• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

ঝাড়খণ্ডে লাইনচ্যুত হাওড়া-মুম্বই মেল্;এর ১৮ টি বগি, মৃত ২   

ঝাড়খন্ড, ৩০ জুলাই –  ফের রেল দুর্ঘটনা। মঙ্গলবার ভোর পৌনে চারটে নাগাদ ঝাড়খণ্ডের চক্রধরপুরের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হাওড়া থেকে মুম্বইগামী হাওড়া-সিএসএমটি এক্সপ্রেস। জানা গিয়েছে  , দুর্ঘটনার জেরে বেলাইন হয়ে যায়  ট্রেনের অন্তত ১৮টি কামরা। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, দুর্ঘটনায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে , আহত  কমপক্ষে ২০ জন যাত্রী। আহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে

ঝাড়খন্ড, ৩০ জুলাই –  ফের রেল দুর্ঘটনা। মঙ্গলবার ভোর পৌনে চারটে নাগাদ ঝাড়খণ্ডের চক্রধরপুরের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হাওড়া থেকে মুম্বইগামী হাওড়া-সিএসএমটি এক্সপ্রেস। জানা গিয়েছে  , দুর্ঘটনার জেরে বেলাইন হয়ে যায়  ট্রেনের অন্তত ১৮টি কামরা। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, দুর্ঘটনায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে , আহত  কমপক্ষে ২০ জন যাত্রী। আহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রেলের তরফে তড়িঘড়ি দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয় । যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয় উদ্ধারকাজ।

প্রসঙ্গত, গত বছর ওড়িশার বাহানাগায় করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার ছবি এখনও ম্লান হয়নি। সেখানে একটি মালগাড়ির উপর উঠে গিয়েছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কামরা।  দুর্ঘটনায় ২৯০ জনের মৃত্যুর পরও টনক নড়েনি রেল কর্তৃপক্ষের। জুন এবং জুলাই মাসে তিনটি বড় দুর্ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যু এবং ১০০ জনেরও বেশি জখম হয়েছেন। গত ১৭ জুন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুটি কোচ লাইনচ্যুত হয়। তাতে ১১ জনের মৃত্যু ও ৬০-এর বেশি যাত্রী আহত হয়েছিলেন।অতি সম্প্রতি ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস উত্তরপ্রদেশে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। ১৮ জুলাই উত্তরপ্রদেশের গোন্ডা স্টেশনের কাছে ট্রেনের আটটি কোচ ছিটকে পড়ে। সেই ঘটনায় চারজনের মৃত্যু ও ৩৫ জনের বেশি জখম হয়েছিলেন। এ বার ফের রেল দুর্ঘটনা ঝাড়খণ্ডের চক্রধরপুরের কাছে।

যে ১৮টি কামরা বেলাইন হয়, তার মধ্যে ১৬টিই যাত্রিদের কামরা। বাকি ২ টি কামরার মধ্যে একটি ট্রেনের বিদ্যুৎ সংযোগের কামরা এবং অন্যটি প্যান্ট্রি কার। দুর্ঘটনাস্থল থেকে আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য চক্রধরপুরে পাঠানো হয় । সিংভূম পশ্চিমের ডিসি সংবাদ সংস্থাকে জানান  , ১৮টি কামরা লাইনচ্যুত হয়েছে এবং দুর্ঘটনার জেরে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে ও ২০ জন আহত হয়েছেন।

তবে কী ভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল তা এখনও স্পষ্ট নয়।  রেলের এক পদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, যে জায়গায় মুম্বইগামী ট্রেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে, তার কাছেই একটি মালগাড়িও বেলাইন হয়। তবে এই দু’টি দুর্ঘটনার মধ্যে কোনও যোগ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে রেল তদন্ত শুরু করেছে ।

ঝাড়খণ্ডে রেল দুর্ঘটনার পর দক্ষিণ-পূর্ব রেলের একাধিক স্টেশনে হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়। হাওড়া স্টেশনের জন্য ৯৪৩৩৩৫৭৯২০ ও ০৩৩২৬৩৮২২১৭, টাটানগর স্টেশনের জন্য ০৬৫৭২২৯০৩২৪, চক্রধরপুর স্টেশনের জন্য ০৬৫৮৭ ২৩৮০৭২, রৌরকেলা স্টেশনের জন্য ০৬৬১২৫০১০৭২ ও ০৩৩২৬৩৮২২১৭ এবং রাঁচি স্টেশনের জন্য ০৬৫১২৭৮৭১১৫ হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে।

একের পর এক ট্রেন দুর্ঘটনা যে প্রশ্নগুলি সামনে নিয়ে এসেছে তা হল সিগন্যালিং ব্যবস্থা,  নাকি রেল ট্রাকে গন্ডগোল, না চালকের উপর অত্যধিক চাপ – এই রেল দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ? কিন্তু, সাধারণ মানুষের প্রশ্ন এভাবে আর কতদিন প্রাণ হাতে করে রেল পথে চলতে হবে?  প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দলগুলিও। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র নেতা-নেত্রীরা প্রশ্ন তুলতে  শুরু করেছেন, ‘কবচ’ সুরক্ষা ব্যবস্থার বাস্তবায়নে সরকারের ঢিলেঢালা মনোভাব নিয়ে। পৃথক রেল বাজেট তুলে দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দলগুলি।

সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব রেল নিরাপত্তায় গাফিলতি নিয়ে তীব্র আক্রমণ করেন। তাঁর কথায়, এই সরকার ট্রেন দুর্ঘটনায় রেকর্ড গড়তে চায়। ওদের আমলেই রেকর্ড সংখ্যায় প্রশ্নফাঁস হয়েছে। এখন রেল দুর্ঘটনায় রেকর্ড গড়বে বিজেপি।

শিবসেনা উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠীর এমপি প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে ‘রিল মিনিস্টার’ বলে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন। তৃণমূল এমপি সুস্মিতা দেব এবং সাগরিকা ঘোষও এই দুর্ঘটনার জন্য বিজেপি সরকারকে তুলোধোনা করেন । 

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করার সময় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের মুখে রেলের উল্লেখ শোনা যায় নামে মাত্র এক বার। প্রায় দেড় ঘণ্টার ‘দীর্ঘ’ বাজেট বক্তৃতায় রেলের জন্য বিশেষ কোন ঘোষণাই ছিল না নির্মলার বক্তব্যে। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সাংসদ মহুয়া মাজি কেন্দ্রকে একহাত নেন। রেল বাজেট কেন তুলে দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল সাংসদ কীর্তি আজাদও। অতীতে ১৯৬৫ সালে রেল দুর্ঘটনার কারণে তৎকালীন রেলমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন সে কথাও মনে করিয়ে দেন কীর্তি। কংগ্রেস সাংসদ মানিকরাম ঠাকুর  ঝাড়খণ্ডের রেল দুর্ঘটনা নিয়ে কড়া আক্রমণ শানিয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে। তাঁর কটাক্ষ, “অশ্বিনী বৈষ্ণব রেলমন্ত্রী হিসাবে নন, রেল দুর্ঘটনা মন্ত্রী হিসাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।” 

ভারতীয় রেলের যাত্রী সুরক্ষা যে বাস্তবিকই প্রশ্নের মুখে , তা নিয়ে কোন দ্বিমত নেই।