• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

বাংলাদেশ ভবনের নিরাপত্তায় রাজ্য পুলিশের সাহায্য চাইল বিশ্বভারতী

বাংলাদেশ ভবনে বাইশে শ্রাবণ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অপরিবর্তিত রেখে এখানে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালনের জন্য মঞ্চ বাঁধার কাজ চলতে থাকে

রবীন্দ্র প্রয়াণ দিবসে বৃক্ষরোপণের স্থান বদল করে জগদীশ কাননে

খায়রুল আনাম: গণ অভ্যুত্থানের পরে সেনা বাহিনী দেশের দায়িত্বভার নেওয়ার পরেও, নৈরাজ্য থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি প্রতিবেশি রাষ্ট্র বাংলাদেশ। বিভিন্ন মাধ্যমে এমনই সংবাদ-ছবি উঠে আসছে। ক্ষমতা ছেড়ে, দেশ ছেড়ে সেনা পাহারায় আকাশ পথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসে আশ্রয় নিয়েছেন ভারতের দিল্লিতে। বাংলাদেশের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের বাসভবন থেকে মূর্তি-সর্বত্র-ই এখনও ভাঙচুর চালানো হচ্ছে। সেইসাথে ভেঙে ফেলা হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূর্তিও। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস বাইশে শ্রাবণের আগে এমন দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত অনেকেই। ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট, বাংলার বাইশে শ্রাবণ মহাপ্রয়াণ ঘটে রবীন্দ্রনাথের। এবার রবীন্দ্রনাথের ৮৩ তম প্রয়াণ বার্ষিকী। তাঁর মহাপ্রয়াণ বার্ষিকীতেই ঘটছে এসব ঘটনা।

এইসব ঘটনার মধ্যেই রবীন্দ্রনাথের কর্মভূমি এবং শান্তিনিকেতনে গড়ে তোলা তাঁর স্বপ্নের বিশ্বভারতীতে এবার তাঁর প্রয়াণদিবস বাইশে শ্রাবণ পালন করা হলো যথাযথ মর্যাদার সাথে এবং চিরাচরিত প্রথা মেনে। এদিন সকালে শান্তিনিকেতনের গৌরপ্রাঙ্গণে বৈতালিক, উপাসনা গূহে ব্রহ্ম উপাসনা এবং বৈদিক মন্ত্রপাঠ করা হয়। এরপর সকলে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে গাইতে উদয়ন বাড়িতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত চেয়ারে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করে শ্রদ্ধা জানান।

এবার তাৎপর্যপূর্ণভাবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে দ্রুততার সাথে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ গোলযোগের কারণে শান্তিনিকেতনের বাংলাদেশ ভবনের সমস্ত কর্মসূচি ইতিমধ্যেই আপাততঃ স্থগিত রাখার কথা জানিয়ে দেয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এখানে দুই দেশের শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং ভারতের চলচ্চিত্র পরিচালক শ্যাম বেনেগাল নির্মিত ‘মুজিব, দ্য মেকিং অফ নেশন’ নামক বায়োপিক প্রদর্শনের যে কর্মসূচি ছিলো তাও আপাততঃ স্থগিত রাখার কথা জানানো হয়। বলা হয় যে, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ভারত সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয় বা সে দেশের বিদেশনীতিই বা কী হয়, সে দিকেই তাকিয়ে থাকবে বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ।

তবে, বাংলাদেশ ভবনে বাইশে শ্রাবণ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অপরিবর্তিত রেখে এখানে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালনের জন্য মঞ্চ বাঁধার কাজ চলতে থাকে। কিন্তু তারপরই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন যে পরিস্থিতি তাতে বিচলিতবোধ করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এই মুহূর্তে বিশ্বভারতীতে একশোজনের বেশি বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রী এবং গবেষক রয়েছেন। এখানকার আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ ভবনটি বিশ্বভারতীর জায়গায় হলেও, এটি নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের অর্থানুকূল্যে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে। এই ভবনের পরিচালন ব্যায়ও বহন করে বাংলাদেশ সরকার। ২০১৮ সালের ২৫ মে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিশ্বভারতীর আচার্য তথা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে এখানকার বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করা হয়েছিল।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি দিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জরুরি একটি বৈঠকে বসে এবং তারপরই ‘অনিবার্য কারণ’-এ বাংলাদেশ ভবনে বুধবার বাইশে শ্রাবণ, ৭ আগস্ট বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি হচ্ছে না বলে জানিয়ে দেয়। পরিবর্তে এই কর্মসূচি শান্তিনিকেতনের উপাসনা গৃহের সামনে পুরনো মেলা মাঠের জগদীশ কাননে হবে বলে জানানো হয় এবং সেখানেই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি হয়।

মনে করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূর্তি সেখানকার বিদ্রোহীরা ভেঙে দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ শান্তিনিকেতনের বাংলাদেশ ভবনে আর কোনও ঝুঁকি নিয়ে অনুষ্ঠান করতে চাননি। এমন কী, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ তাঁদের নিরাপত্তারক্ষী থাকা সত্বেও বাংলাদেশ ভবনের নিরাপত্তার জন্য রাজ্য প্রশাসনের কাছে আবেদন রাখার পরই, শান্তিনিকেতনের বাংলাদেশ ভবন এলাকায় রাজ্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে।

এদিকে অনেকেই মনে করছেন যে, বিগত কয়েক মাসের মধ্যে কতজন বাংলাদেশি পাশপোর্ট, ভিসা নিয়ে শান্তিনিকেতনে এসেছেন এবং এখানকার পড়ুয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কী না, তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বভারতীতে বিভিন্ন ঘটনা এবং আন্দোলনে বাংলাদেশি পড়ুয়াদের একাংশকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে দেখা গিয়েছে, যা শিক্ষার্থীরা করতে পারেন না। এই আবহের মধ্যে এদিন বোলপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে বোলপুর ডাকবাংলো মাঠে ‘হাজার কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথ’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ দিবসকে স্মরণ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবসে আমাদের প্রাণের ঠাকুরকে জানাই আমার অন্তরের শ্রদ্ধা ও প্রণাম। বছরের প্রতিটা দিনে, প্রতিটি মুহূর্তে তিনি আমাদের ঘিরে রয়েছেন। উনার আদর্শই আমাদের পাথেয়। তিনিই আমাদের দিকনির্দেশক”।