোট লিখেছেন— “I have always been a great lovers of Books and have always bought for my own private use a very large number of books on subjects which I understand and in which I am interested from time to time.”

হরিনাথ দে সমকালে হয়ে উঠেছিলেন এক চলমান গ্রন্থাগার। শ্মশানের চিতায় তাঁর পুড়ে যাওয়া মৃতদেহ দেখে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের মনে হয়েছিল একটি বিশাল গ্রন্থশালা যেন লেলিহান আগুনে পুড়ে যাচ্ছে। সেদিন তিনি লিখেছিলেন— ‘‘আজ শ্মশানে বহ্নিশিখা অভ্রভেদী তীব্র জ্বালা, আজ শ্মশানে পড়ছে ঝরে উল্কাতরল জ্বালার মালা। যাচ্ছে পুড়ে দেশের দেশের গর্ব, — শ্মশান শুধু হচ্ছে আলা, যাচ্ছে পুড়ে নতুন করে সেকেন্দ্রিয়ার গ্রন্থশালা।’

চৌত্রিশ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে বিদ্যাচর্চার বহু বিচিত্র শাখায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন হরিনাথ। ভাষাচর্চায়, শিক্ষাদান, অনুবাদ কর্মে, পুস্তক সম্পাদনায় এবং সর্বোপরি বিদ্যানুরাগীদের সযত্ন সহায়তায় তিনি নিজেই হয়ে উঠেছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান।

বিস্ময়কর প্রতিভাসম্পন্ন এই বঙ্গসন্তান মাত্র ৩৪ বছর বয়সে টাইফয়েডে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আজকাল মহা ধুমধাম করে যখন চারিদিকে ‘ভাষাদিবস’ পালিত হয়, তখন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলার এই ভাষাবিদকে কেউ মনে রাখেনি, হয়তো বাঙালি বলেই।

হরিনাথের অকালমৃত্যুর পরে এশিয়াটিক সোসাইটির স্মৃতি সভায় প্রখ্যাত প্রাচ্যতত্ত্ববিদ আবদুল্লা সুরাবর্দী সাহেব বলেছিলেন যে, ‘একজন মহারাজার মৃত্যুর পরে আর একজন মহারাজা তাঁর উত্তরাধিকার গ্রহণ করেন। কিন্তু হরিনাথের মনীষার উত্তরাধিকার গ্রহণ করার মতো ব্যক্তি আগামী এক শতাব্দীর মধ্যে জন্মগ্রহণ করবে না।’

বিভিন্ন ভাষা ও জ্ঞানরাজ্যের এক বিস্তৃত ভূমিতে হরিনাথ আজও একক।