নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সম্প্রতি সংসদে ধারালো ভাষণ দিয়ে নবগঠিত এনডিএ সরকার এবং বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বদের একযোগে বিঁধেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। অভিষেকের আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। এবার সেই সংসদেই সরাসরি অভিষেকের গ্রেফতারির দাবি জানালেন সৌমিত্র। তাঁর অভিযোগ, ৫০০০ কোটি টাকার দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত অভিষেক। যদিও নিজ বক্তব্যের সমর্থনে কোনও উপযুক্ত প্রমাণ সংসদে পেশ করেননি তিনি। সৌমিত্রর এই বক্তব্যই শোরগোল তৈরি করেছে রাজ্য রাজনীতিতে। তাঁর বক্তব্য কতটা সত্য অথবা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
সৌমিত্রর বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিতে পিছপা হননি তৃণমূল নেতৃত্বগণ। রাজ্যের পুরমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র সৌমিত্রকে সরাসরি আক্রমণ শানিয়ে বলেন, “বাবার জমিদারি গ্রেফতার করতে হবে? ছেলেটা (অভিষেক) ভালোভাবে সংসদে বলছেন, চুপ করিয়ে দিচ্ছেন, মোদী সাহেবকে হাঁ করিয়ে দিচ্ছেন, স্পিকারের চুপ করিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন – এই যে অভিষেকের চোখে চোখ রেখে কথা বলার দক্ষতা, তাঁকে কুর্নিশ জানাই।”
রাজ্যসভার প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন সৌমিত্রকে কটাক্ষ করে বলেন, “হারতে হারতে কোনও রকমে জিতেছেন। তিনি সমালোচনা করছেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের? যিনি ৭ লক্ষ ২০ হাজার ভোটে জিতেছেন! সৌমিত্র খাঁ সতর্ক থাকুন। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখুন।” রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ এ প্রসঙ্গে কটাক্ষের সুর চড়িয়ে বলেন, “উচ্চস্বরে যদি না বলেন, তাহলে লোকে তো বুঝতে পারছে, কে কার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এগুলো একটু জোরে জোরে বলতে হয়, না বললে দলের মধ্যেই ভুল বোঝাবুঝিতে পড়ে যাচ্ছেন। এগুলো জোরে জোরে না বললে তাঁদের পার্টির লোকেরাই নানারকম অনুমান করছেন।”
উল্লেখ্য, এই ঘটনার সূত্রপাত সংসদে অভিষেকের পেশ করা বক্তব্য থেকেই। এবার প্রশ্ন হল, ঠিক কী বলেছিলেন অভিষেক? ইংরেজি শব্দ ‘বাজেট’ -এর প্রত্যেক অক্ষরের বিতর্কিত অর্থ তুলে ধরে তার ব্যাখ্যা সংসদে শুনিয়েছিলেন অভিষেক। এভাবেই ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ কেন্দ্রীয় বাজেটের বিরুদ্ধে নিজ প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তৃণমূল সেনাপতি। সেখানে, বাজেটের ‘ডি’ অক্ষরটিকে ‘ডিপ্রাইভ’ অর্থাৎ বঞ্চনার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন অভিষেক। তৃণমূল সাংসদ অভিযোগ করেছিলেন, মোদী সরকার দেশের জনগণের সঙ্গে বঞ্চনা করেছে। সেই প্রসঙ্গে অভিষেক টেনে আনেন এক বিজেপি সাংসদের ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ। নাম না করে সৌমিত্রকে আক্রমণ শানিয়ে তিনি বলেন, “এই সংসদের এক সদস্য যেমন তাঁর স্ত্রীকে বঞ্চিত করেছেন!” এই সময় সংসদ খানিকটা বেসামাল হয়ে উঠলেও লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা পরিস্থিতির সামাল দেন। এবার সেই সূত্রেই অভিষেককে আক্রমণ শানান সৌমিত্র। শুক্রবার সংসদে সৌমিত্র খাঁ বলেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলছি, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসে ১০০ কোটির অ্যাটাচ করেছে ইডি সেই সম্পত্তির মালিক কে? এই জবাব দিতে হবে। তদন্ত করে দেখা হোক। ৫ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। অভিষেককে গ্রেফতার করার দাবি জানাচ্ছি আমি।”
সৌমিত্রর বক্তব্যের এই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসতেই নেটিজেনরাও ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন সৌমিত্রর বিরুদ্ধে। যে যুবনেতা স্বার্থত্যাগে বিশ্বাসী, তিনিই দুর্নীতির সাথে যুক্ত! এই বিষয়টি মানতে নারাজ নেটিজেনদের একাংশও।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সৌমিত্র খাঁর প্রাক্তন স্ত্রী সুজাতা মন্ডল বর্তমানে তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সদস্যা। লোকসভা ভোটে বিষ্ণুপুর লোকসভা আসনে সৌমিত্রর প্রতিপক্ষ হিসেবে সুজাতাকেই প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। সামান্য কিছু ভোটের ব্যবধানে বিষ্ণুপুরে জেতেন সৌমিত্র। বর্তমানে সৌমিত্রর বক্তব্যে বঙ্গীয় রাজনীতি উত্তাল হলেও, তাতে বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করতে আগ্রহী নন অভিষেক।