কেরালা , ৩০ জুলাই – কেরলের ওয়েনাড় জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে ভয়ংকর ভূমিধস। আচমকা এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যু সংখ্যা। প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত প্রশাসন ৮৪ জনের মৃত্যুসংবাদ নিশ্চিত করেছে প্রশাসন । মৃতদের মধ্যে রয়েছে একটি এক বছরের শিশুও। ভূমিধসে আটকে আনুমানিক শতাধিক মানুষ। মৃতের সংখ্যাও আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, যে সব জায়গায় ধস নেমেছে সেখানে পৌঁছে উদ্ধারকাজে নামে দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। পাশাপাশি, ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় উদ্ধারকাজে সামিল হয়েছে দেশের বায়ুসেনাও। কিছু এলাকার পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে কোনোভাবেই সেখানে পৌঁছতে পারছে না উদ্ধারকারী দল। ফলে আটকে পড়া মানুষদের এয়ারলিফট করা হবে। উদ্ধারকাজ যাতে দ্রুত হয় নির্দেশ দিয়েছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। ধসে বিধ্বস্ত এলাকাগুলির সঙ্গে বাকি অংশের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। তাই ক্ষয়ক্ষতির সামগ্রিক ছবি এখনও প্রশাসনের অজানা।
ভয়াবহ এই ভূমিধসের ঘটনায় মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে শোকপ্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এক্স হ্যান্ডেলে মোদি লেখেন ‘ওয়েনাড়ে ভয়ংকর দুর্ঘটনার কথা শুনে আমি মর্মাহত। এই ভূমিধসে যারা প্রিয়জনকে হারিয়েছেন তাঁদের সমবেদনা জানাই। আহতরা যাতে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন সেই প্রার্থনা করি। যেখানে যেখানে ধস নেমেছে সব জায়গায় উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। গোটা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। কেন্দ্রের তরফে যথাসম্ভব সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা ও আহতদের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা তথা ওয়েনাড়ের প্রাক্তন সাংসদ রাহুল গান্ধিও। এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, ‘মেপ্পাদির কাছে মর্মান্তিক ভূমিধসের ঘটনায় আমি মর্মাহত। এই ঘটনায় যে সব পরিবার তাঁদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন সেই শোকস্তব্ধ পরিবারগুলিকে সমবেদনা জানাই। প্রার্থনা করছি যারা এখনও আটকে রয়েছেন তাঁদের নিরাপদে উদ্ধার করা হবে।’ পাশাপাশি কংগ্রেস সূত্রে খবর, রাহুল স্থানীয় কংগ্রেস নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে যতটা সম্ভব সাহায্য করার। দলের সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ কেসি বেণুগোপাল রাওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে গোটা পরিস্থিতির নজর রাখার। রাহুল নিজেও ওয়েনাড়ে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। যদিও অধিবেশন চলার ফলে তা সম্ভব হবে কিনা এখনই বলা যাচ্ছে না। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারায় বিজয়নের সঙ্গে কথা বলে সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেন তিনি।
গত কয়েক দিন ধরেই ওয়েনাড়ে ভারী বর্ষণ হচ্ছে । মঙ্গলবার ভোর ৩টে নাগাদ ওয়েনাড় জেলার পাহাড়ি এলাকায় প্রথম ধস নামার খবর পাওয়া যায়। এরপর একের পর এক জায়গায় ধস নামার খবর আসতে থাকে । ভোরেই রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সঙ্গে উদ্ধারকাজে নামে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর। মঙ্গলবার সকালে কেরলের রাজস্বমন্ত্রী কে রাজন প্রথমে আট জনের মৃত্যুর খবর জানালেও, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকতে নিহতদের সংখ্যা। প্রাকৃত এই বিপর্যয় কতটা ভয়ঙ্কর তার রূপ প্রকাশ পেতে থাকে। প্রশাসন সূত্রে খবর, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওয়েনাড় জেলার মেপ্পাডি, মুদাক্কাই এবং চুরাল মালা, আট্টমালা এবং নুলপুঝা । কালপেট্টা থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে মেপ্পাদির পাহাড়ি অঞ্চলের একাধিক পাহাড়ে ধস নামে। মুদাক্কাই টাউনের কাছে প্রথম ধসের খবর পাওয়া যায় রাত ১টা নাগাদ । এর ঘণ্টা তিনেক পর ওই এলাকায় এক স্কুলের কাছে দ্বিতীয় ধস নামে। আশেপাশের বাড়ি ও দোকানের মধ্যে জল কাদা ঢুকে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়। ভেসে যায় একাধিক গাড়ি। এই ঘটনায় এলাকায় অন্তত ৪০০টি পরিবার আটকে পড়ে। ভেঙে যায় ব্রিজ, যার জেরে ব্যাহত হয় উদ্ধারকাজ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন জায়গা থেকে মৃত্যুর খবর আসতে থাকে, লাফিয়ে বাড়তে থাকে হতের তালিকা।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হয় প্রশাসন। দমকল ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে দ্রুত ওই এলাকায় যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় । কান্নুর ডিফেন্স সিকিউরিটি কোরের দুটি টিমকেও ওয়েনাড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। উদ্ধারকাজে নামানো হয় ভারতীয় বায়ুসেনার হেলিকপ্টারও। রাজ্যের সব সরকারি এজেন্সিকে উদ্ধারকাজে হাত লাগানোর নির্দেশ দেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী । যদিও ব্যাপক বৃষ্টির জেরে পদে পদে ব্যাহত হয় উদ্ধারকাজ। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের সাহায্যে কেরলের স্বাস্থ্যদপ্তরের তরফে দুটি হেল্পলাইন নম্বর খোলা হয়েছে, 9656938689 এবং 8086010833। যে কোনও রকম আপদকালীন পরিস্থিতিতে এই দুই নম্বরে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছে কেরল প্রশাসন।
বিভিন্ন এলাকা থেকে কিছু মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে। তবে পদে পদে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে উদ্ধারকারী দলকে। কারণ মঙ্গলবার কেরলের বিভিন্ন এলাকায় ভারী বর্ষণ শুরু হয়।