নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তবর্তী সরকার গঠিত হল, সে সরকার বাংলাদেশে শান্তি ফেরাতে কতটা সফল হবে তা এই মুহূর্তে বলা অত্যন্ত কঠিন। বাংলাদেশে যে ধ্বংসযজ্ঞ চলেছে, তা থেকে দেশকে আবার সুপ্রতিষ্ঠা করা এবং দেশের মানুষকে শান্তিতে বসবাস করার ব্যাপরে মহম্মদ ইউনূসের ভূমিকা এখন দেখার জন্য ভারত সহ সারা বিশ্ব তাকিয়ে রয়েছে।
নোবেলজয়ী প্যারিস থেকে ফিরে এসে অন্তবর্তী সরকার গঠন করার আগেই দেশবাসীকে বরাভয় দিয়েছেন যে, তাঁর প্রধান কাজ হল দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা যাতে ভবিষ্যতে না হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। ইউনূস 17-সদস্যের অন্তবর্তী সরকার গঠন করেছেন। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান এই অন্তবর্তী সরকারকে স্বাগত জানিয়ে সবরকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদিও মারমুখী ছাত্র-জনতার হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে বাংলাদেশ সেনা ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এত বড় ধ্বংসাত্মক আন্দোলন আর হয়নি। তবে বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপি এবং তার দোসর জামায়েত দল এই অন্তর্বর্তী সরকারের সবরকম সহযোগিতা পাবে কিনা তা ভবিষ্যৎই বলবে।
বাংলাদেশে এখনও নানা স্থানে যে ঘটনা ঘটছে, তা থামাতে ব্যর্থ প্রশাসন। দেশে ওই ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টির পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ বিশেষ করে হিন্দুরা আতঙ্কিত হয়ে ভারতে তথা পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নেওয়ার জন্য দলে দলে সীমান্তে এসে ভিড় জমাচ্ছে। মহম্মদ ইউনূসের সরকার তাঁদের আবার ফিরিয়ে নেওয়ার কোনও চেষ্টা করে কিনা, তা এখন দেখার। সংখ্যালঘুদের বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর প্রবল আক্রমণ হয়েছে— তাঁদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁরাও তাঁদের নিজস্ব বাড়িঘরে যেতে পারছেন না। তাঁদের বাড়িঘর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের চরম সংকটের দিনে নোবেলজয়ী সরকার গঠন করলেন। যদিও ইউনূসের প্রধান লক্ষ্য সবার আগে দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা। এবং গৃহহীনদের তাঁদের গৃহে ফিরিয়ে এনে তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়া এবং বাড়িঘর নির্মাণ করে দেওয়া। সীমান্তে যাঁরা এসে আশ্রয় নিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার জন্য তাঁদের আবার ফিরিয়ে নেওয়া। তাঁরা এখন না খেয়ে জীবন কাটাচ্ছেন। আন্দোলনকারীরা সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। বাংলাদেশের জনক শেখ মুজিবুর রহমানের মর্মর মূর্তি যেখানে ছিল, সেখানে সেই মূর্তি ভেঙে ফেলেছে। ভাঙার সময় তারা স্লোগান তুলেছে এ দেশ আমাদের, দেশে জমিদারি চলবে না। বুলডোজার দিয়ে মূর্তি উপরে ফেলা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের মনে কত জোর থাকলে এটা করতে পারে, তাই এখন ভাবা হচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে বারতে চলে আসাতে তাঁর জীবন রক্ষা পেয়েছে। নইলে আন্দোলনকারীদের হাতে তাঁর প্রাণনাশের সম্ভাবনা ছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাঁর অবস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের প্রধান ক্ষোভ তিনি তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসে সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছেন। দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো যে ভঙে পড়েছে, সেদিকে তাঁর লক্ষ্য ছিল না। ব্যাপক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষ যে দুর্বিষহ যাতনায় ভুগছে, সেই দ্রব্যমূল্যর দাম কমাতে তিনি কোনও সক্রিয় ব্যবস্থা নেননি। ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক সংকট দেশকে গ্রাস করছিল। তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তিনি দেশের সম্পদ বিদেশে পাঠাচ্ছেন। অর্থনৈতিক সংকট এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিরসনে তিনি কোনও চেষ্টাই করেননি।
হাসিনা দেশে একনায়কতন্ত্রের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলেন। দেশ যে চরম সংকটে পড়েছে, সেদিকে কানও লক্ষ্য ছিল না। সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণের ব্যাপার নিয়ে চাত্ররা যে আন্দোলন শুরু করেন, তা নিয়ন্ত্রণ করতে তিনি ব্যর্থ হন। ছাত্ররা যখন মারমুখী হয়ে সরকারি সম্প্ত্তি ধ্বংস শুরু করল, তখন তিনি সেনা ডাকলেন। তাঁর সরকারি বাসভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়োর আগেই তাঁর আঁচ পেয়ে তিনি পালিয়ে বাঁচেন। গণভবনের জিনিসপত্র, যা অতি মূল্যবান, তা আন্দোলনকারীরা হয় পুড়িয়ে দেয়, নয়তো নিয়ে যায়। একজন আন্দোলনকারী সখেদে বললেন, ‘আমি কিছুই পেলাম না।’