নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে বদল-জল্পনার মধ্যেই নিজের ক্ষোভ এবং অভিমানের কথা প্রকাশ্যে আনলেন অধীর চৌধুরী। প্রদেশ কংগ্রেসের বিদায়ী সভাপতি মঙ্গলবার জানান, লোকসভা ভোট চলার সময়ে দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের একটি মন্তব্যে আঘাত পেয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটি এআইসিসি-র বৈঠকে তাঁকে যেভাবে প্রাক্তন সভাপতি বলে অভিহিত করা হয়েছে, তা নিয়েও নিজের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন বহরমপুরের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ।
উল্লেখ্য, লোকসভা নির্বাচনের সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’য় থাকা নিয়ে তির্যক মন্তব্য করেছিলেন অধীর। সেই সময় কার্যত মমতার পাশে দাঁড়িয়ে অধীরকে ভর্ৎসনা করেছিলেন খাড়গে। লখনউয়ে শরদ পওয়ার, উদ্ধব ঠাকরের পাশে বসিয়ে কংগ্রেস সভাপতি জানিয়ে দেন, ভোটের পর সরকার গঠনের ক্ষেত্রে কী হবে না হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধীর কেউ নন। সেটা ঠিক করবে হাইকমান্ড। বিদায়ী লোকসভার কংগ্রেস দলনেতার উদ্দেশে কিছুটা হুঁশিয়ারির সুরেই খড়্গে বলেছেন, ‘‘হয় হাইকমান্ডের কথা মানতে হবে, তাদের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করতে হবে, না হলে বাইরে যেতে হবে।’’
অধীর পাল্টা বলেছিলেন, ‘‘আমিও কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য। আমিও হাইকমান্ডেরই লোক!’’ তবে ভোটপর্ব মেটার প্রায় দু’মাস পর খাড়্গের ওই মন্তব্য নিয়ে নিজের ক্ষোভ-অভিমানের কথা প্রকাশ্যে আনলেন অধীর। বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদের কথায়, “আমি দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে বলেছিলাম, যদি আপনারা তৃণমূলের সঙ্গে জোটের আলোচনা চান, তবে নতুন কাউকে সভাপতি পদে নিয়ে আসুন। তারপর লোকসভা ভোটে রাজ্যে দলের ফল খারাপ হল। আমি সভাপতি হিসাবে ইস্তফা দিতে চেয়েছিলাম।”
অধীর দাবি করেছেন, প্রদেশ কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক গুলাম মীর সোমবার দিল্লিতে এআইসিসি-র বৈঠকে তাঁকে প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি বলে অভিহিত করেছেন। এই বিষয়ে নিজের ক্ষোভের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি জানতাম যে, আমার সভাপতিত্বেই বৈঠকটি ডাকা হয়েছে। এ-ও জানতাম যে, আমি এখনও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। কিন্তু গুলাম মীর আমাকে প্রাক্তন সভাপতি বলে সম্বোধন করলেন। সেই সময় আমি জানতে পারলাম যে, আমি এখন (প্রদেশ কংগ্রেসের) প্রাক্তন সভাপতি।” মীরের নাম না করেই অধীর তাঁকে তোপ দেগে বলেন, “জানি না রাজ্যটাকে চেনেন কি না।” এআইসিসি-র বৈঠকে যাঁদের ডাকা হয়েছিল, তাঁদের অনেকেই রাজ্যে কোনও আন্দোলনে থাকেন না বলেও তোপ দেগেছেন অধীর।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে নিজের ইস্তফা প্রসঙ্গে অধীর বলেন, “আমি খড়্গেজির কাছে ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছিলাম। উনি দিল্লি এসে আলোচনা করতে বলেন। আমি সেই মতোই বৈঠকে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখলাম আমাকে প্রাক্তন সভাপতি হিসাবে অভিহিত করা হল। কিন্তু আমার ইস্তফাপত্র গৃহীত হয়েছে কি না, এখনও আমি তা জানি না।” আরও জানান যে, পদের প্রতি তাঁর কোনও মোহ নেই। কংগ্রেসের গঠনতন্ত্রের উল্লেখ করে তাঁর সংযোজন, “খড়্গেজি সভাপতি হওয়ার পরেই সংগঠনের সমস্ত পদ অস্থায়ী হয়ে গিয়েছিল। আমি অস্থায়ী প্রদেশ সভাপতি হিসাবে কাজ চালিয়ে গিয়েছি।”