ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে এক কলেজ ছাত্রের মৃত্যু হল মুর্শিদাবাদে। সোহেল রাণা (১৯) নামক ওই কলেজ ছাত্রটি প্রথমে দুটি সরকারি হাসপাতালে এবং একেবারে শেষে জঙ্গিপুরের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি ছিল। মঙ্গলবার রাতে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। মৃতের বাড়ি সামশেরগঞ্জ থানার মধ্য চাচণ্ড গ্রামে। সে অরঙ্গাবাদ ডি এন কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল। স্থানীয় গ্রামপঞ্চায়েত সদস্য বদরুল হকের দাবি, মধ্য চাচণ্ড গ্রামের আরও ৪ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। তাদের চিকিৎসা চলছে। গ্রামে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সমস্ত রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে সামশেরগঞ্জ ব্লক স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে জানানো হয়। একটি মেডিক্যাল টিম গ্রামটিতে পরিদর্শনও করেছে। গ্রামের বিভিন্ন দিকে জমে থাকা জল নিষ্কাষণের চেষ্টা চলছে বলে জানা গিয়েছে। এদিকে ডেঙ্গি কিভাবে রোখা যায়, তা নিয়ে বুধবার আলোচনাসভা হয় চাচ গ্রামপঞ্চায়েত দফতরে। উপস্থিত ছিলেন ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী এবং পঞ্চায়েতের প্রধান ও সদস্যরা। পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরা নিজেদের এলাকায় এলাকায় মশার লার্ভানাশক তেল স্প্রে করেন।
মৃত ছাত্রের পরিবার সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েকদিন ধরেই জ্বরে আক্রান্ত ছিল সোহেল রাণা । রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে। ভর্তি করা হয় সুতি থানার মহিষাইল ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। অবস্থার অবনতি হলে মঙ্গলবার স্থানান্তরিত করা হয় জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে। সেখানে শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়লে, পরিবারের লোকজন তাকে তড়িঘড়ি ভর্তি করে ওমরপুর তালাইমোড় এলাকার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে। সেখানে আই সি ইউতে ভর্তি করে তার চিকিৎসা শুরু হলেও, শেষ রক্ষা হয়নি। এদিন রাতেই তার মৃত্যু হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত ধরা পড়ার পরেই এলাকার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। বুধবার স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মীদের নিয়ে তারা মধ্য চাচণ্ড গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ডেঙ্গুর লার্ভা বিনাশকারী তেল স্প্রে করেন। চাচণ্ড গ্রামে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে ব্লক স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। চলছে ডেঙ্গু নিয়ে প্রচারাভিযান।
মৃত ছাত্রের বাবা মহম্মদ হাবিবুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, “সাত দিন ধরে গায়ে জ্বর ছিল। মহিষাইল ব্লক হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানে চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু অবস্থার কোনও উন্নতি হচ্ছিল না। যে ওষুধ চিকিৎসক লিখে দিয়েছিলেন, সেটি খাওয়ার পরে দু’ঘন্টা জ্বর না থাকলেও, তারপরেই ফের জ্বর চলে আসছিল। চিকিৎসককে বলায়, ৫ আগস্ট উনি নতুন করে চারটি পরীক্ষা করার কথা বলেন। সরকারিভাবে পরীক্ষা দেরি হবে বলায়, আমি সঙ্গে সঙ্গে একটি বেসরকারি প্যাথলজি সেন্টার থেকে পরীক্ষাগুলো করিয়ে নিই। রিপোর্ট দেখা মাত্র আমাকে জানায়, ছেলের ডেঙ্গি হয়েছে। স্যালাইন এবং ইঞ্জেকশন লিখে দেন চিকিৎসক। এভাবে চলার পরে যখন ছেলের অবস্থা একেবারে খারাপ হয়ে পড়ে, তখন আমাকে জানায় রোগীকে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে।
৬ আগস্ট জোর করেই স্থানান্তরিত করে। গাড়ি ভাড়া করে তাড়াতাড়ি জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে ভর্তি করার পরে চিকিৎসক বলেন, কিছু বলতে পারছি না। শেষ মূহূর্তে নিয়ে এসেছেন। যদি ভাগ্য ভালো থাকে তো সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু এখানে ভর্তির পরে ছেলের অবস্থা একেবারে শেষ হয়ে যায়। আমি ছেলের চেহারা দেখেই বুঝে যাই, ছেলেকে আর বাঁচনো যাবে না। তবুও ছেলেকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করি। একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করি। সেখানে তাকে আই সি ইউ’তে ভর্তি করে চিকিৎসাও শুরু হয়। কিন্তু একেবারে শেষ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ায়, তাকে বাঁচানো যায়নি।