বৃহস্পতিবার উপরাষ্ট্রপতিকে অপমানের সাক্ষী হতে হল রাজ্যসভাকে। বিরোধীদের বিরুদ্ধে অপমানের অভিযোগ তুলে রাজ্যসভা ছাড়লেন চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড়। অপমানে বিগ্ধ্কো হয়ে নিজের বক্তব্য রেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে গেলেন দেশের উপরাষ্ট্রপতি।অপমানের বর্ণনা দিতে গিয়ে ছলকে উঠল তাঁর চোখ, কান্না ধরা গলায় ধনকড় বললেন, ‘আমাকে নয় রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের আসনকে অপমান করছেন বিরোধীরা। বোঝানো হচ্ছে যেন আমি এই আসনের যোগ্য নই।’
প্যারিস অলিম্পি থেকে ভিনেশ বিদায়ের বিতর্ক এসে পৌঁছেছে সংসদে। ভিনেশ নিয়ে সংসদে সরব হয়েছে বিরোধী শিবির। নেপথ্যে গভীর ‘ষড়যন্ত্র’ থাকতে পারে অনুমান করে বিরোধীদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে সংসদ। বৃহস্পতিবারও সেই একই ছবি দেখা যায়। তর্ক-বিতর্ক এমন পর্যায় পৌঁছায় যে বার বার বিরোধীদের শান্ত হওয়ার আবেদন জানান জগদীপ ধনকড়। তাতে অবশ্য কোনও ফল হয়নি। এই পরিস্থিতিতে অভিমানের স্বরে ধনকড় বলেন, “প্রবিত্র রাজ্যসভায় অরাজকতার তৈরি, গণতন্ত্রের উপর কুঠারাঘাত, চেয়ারম্যানের আসনকে ধুলোয় মিশিয়ে, তাঁকে চ্যালেঞ্জ ছোড়া শুধু আসনকে অমর্যাদা নয়, এটা সব সীমাকে লঙ্ঘন করার মতো। এই ভবন দেশের শাসকদলের এবং বিরোধী দলের সভাপতিকে দেখছে রাজ্যসভার দলনেতা হিসেবে। তবে সংসদের অন্দরে ও বাইরে সাম্প্রতিক সময়ে আমি যা দেখছি তা অত্যন্ত অপমানজনক। সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিরোধী দলনেতা কীভাবে আমাকে অপমান করেছেন তা আমি দেখেছি। এটা শুধু আমাকে নয় এই চেয়ারকে অপমান করা হচ্ছে। ওদের বক্তব্য, যে ব্যক্তি এই আসনে বসেছেন তিনি যেন এর যোগ্য নন। সহযোগিতা যতটা প্রয়োজন ছিল তা আমি পাইনি। তবে আমি আমার চেষ্টায় কোনও ত্রুটি রাখিনি।” কথা বলতে বলতে চোখে জল চলে আসে উপরাষ্ট্রপতির।
উল্লেখ্য, এদিন সংসদ অধিবেশন শুরু হতেই রাজ্যসভায় ভিনেশ ফোগাটের বিষয়ে আলোচনার দাবি জানান বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে। তবে চেয়ারম্যান তাঁকে অনুমতি দেননি। এর পর তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন এই বিষয়ে বক্তব্য পেশ করতে গেলে তাঁকে রীতিমতো সতর্কবার্তা দেন তিনি। বলেন, দ্বিতীয়বার তিনি যদি এই ধরনের আচরণ করেন তবে তাঁকে রাজ্যসভা থেকে বের করে দেওয়া হবে। এই ঘটনার পর রীতিমতো হইচই শুরু করেন বিরোধীরা। স্লোগানও দিতে দেখা যায় তাঁকে।
তবে অপমানের এখানেই সমাপ্তি ঘটে নি। জগদীপ ধনকড় যখন তাঁর অপমানের কথা জানাচ্ছিলেন তখন নিজের স্থানে বসে হাসতে দেখা যায় কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশকে। যা চোখে পড়তেই পালটা ধনকড় বলেন, ‘মিস্টার জয়রাম হাসবেন না। আমি আপনাদের চরিত্র জানি। আমার কাছে একটাই বিকল্প। এখানে অনেক বরিষ্ঠ নেতৃত্ব রয়েছেন আমি তাঁদের সম্মান করি। ওনারা আমার চেয়ে রাজনীতি বেশি দেখেছেন। আমি আমার শপথ থেকে পালিয়ে যাচ্ছি না। তবে আজ যে ব্যবহার বিরোধীদের তরফে করা হচ্ছে তাতে কিছু সময়ের জন্য হলেও আমি এই আসনে বসার শক্তি পাচ্ছি না। অত্যন্ত দুঃখী মন নিয়ে আমি আপাতত এই আসন থেকে উঠে যেতে চাইছি।” বলেই চেয়ার ছাড়েন তিনি।