ডেরেকের প্রমাণে সিলমোহর অভিষেকের অভিযোগে
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: একশো দিনের কাজের প্রকল্প এবং আবাস যোজনা বাবদ রাজ্যে টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকার, তৃণমূলের তরফে এই অভিযোগের বয়স তিন বছরের বেশি। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই বারংবার এই অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। এবার প্রমাণ দিয়ে সেই দাবিকেই আরও জোরাল করল বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। এক কথায়, তৃণমূলের অভিযোগ স্বীকৃতি পেল দীর্ঘ লড়াইয়ের পর। কেন্দ্রের নথি প্রকাশ করে অভিষেকের দীর্ঘদিনের অভিযোগকে ‘বাস্তব’ প্রমাণ করে দিলেন ডেরেক। রবিবার তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা দলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন নিজ এক্স হ্যান্ডেলে মনরেগার একটি তথ্য পরিসংখ্যান সম্বলিত কেন্দ্রীয় নথির ছবি পোস্ট করেছেন। তার সাথে ডেরেক লিখেছেন, “অবশেষে মোদী সরকার সংসদের অভ্যন্তরে স্বীকার করে নিল যে মনরেগা তহবিলে বাংলার জন্য বরাদ্দ শূন্য।”
তবে ঠিক কি নথি প্রকাশ্যে এনেছেন ডেরেক? মনরেগার ওই নথিতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে বাংলায় মনরেগার জন্য কেন্দ্রের বরাদ্দ ছিল ৩৬৫৬৮৩ কোটি টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে বাংলাকে দেওয়া হয়েছে মাত্র ১৬১৮ কোটি টাকা। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে এসে সেই ছবিটা আগাগোড়া বদলে গিয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে কেন্দ্রের তরফে বাংলার জন্য বরাদ্দ শূন্য। বাংলা ছাড়া অপর কোনো রাজ্যের ক্ষেত্রেই (দমন দিউ ব্যতিত) কেন্দ্রের বরাদ্দ একেবারে শূণ্য হয়নি। তাহলে বাংলার ক্ষেত্রেই কেন এই বৈষম্য? এই প্রশ্ন পূর্বেই তুলেছিল দল, এবার তারই প্রমাণ দিয়ে নিজ অবস্থান ও বক্তব্য স্পষ্ট করলো তৃণমূল।
ডেরেক আরও লেখেন, “২০২১ সালের নির্বাচনে হারের পর থেকে বিজেপি সরকার বাংলাকে কী দিয়েছে, তা নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেস শ্বেতপত্র দাবি করেছে। অবশেষে মোদী সরকার স্বীকার করল যে মনরেগা ফান্ডে বাংলার জন্য বরাদ্দ শূন্য। রাজ্যসভায় জবাব থেকে এর প্রমাণ মিলল।” ডেরেকের দাবি, কেন্দ্র যে বাংলাকে বঞ্চনা করছে, এই পরিসংখ্যান তারই স্বীকারোক্তি। লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বাংলার প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তুলে বিজেপি নেতৃত্বদের ‘ওয়ান টু ওয়ান’ তর্ক যুদ্ধে বসে শ্বেতপত্র প্রকাশ করার ‘ওপেন চ্যালেঞ্জ’ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন অভিষেক। তবে সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে কোনও শ্বেতপত্রও প্রকাশ করেনি বিজেপি। তবে সরকারি পরিসংখ্যান প্রকাশ্যে আসার পর অভিষেকের অভিযোগেই সিলমোহর পড়ল বলে দাবি ডেরেক ও’ব্রায়েনের।
সম্প্রতি, বাংলার প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রসঙ্গ তুলে ফের সংসদে শ্বেতপত্র প্রকাশের জোরালো দাবি জানিয়ে ছিলেন অভিষেক। এর প্রতিবাদে অভিষেকের নেতৃত্বে তৃণমূল সাংসদগণ সংসদ থেকে ওয়াক আউটও করেছিলেন। অভিষেক সরাসরি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেছিলেন, “তিনি শ্বেতপত্র প্রকাশে ব্যর্থ হয়েছেন, কারণ বাস্তবেই বাংলায় কেন্দ্রের বরাদ্দ শূণ্য। যদি কেন্দ্রের তরফ থেকে বাংলায় এক পয়সাও দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে প্রমাণ করুন।” অভিষেকের প্রতিবাদের পাশাপাশি একত্রে লিখিত প্রশ্ন জমা দিয়েছিলেন দলের সাংসদ সৌগত রায়, খলিলুর রহমান, মালা রায় এবং দেব। এরপরই কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী পাল্টা লিখিত জবাব দিয়ে জানিয়ে ছিলেন, অন্য কোনো রাজ্য নয়, শুধু পশ্চিমবঙ্গের টাকাই আটকে রাখা হয়েছে কেন্দ্রের তরফ থেকে। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক পূর্বেই স্পষ্ট করেছিল, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে বাংলায় মনরেগার জন্য এক পয়সাও বরাদ্দ করেনি কেন্দ্র। এবার ডেরেক কর্তৃক প্রকাশিত নথিতেও তাই দেখা গেলো। অবশেষে তৃণমূলের চাপে পিছু হাঁটতে বাধ্য হলো কেন্দ্র সরকার, মনরেগার বরাদ্দ সংক্রান্ত নথি প্রকাশ্যে আসতেই এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।