প্যারিস: রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে রোমানিয়াকে হারিয়ে ভারতের টেবলটেনিস মহিলা দল শেষ আটে পৌঁছে গেল। শুরুতে ভারতের খেলোয়াড়রা দারুণভাবে বিপক্ষ রোমানিয়াকে চাপের মধ্যে রেখে দিয়েছিল। কিন্তু তারপরে ছন্দপতন ঘটে যায় ভারতের। তবুও কোনওভাবেই মনিকা বাত্রারা পিছিয়ে থাকেননি আক্রমণ থেকে। সাধারণত দেখা যায়, প্রথম দিকে যেভাবে ভারতের প্রতিনিধিরা যেভাবে খেলা শুরু করে থাকেন, তা ধরে রাখতে পারেন না শেষ পর্যন্ত। কিন্তু এবারে দলগত টেবলটেনিস খেলায় তার ব্যতিক্রম দেখতে পাওয়া গেল। প্রথম থেকেই আত্মবিশ্বাসী হয়ে ভারতের টেবলটেনিস খেলোয়াড়রা প্রতিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে নামে। একটা সময় ভারতীয় দল ২-০ ম্যাচে এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তারপরে দেখা গেল রোমানিয়া দুটো ম্যাচ জিতে খেলায় সমতা ফিরিয়ে আনে। শেষ পর্যন্ত রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে মনিকা বাত্রা সবাইকে অবাক করে দিয়ে ম্যাচ ছিনিয়ে নেন। আর সেই সুবাদেই ভারতের জয় এসে যায় রোমানিয়ার বিরুদ্ধে ৩-২ ম্যাচের ব্যবধানে। এই জয়ের ফলে ভারতীয় টেবলটেনিস খেলোয়াড়রা শেষ আটে খেলার ছাড়পত্র পেয়ে যায়। এই প্রথম টেবলটেনিস খেলোয়াড়রা অলিম্পিক্স গেমসে শেষ আটে খেলার কৃতিত্ব দেখালেন।
প্রথম ম্যাচটিই ছিল ডাবলসের। ভারতের হয়ে এই ম্যাচে অংশ নেন শ্রীজা আকুলা ও অর্চনা কামাথ। রোমানিয়ার হয়ে লড়াইয়ে নামেন আদিনা ডায়াকোনু ও এলিজাবেতা সামরা। ভারতের জুটি প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক খেলা খেলতে থাকে। তারই ফসল হিসেবে ভারত প্রথম গেমে ১১-৯ পয়েন্টে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দেয়। দ্বিতীয় গেমে ভারত আবার জয়লাভ করে ১১-7 পয়েন্টে রোমানিয়াকে হারিয়ে প্রথম ম্যাচ নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়।
দ্বিতীয় ম্যাচ ছিল সিঙ্গলস। সিঙ্গলসে অংশ নেন ভারতের মনিকা বাত্রা। আর প্রতিপক্ষ দলে মনিকার বিরুদ্ধে খেলতে নামেন বার্নদেত্তে সকস। মনিকার আগ্রাসী ভূমিকার কাছে রোমানিয়ার বার্নাদেত্তে দাঁড়াতেই পারেননি। পরপর তিনটি গেমেই মনিকার আধিপত্য দেখতে পাওয়া যায়। সরাসরি হারতে হয় মনিকার কাছে ১১-৫, ১১-7 ও ১১-7 পয়েন্টে। ভারত এই ম্যাচে জয়ের ফলে ২-০-তে এগিয়ে যায়। অর্থাৎ পরবর্তী তিনটি ম্যাচের মধ্যে একটি ম্যাচ জিততে পারলেই আগেভাগেই শেষ আটে পৌঁছে যেত ভারতীয় টেবলটেনিস দল। কিন্তু সেই ভাবনাটা থমকে যায়। রোমানিয়ার প্রতিনিধির কাছে ভারতের শ্রীজা আকুলা হেরে যান। তাঁর প্রতিপক্ষ ছিলেন এলিজাবেতা সামরা. সামারের সঙ্গে লড়াই করেও জয়ের পথে দাঁড়াতে পারেননি শ্রীজা আকুলা। তিনটি গেমেই তাকে হারতে হয় কিন্তু দুটো গেম ছিনিয়ে নিয়েছেন। প্রথম গেমটি সামরা ১১-৮ পয়েন্টে জয় পেলেও, দ্বিতীয় গেমে ভারতের শ্রীজার কাছে 7–১১ পয়েন্টে হেরে যান। এবারে ঘুরে দাঁড়িয়ে তৃতীয় গেমে ১১-7 পয়েন্টে সামরা ম্যাচ জিতে নেন। তার পরের গেমসে আবার জয় তুলে নেন শ্রীজা। শ্রীজা ১১-৬ পয়েন্টে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নেন। তবে পঞ্চম গেমে আবার হারতে হয় শ্রীজাকে। হেরে যান ৮-১১ পয়েন্টে। সামরার জয়ের ফলে ভারতের সঙ্গে ব্যবধান হয় ২-১। তৃতীয় সিঙ্গলসে ভারতের অর্চনা কামাথের সঙ্গে মুখোমুখি হন বার্নাদেত্তে। প্রথম গেমটি বার্নদেত্তে জিতে যান ১১-৫ পয়েন্টে। অর্চনা ঘুরে দাঁড়িয়ে ১১-৮ পয়েন্টে বার্নাদেত্তের বিরুদ্ধে জয় পান। অবশ্য পরবর্তীতে পরপর দু’টি গেম ১১-7 ও ১১-৯ পয়েন্টে খেলায় সমতা ফিরিয়ে আনেন রোমানিয়ার বার্নাদেত্তে।
স্বাভাবিকভাবে ২-২ হওয়ার ফলে ভারত ও রোমানিয়ার কাছে পঞ্চম গেমটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই এই ম্যাচ যে জিতবে তারই ভাগ্য খুলে যাবে শেষ আটে খেলার জন্য। এই অবস্থায় দুই দলের কাছেই চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে মুখোমুখি দুই দলের খেলোয়াড় আত্মবিশ্বাসী হয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। নির্ধারণকারী ম্যাচে ভারতের মনিকা বাত্রা মুখোমুখি হন রোমানিয়ার আদিনার বিরুদ্ধে। মনিকা প্রথম থেকেই আগ্রাসী ভূমকা নিয়ে খেলতে থাকেন। প্রথম গেমে মনিকা জয় পান ১১-৫ পয়েন্টে। আর দ্বিতীয় গেমে ১১-৯ পয়েন্টে ম্যাচ তুলে নিয়ে এগিয়ে থাকেন। আর তৃতীয় গেমে ১১-৯ পয়েন্টে রোমানিয়ার আদিনাকে পিছনে ফেলে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যান। মনিকার দুরন্ত লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত রোমানিয়াকে ৩-২ গেমে হারিয়ে শেষ আটে খেলার ছাড়পত্র আদায় করে নেন। শেষ আটে ভারতের সামনে কোন দল খেলবে তা নির্ভর করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির জয়ী দলের সঙ্গে।