• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

১৯-এর পর ফের ২৪-এ সংখ্যালঘু মহিলাদের ভোট পেতে মরিয়া মোদি সরকারের ওয়াকফ আইন সংশোধন

দিল্লি, ৫ আগস্ট — তিন তালাক বেআইনি ঘোষণা করে মোদি সরকার ইতিহাসের পাতায় নাম লেখায়। উনিশ সালে লোকসভা ভোটে জেতার পর মুসলিমদের বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য তিন তালাক বেআইনি ঘোষণা করেছিল নরেন্দ্র মোদি সরকার। এবার ২০২৪ এর লোকসভা জেতার পরও যেন সেরকম আরেকটি নিদর্শনমূলক আইন সংস্কারের পথে হাঁটতে চলেছে ৩.০ মোদি সরকার। মুসলিমদের ওয়াকফ আইন সংশোধন

New Delhi, Dec 11 (ANI): Prime Minister Narendra Modi addresses at the launch of Viksit Bharat @ 2047: Voice of Youth, via video conferencing, in New Delhi on Monday. (ANI Photo)

দিল্লি, ৫ আগস্ট — তিন তালাক বেআইনি ঘোষণা করে মোদি সরকার ইতিহাসের পাতায় নাম লেখায়। উনিশ সালে লোকসভা ভোটে জেতার পর মুসলিমদের বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য তিন তালাক বেআইনি ঘোষণা করেছিল নরেন্দ্র মোদি সরকার। এবার ২০২৪ এর লোকসভা জেতার পরও যেন সেরকম আরেকটি নিদর্শনমূলক আইন সংস্কারের পথে হাঁটতে চলেছে ৩.০ মোদি সরকার। মুসলিমদের ওয়াকফ আইন সংশোধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদি সরকার। ওয়াকফ আইনে সংশোধন প্রস্তাব মোদি মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। তারপর সরকারের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, কেন্দ্র ও রাজ্য স্তরে মুসলিমদের ওয়াকফ বোর্ডে দু’জন করে মহিলা সদস্য রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে সংশোধন বিলে।

উনিশ সালে তিন তালাক বেআইনি ঘোষণার পর বিজেপি আশা করেছিল সংখ্যালঘু মহিলাদের সমর্থন তারা পাবে। ২০২২ সালে উত্তরপ্রদেশের ভোটে এর সুফল পাওয়া গেছিল বলে বিজেপির কোনও কোনও নেতা দাবি করেন। এবারও ওয়াকফ বোর্ডে মুসলিম মহিলাদের সদস্য করার প্রয়াস সেই প্রেক্ষাপটেই দেখা যেতে পারে। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, ওয়াকফ আইনে সংশোধন করে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছে বিজেপি। এক, ওয়াকফ আইনকে ভোঁতা করে দিয়ে একদিকে মেরুকরণের চেষ্টা করছে। আবার মুসলিম মহিলাদের ওয়াকফ বোর্ডে সদস্য করে তাঁদের মন জয়ের চেষ্টা করছে।

রবিবার মোদি সরকারের শীর্ষ সূত্রে আরও বলা হয়েছে, “মুসলিম মহিলা ও শিশুদের দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশি। কোনও মহিলার বিবাহ বিচ্ছেদ হলে তিনি ও তাঁর সন্তানরা কোনও অধিকারই পান না। এই লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে চাইছে সরকার। নয়া সংশোধন বিল অনুযায়ী, প্রতিটি রাজ্য বোর্ডে দুজন মুসলিম মহিলা সদস্য থাকবেন। আর সেন্ট্রাল কাউন্সিলে থাকবেন দুজন মহিলা সদস্য”।

ওয়াকফ হল আরবি শব্দ। এর মানে কোনও সম্পত্তি বা সম্পদকে ব্যক্তিগত মালিকানা থেকে মুক্ত করা। ১৯১৩ সালে ওয়াকফ আইন অনুযায়ী ওয়াকফের অর্থ হল, কোনও মুসলমান তাঁর সম্পত্তির কোনও অংশ যদি এমন কাজের জন্য স্থায়ী ভাবে দান করে যা মুসলিম মতে ধর্মীয় তথা পবিত্র বা সেবামূলক, তাহলে সেই দান করা সম্পত্তিকে ওয়াকফ বলা হবে।

ওয়াকফের মৌলিক বিষয় হল, এটি একটা চিরস্থায়ী ব্যবস্থা। অর্থাৎ ওয়াকফ হিসাবে কোনও সম্পত্তি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য দান করা যায় না। চিরকালের জন্য দান করতে হয়।  দ্বিতীয়, এটি সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয় এবং একে কোনও অবস্থাতেই মুলতবি করা যায় না। তৃতীয়ত, একবার দান করলে তা প্রত্যাহরযোগ্য নয়। এবং চতুর্থ, ওয়াকফের সম্পত্তি কখনওই বাজেয়াপ্ত করতে পারে না সরকার।

ওয়াকফ আবার তিন রকমের হয়। ধর্মীয় উদ্দেশে বা দাতব্যর জন্য দান করা সম্পত্তিকে বলা হয় ওয়াকফ- ফি – লিল্লাহ। নিজের পরিবার বা উত্তরাধিকারীদের ভরণপোষণের ওয়াকফকে বলা হয় ওয়াকফ আলাল আওলাদ। আর তৃতীয় প্রকার ওয়াকফ হল মিশ্র ওয়াকফ। এতে ধর্মীয় কাজে ও উত্তরাধিকারীদের উপকারের জন্য একই সঙ্গে দান করা হয়।

দেশে বর্তমান ওয়াকফ আইন সংশোধনের চেষ্টার বিরোধিতা করেছে মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড। বোর্ডের সদস্য মওলানা খালিদ রশিদ বলেছেন, বর্তমানে যে ওয়াকফ আইন রয়েছে তা যথেষ্ট। সরকার আইন সংশোধন করতে চাইলে সবপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসা উচিত।

তবে সরকারের শীর্ষ নেতারা বলছেন, একশ্রেণির ক্ষমতাবান মুসলিম ওয়াকফ বোর্ডের সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন। তাঁরাই আইন সংশোধনের বিরোধিতা করছেন। সেই সঙ্গে কেউ কেউ মিথ্যা প্রচার করছে যে সরকার মুসলিমদের জমি দখল করে নিতে চাইছে। কিন্তু সরকার সংখ্যালঘুদের বুঝিয়েই সংশোধন বিল পাশ করানোর ব্যাপারে বদ্ধপরিকর।