ঢাকা, ৫ আগস্ট: সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পরেই আত্মরক্ষার কারণে বোন রেহেনাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। দেশে জারি হয়েছে সেনা শাসন। একাধিক সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, তিনি বিশেষ বিমানে আগরতলা হয়ে নিউ দিল্লি উড়ে গিয়েছেন। সেখান থেকে হাসিনা ও তাঁর বোন রেহেনাকে ‘সেফ হাউস’-এ রেখেছে নয়াদিল্লি। শোনা যাচ্ছে, তাঁকে হিন্ডেন বিমান বন্দরে অবতরণ করানো হয়েছে। যদিও দিল্লির পক্ষ থেকে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত করা হয়নি।
তবে এতসবের পরেও ক্ষান্ত নয় আন্দোলনকারী ছাত্ররা। তারা দাবি করেছে, এটা দ্বিতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন। হাসিনা পালিয়ে বাঁচতে পারবেন না। এদেশেই তাঁর বিচার হবে। ১৯৭১ সালে যেভাবে স্বাধীন বাংলা গড়া হয়েছিল, সেভাবে আজও আমরা দ্বিতীয়বার স্বাধীন হলাম। সেজন্য ৫ আগস্ট সোমবারকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন হিসেবে পালন করছে এই আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারী ছাত্রদের নেতা মহম্মদ নাহিদ ইসলাম এবং আসিফ মাহমুদ প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। তাঁরা সেই বিবৃতিতে দাবি করেছেন, বৈপ্লবিক ছাত্র ও নাগরিকদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে হবে। এছাড়া অন্য কোনও পদক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না। ফ্যাসিস্ত ও খুনিদের আইনের চৌকাঠে দাঁড় করতে হবে। বাংলার মাটিতেই এদের বিচার করতে হবে। কাউকে পালিয়ে বাঁচতে দেওয়া হবে না। শুধু তাই নয়, ছাত্র নেতারা দাবি করেছেন, এদিন সন্ধ্যার মধ্যে যেসব নির্দোষ মানুষ, রাজনৈতিক বন্দি ও যাঁদের জোর করে নজরবন্দি রাখা হয়েছে, তাঁদের মুক্ত করা হবে। শুধু হাসিনা কেন, ফ্যাসিস্ত কোনও শক্তির ঠাঁই হবে না বাংলাদেশে। এ এক নতুন বাংলাদেশ। এখানে নতুন রাজনৈতিক শাসন কায়েম হবে।
দেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এই দলের প্রাক্তন সাংসদ রুমিন ফারহানা সোমবার বলেন, আজ জনগণের জয় হয়েছে। ১৯৭১ সালে যেভাবে স্বাধীন বাংলা গড়া হয়েছিল, আজ আমরা সেভাবে দ্বিতীয়বার স্বাধীন হলাম। দেশের মানুষ চায় স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন হোক। অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত নির্বাচন ঘোষণা করুক। যাতে সব রাজনৈতিক দল নির্ভয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছে যে, তারাই সর্বশক্তিমান। এদিকে ঢাকা ট্রিবিউনের এক্সিকিউটিভ এডিটর রিয়াজ আহমেদ দাবি করেছেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তী সরকারকে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে।
অন্যদিকে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মুবাশর হাসানও এই আন্দোলনকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাঁর দাবি, গোটা দেশে জনতা যেভাবে উল্লাসে মেতে উঠেছে, তা দেখে মনে হচ্ছে, স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ আবার ফিরে এসেছে। তিনি বলেন, হাসিনা দেশে একটি আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছিলেন। আচমকা লোকজন উধাও হয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা কোথায় আছেন, কী অবস্থায় আছেন, তা পরিবারের লোকজন জানতে পারছেন না। অথচ নির্বিচারে মানুষ খুন হচ্ছে। এমনকি বিরোধীদের দমন করার জন্য তাঁদের ওপর হিংসাত্মক আক্রমণ করা হচ্ছিল বলে দাবি করেন মুবাশরের। তিনি বলেন, অন্যায়ের বিচারের কোনও জায়গা ছিল না। মানুষ কোথায় যাবেন, কার কাছে ন্যায্য চাইবেন তা বুঝতে পারছিলেন না। এর বিরুদ্ধে জনতা ফুঁসছিল। আর তার প্রতিবাদ স্বরূপ এই জনজাগরণ ঘটেছে বলে ব্যাখ্যা করেন মুবাশর হাসান।