হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর সামরিক শক্তির হাতে ক্ষমতা থাকাকালীনই মুক্তি পেলেন দীর্ঘদিন গৃহবন্দী থাকা খালেদা জিয়া। বন্দি দশা থেকে বাইরে এসেই দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন বিএনপি নেত্রী। বুধবার তাঁর সেই আবেগময়ী লিখিত ভাষণে আন্দোলনকারী ছাত্র ও যুবদের বীর সন্তান বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, কোটা সংস্কারের আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী পড়ুয়ারা শেষ পর্যন্ত হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়ে ‘অসম্ভবকে সম্ভব করেছে’।
সোমবার হাসিনার পদত্যাগের পর বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেন দেশের রাষ্ট্রপতি। এরপর সোমবার রাতে রাষ্ট্রপতি মহম্মদ শাহাবুদ্দিন ঘোষণা করেন, খালেদার সাজা মকুব করে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হবে। মঙ্গলবার সরকারি নির্দেশিকা জারি করে তা কার্যকর করা হয়। মঙ্গলেই তাঁর পাসপোর্ট পুনর্নবীকরণ করা হয়। দুর্নীতির সাজা থেকে মুক্তির পর বুধবার তাঁর ভাষণে নতুন দেশ গড়ার আহবান জানালেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।
এদিন খালেদা নয়াপল্টনে বিএনপি-র সদর দফতরের সামনে ভিড়ে ঠাসা জনসভায় বলেন, ‘আর ধ্বংস, প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা নয়, ভালবাসা ও শান্তির সমাজ গড়ে তুলতে হবে।’ বিএনপি প্রধান আরও বলেন, ‘আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাদের বীর সন্তানদের, যাঁরা মরণপণ সংগ্রাম করে এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। শত শত শহিদকে জানাই শ্রদ্ধা। এ বিজয় আমাদের সামনে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্র এবং তরুণরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তরুণদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। আমরা ধ্বংস চাই না, শান্তি চাই। দীর্ঘ আন্দোলন, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা ফ্যাসিবাদী ও অবৈধ সরকারের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি। দীর্ঘ দিনের নজিরবিহীন দুর্নীতি এবং গণতন্ত্রের ধ্বংসস্তূপ থেকে আমাদের নির্মাণ করতে হবে এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।’
উল্লেখ্য, দুর্নীতির দু’টি মামলায় খালেদার ১৭ বছরের সাজা হয়। এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তাঁকে কারাবন্দি করা হয়। সেই সাজা অনুযায়ী, প্রায় দুই বছরের বেশি সময় তিনি জেলে ছিলেন। কিন্তু পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাসিনা সরকার এক অন্তর্বর্তী আদেশ দেয়। সেই আদেশে খালেদার সাজা ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মাসে স্থগিত করে দেওয়া হয়। পরিবর্তে তাঁকে শর্তসাপেক্ষে গৃহবন্দি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।