সেমিনার হলের দিকে যাওয়ার সময় গলায় ছিল ব্ল-টুথ হেডফোন। আধ ঘণ্টা পরে বেরিয়ে আসতেই তা উধাও! যা দেখে সন্দেহ হয় তদন্তকারী আধিকারিকদের। পরে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই বেরিয়ে আসে আসল সত্য। শুক্রবার মৃতার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার মধ্যরাতে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। বছর একত্রিশের সঞ্জয় ভবানীপুরের বাসিন্দা। সূত্রের খবর, পেশায় কলকাতা পুলিশের ওই সিভিক ভলেন্টিয়ারের হাসপাতালে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। শনিবার অভিযুক্তকে আদালতে তোলা হলে তাকে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত এগারোটা নাগাদ তাঁকে প্রথমবারের মতো হাসপাতাল চত্বরে দেখা যায়। তারপর হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে মদ্যপান করে সঞ্জয়। পরের দিন, অর্থাৎ শুক্রবার ভোর চারটে নাগাদ ফের অরজিকর হাসপাতালের চতুর্থতলের সেমিনার হলের করিডোরে দেখা যায় তাঁকে। যা ইতিমধ্যেই উঠে এসেছে সিসিটিভি ফুটেজেও। পুলিশ সূত্রে খবর, সেই সময় তাঁর গলায় ছিল ব্লু-টুথ হেডফোন। তবে ঠিক ত্রিশ মিনিট পর সেমিনার হলের করিডোর থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় অভিযুক্তকে। তখন তাঁর গলায় ব্লু-টুথ হেডফোনটি ছিল না বলেই জানাচ্ছে পুলিশ। অন্যদিকে ওই হেডফোনের সন্ধান মেলে ধর্ষিতা মহিলা চিকিৎসকের পাশে। আর তা দেখেই সন্দেহ হয় তদন্তকারী আধিকারিকদের।
সূত্রের খবর, ভোর তিনটে নাগাদ মৃত মহিলা চিকিৎসককে লাল চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমোতে দেখেন হাসপাতালের এক কর্মী। তার পরেই খতিয়ে দেখা হয় ভোর তিনটের পরের সিসিটিভি ফুটেজ। সেখানেই সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় অভিযুক্ত ওই সিভিক ভলেন্টিয়ারকে। যদিও ঘটনাকে ঘিরে রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে একটা বড় প্রশ্নচিহ্ন উঠলেও, নিরুত্তাপ অভিযুক্ত। এদিকে ধৃতকে জেরার সময়ে অপরাধের কথা স্বীকার করলেও কোনও রকম ভ্রুক্ষেপ নেই সঞ্জয়ের। মহিলাকে ধর্ষণ করে খুন করার পর ফের ধর্ষণ করা হয় মৃত মহিলাকে। ধৃত সঞ্জয়ের মোবাইল থেকে মিলেছে অসংখ্য পণ্যগ্রাফি। যা দেখে পুলিশের অনুমান, অভিযুক্তের বিকৃত মানসিকতার ফলেই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
অন্যদিকে হাসপাতাল সূত্রে খবর, নিয়মিত হাসপাতালে যাতায়াত ছিল সঞ্জয়ের। যুক্ত ছিল পুলিশ ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সঙ্গেও। শুধু তাই নয়, হাসপাতালের দালাল চক্রের সঙ্গেও যোগ ছিল কলকাতা পুলিশের ওই ভলেন্টিয়ারের। এভাবে সে হাসপাতালে ক্রমশ নিজের প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ বন্ধুদের সঙ্গে খাওয়া দাওয়া সেরে সেমিনার হলে বিশ্রাম করতে গিয়েছিলেন মৃত মহিলা চিকিৎসক। ওই মহিলাসহ পাঁচজন একসঙ্গেই দিয়েছিলেন আড্ডা। তারপর শুয়ে পড়েন মহিলা। সকাল হতেই শুরু হয় মহিলার খোঁজ। তখনই নজরে আসে মহিলা চিকিৎসকের অর্ধনগ্ন রক্তাক্ত দেহ। তারপরেই খবর দেওয়া হয় পুলিশে। এদিন মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় সাংবাদিক সম্মেলন করেন কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। নারকীয় এই ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।
পাশাপাশি, অভিযুক্ত পুলিশের সিভিক ভলেন্টিয়ার কিনা প্রশ্ন করাতেই খানিকটা রুষ্ট হন কলকাতার নগরপাল। তিনি বলেন, “অভিযুক্তের পরিচয় যাই হোক না কেন, তিনি একজন অপরাধী।” পাশাপাশি, মৃত চিকিৎসকের পরিবার চাইলে অন্য কোনও সংস্থাকে দিয়েও তদন্ত করাতে পারেন বলে জানান কমিশনার বিনীত গোয়েল।
এদিকে অভিযুক্তের ফাঁসির দাবি জানান স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের এই ঘটনা ন্যক্কারজনক। জুনিয়র চিকিৎসকরা যা দাবি জানিয়েছেন, আমি তাঁদের সঙ্গে একমত।” একই সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “আমার মনে হচ্ছে, আমি আমার পরিবারের কাউকে হারিয়ে ফেলেছি। প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি, চারদিনের মধ্যে দোষীকে ফাস্টট্র্যাক আদালতে তোলার।”