লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে আধার কার্ড নিয়ে হইচই উঠেছিল বাংলার বুকে। এদিন আধার কার্ড নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করল কেন্দ্রীয় সরকার। এর পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ গুরত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ রাখল। ‘আধার কার্ড নাগরিকত্বের কোনও প্রামান্য নথি নয়। এটি এক ধরনের পরিচয়পত্র হলেও আবাসিক বা নাগরিকত্বের নথি নয় আধার কার্ড।’ আধার বাতিল নিয়ে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে পর্যবেক্ষণে এমনটাই জানিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম।
প্রসঙ্গত লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যে হঠাৎ করে কিছু নাগরিকের আধার কার্ড বাতিল হয়ে যাওয়ার ঘটনা সামনে আসে। অনেকেই নাগরিকত্ব নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগেন। এই বিষয় নিয়ে মামলা গড়ায় কলকাতা হাইকোর্টে। আধার আইনের ২৮এ ধারা বাতিলের দাবিতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় এনআরসি বিরোধী জয়েন্ট ফোরাম। সংশ্লিষ্ট মামলার শুনানিতে মামলাকারীদের আইনজীবী সওয়াল করে জানান,’আধার আইনের যে ধারা অর্থাৎ ২৮এ-কে কার্যকর করে আধার বাতিল করা হয়েছে, তার সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আইনের ওই ধারায় বিদেশি নাগরিকদের কথা বলা হয়েছে। ২০১৬ সালের আধার আইনে এই ধারা ছিল না। ২০২৩ সালে তা সংযুক্ত করা হয়েছে। আর এই ধারায় মাধ্যমে নাগরিকত্ব যাচাইয়ে আধার কর্তৃপক্ষকে বিবিধ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যা সংবিধান বিরোধী’। এদিন এই মামলাটির শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতি পর্যবেক্ষণে জানান, ‘বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণের জন্য পরিচয়পত্র হিসাবে আধার গ্রহণযোগ্য হতে পারে। কিন্তু আধার কার্ডের সঙ্গে নাগরিকত্বের কোনও সম্পর্ক নেই’।
তবে এই মামলায় কেন্দ্র আগেই হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে, ‘দেশের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই আধার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। যে সমস্ত ব্যক্তির কাছ থেকে এদেশের নাগরিক হওয়ার মতো পর্যাপ্ত নথি মেলেনি, তাঁদের আধার বাতিল করা হচ্ছে। এদেশে বেআইনিভাবে থেকে যাওয়া বিদেশি নাগরিকদের জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে’। আধার কার্ড ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। এই নথি দেখিয়ে কেউ নিজেকে ভারতীয় নাগরিক বলে দাবি করতে পারেন না। আধার কার্ড শুধুমাত্র সরকারি পরিষেবা প্রদান ব্যবস্থাকে সরলীকরণ করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এক পর্যবেক্ষণে একথা জানাল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ।
সঙ্গে আদালত জানিয়েছে, ‘যেভাবে আধার কর্তৃপক্ষকে কোনও ব্যক্তির নাগরিকত্ব যাচাইয়ের অধিকার দেওয়া হয়েছে, তার সাংবিধানিক গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে’। লোকসভা নির্বাচনের আগে হঠাৎ রাজ্যের বেশ কিছু বাসিন্দার আধার কার্ড বাতিল হয়ে যায়। আধার কর্তৃপক্ষের সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দ্বারস্থ হয় এনআরসি বিরোধী জয়েন্ট ফোরাম। সেই জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, ‘আধার কার্ড ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়’। এরফলে এই কার্ড না থাকলে বা বাতিল হয়ে গেলে কারও নাগরিকত্ব চলে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। শুধুমাত্র সরকারি পরিষেবা প্রদানের প্রক্রিয়া সরল করতে এই কার্ড ব্যবহার করা যেতে পারে বলে জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
এই মামলায় কেন্দ্রের তরফে হলফনামা দিয়ে জানানো হয়েছিল,’দেশের নিরাপত্তার কথা ভেবে যে সমস্ত ব্যক্তির কাছে এদেশের নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য পর্যাপ্ত নথি নেই, তাদের আধার বাতিল করা হয়েছিল।’ এদের ভারতীয় নাগরিকত্ব না থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে এদেশে বসবাস করছিলেন বলে জানিয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। যেভাবে আধার কার্ড বাতিল করা হয়েছে, তার সাংবিধানিক বৈধতা রয়েছে কি না? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে হাইকোর্ট।