• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

কণ্ঠরোধে কথার মাঝেই মাইক বন্ধ, নীতি-বৈঠক থেকে ওয়াকআউট মমতার

অভিযোগ ওড়াল কেন্দ্র, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের ভিডিয়োর উপরে পিআইবি লিখল ‘বিভ্রান্তিকর’ দিল্লি, ২৭ জুলাই– তৃতীয় মোদি সরকারের প্রথম পুনাঙ্গ বাজেটে বাংলাকে বঞ্চনার অভিযোগ উঠেছে আগেই৷ এবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অপমান করার অভিযোগ৷ নীতি আয়োগের বৈঠক শুরুর ঘণ্টাদুয়েকের মধ্যে ওয়াকআউট করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে শনিবার সকাল ১০টা নাগাদ নীতি আয়োগের

অভিযোগ ওড়াল কেন্দ্র, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের ভিডিয়োর উপরে পিআইবি লিখল ‘বিভ্রান্তিকর’

দিল্লি, ২৭ জুলাই– তৃতীয় মোদি সরকারের প্রথম পুনাঙ্গ বাজেটে বাংলাকে বঞ্চনার অভিযোগ উঠেছে আগেই৷ এবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অপমান করার অভিযোগ৷ নীতি আয়োগের বৈঠক শুরুর ঘণ্টাদুয়েকের মধ্যে ওয়াকআউট করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে শনিবার সকাল ১০টা নাগাদ নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেওয়ার পর নিজের বক্তৃতা শেষ হওয়ার আগেই বেরিয়ে আসেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বেরিয়ে এসে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে পাঁচ মিনিটও বলতে দেওয়া হয়নি৷ মাইক বন্ধ করে আমাকে অপমান করা হয়েছে৷ এটা খুব অপমানজনক৷ আর কোনওদিন বৈঠকে যাব না৷’

মমতার পাশাপাশি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সাত মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক বয়কট করেন এদিন৷ যদিও তাদের অভিযোগ ছিল কেন্দ্রীয় বাজেটে বঞ্চনা৷

যদিও মমতার মাইক বন্ধের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে কেন্দ্রের দাবি, জনমানসকে বিপথে চালিত করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ নীতি আয়োগের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাইক বন্ধ করার দাবি সঠিক নয়৷ মধ্যাহ্নভোজের পর বক্তব্য রাখার কথা ছিল৷ কিন্ত্ত দিল্লি থেকে ফেরার তাড়া থাকায়, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুরোধে বৈঠকের সপ্তম স্পিকার করা হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে৷ ‘সময় শেষ’ দেখানো হয় ঘডি়তে৷ কেন্দ্রের তরফে ওই দাবির সত্যতা যাচাই করে দেখেছে প্রেস ইনফরমেশন বু্যরো (পিআইবি)৷ তাঁদের তরফে জানানো হয়েছে, এই দাবি ‘বিভ্রান্তিকর’৷ মমতা বৈঠকে নিজের কথা বলার সময় পেয়েছিলেন৷ ঘডি় অনুযায়ী, তাঁর বলার সময় পেরিয়ে গিয়েছিল৷ তার পরেও তাঁকে সতর্ক করতে কোনও ঘণ্টা পর্যন্ত বাজানো হয়নি৷ এই দাবির প্রেক্ষিতে পিআইবির তরফে এক্স (সাবেক টু্যইটার) হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করা হয়েছে৷ সেখানে মমতার বক্তব্যের ভিডিয়োর উপরে লিখে দেওয়া হয়েছে ‘বিভ্রান্তিকর’৷

এদিন বৈঠক থেকে বেরিয়ে মমতা জানান, তাঁর আরও কিছু কথা বলার ছিল বৈঠকে৷ তিনি সেখানে বিরোধীদের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন৷ বিরোধীদের তরফে একমাত্র তিনিই যে বৈঠকে উপস্থিত হয়েছিলেন, তাতে কেন্দ্রের খুশি হওয়ার কথা৷ তা না হয়ে বাংলাকে বঞ্চনার প্রসঙ্গে কথা শুরু করতেই থামিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ৷ রাজ্যের স্বার্থে এখানে এসেছিলাম৷ কিন্ত্ত বৈষম্যমূলক আচরণ করে আমার মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে৷ কেন তাঁকে পাঁচ মিনিটের বেশি বলতে দেওয়া হল না, তা নিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনের বাইরেই ক্ষোভ উগরে দেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী৷ পাঁচ মিনিট ধরে বৈঠকে তিনি কী বলেছেন সেই প্রসঙ্গে মমতা জানান, ‘আমি বলেছি আপনাদের (কেন্দ্রীয় সরকার) কোনও রাজ্য সরকারের প্রতি বৈষম্য করা উচিত নয়৷ আমি আরও কথা বলতে চেয়েছিলাম৷’ মমতা আরও বলেন, ‘চন্দ্রবাবু নায়ডুকে ২০ মিনিট বলতে দেওয়া হয়েছে৷ অসম, গোয়া, ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রীকে ১০ থেকে ১২ মিনিট বলতে দেওয়া হয়েছে৷ আর আমাকে পাঁচ মিনিটও বলতে দেওয়া হয়নি৷ বাজেটে কিছু নেই, জিরো৷ বৈষম্য করা হয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোও এটা কী সম্ভব? সকলের দিকে নজর দিতে হবে৷ এভাবে সরকার চলে না৷ এদিনের বৈঠকে প্ল্যানিং কমিশন ফিরিয়ে আনার দাবি জানান মমতা৷ তাঁর বক্তব্য, নীতি আয়োগের সেই অর্থে নীতি লাগু করার আর্থিক ক্ষমতা নেই৷ যা যোজনা কমিশনের ছিল৷ ফলে নীতিমালা তৈরি হলেও তা কী করে লাগু করবে নীতি আয়োগ, প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর৷

উল্লেখ্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম নন যিনি কেন্দ্রের মোদি সরকারের বিরুদ্ধে মাইক বন্ধের অভিযোগ তুলেছেন, এর আগে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি একাধিক বার লোকসভায় তাঁর মাইক বন্ধের অভিযোগ তুলেছেন৷ এবার অঙ্গরাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকেও নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে মাইক বন্ধ করে বিরোধীদের ‘কণ্ঠরোধ’-এর অভিযোগ উঠল৷ প্রসঙ্গত, শুক্রবার দিল্লি যাওয়ার আগেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিমাতৃসুলভ আচরণের অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা৷ তাঁর অভিযোগ ছিল, বাজেটে বাংলাকে বঞ্চনা করা হয়েছে৷ মমতা বলেছিলেন, ‘বাজেটে যে ভাবে বিরোধী রাজ্যগুলিকে বঞ্চনা করা হয়েছে, সেটা মানতে পারছি না৷ এক দিকে ইকনমিক ব্লকেড, পলিটিক্যাল ব্লকেড, এর সঙ্গে বাংলা-সহ বিভিন্ন রাজ্যকে টুকরো টুকরো করে দেওয়ার যে পরিকল্পনা, তার চরম নিন্দা করছি৷ মন্ত্রী সংসদে দাঁডি়য়ে বাংলা ভাগের কথা বলছেন!’

তাঁর ওই মন্তব্যেই বৈঠক থেকে ওয়াক আউটের ইঙ্গিত ছিল বলে বিজেপির একাংশের অভিযোগ৷ এর আগেও মোদি সরকারের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে তাঁকে বলতে না দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন মমতা৷ শনিবার দেখা গেল, মমতার অনুমানই সঠিক৷ যার প্রতিবাদে তিনি বৈঠক ছাডে়ন৷

মমতার অভিযোগের পরই মাঠে নেমে পড়েন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের মতো মন্ত্রীও৷ কেন্দ্রের পাশে দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন৷ আমরা সবাই ওঁর কথা শুনেছি৷ প্রত্যেক মুখ্যমন্ত্রীকে একটি নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয়েছিল বক্তব্য রাখার জন্য এবং নির্ধারিত সময় প্রতিটি টেবিলের সামনে রাখা স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছিল৷ উনি মিডিয়ায় বলেছেন যে ওঁর মাইক অফ করে দেওয়া হয়েছিল৷ এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা৷ এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন যে তাঁর মাইক অফ করে দেওয়া হয়েছিল৷ মিথ্যার উপরে কাহিনি তৈরি না করে, ওঁর উচিত সত্য বলা৷’

প্রসঙ্গত, এর আগেও বহুবার মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ তুলেছেন যে বৈঠকের একদম শেষে তাঁকে বলতে দেওয়া হয়৷ অত্যন্ত কম সময় পান বক্তব্য রাখার৷ যদিও মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিযোগ বরাবরই উডি়য়ে দিয়েছে কেন্দ্র৷ এবারের অভিযোগও উডি়য়ে দেওয়া হল একইভাবে৷

প্রসঙ্গত, কংগ্রেস শাসিত তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী— কর্ণাটকের সিদ্দারামাইয়া, তেলঙ্গানার রেবন্ত রেড্ডি, হিমাচল প্রদেশের সুখবিন্দর সিংহ সুখু আগেই কেন্দ্রীয় বাজেটে বঞ্চনায় প্রতিবাদে নীতি আয়োগের বৈঠক বয়কটের ঘোষণা করেছিলেন৷ তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা ডিএমকে প্রধান এমকে স্ট্যালিন, আম আদমি পার্টির নেতা তথা পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা পিনারাই বিজয়নও বৈঠক বয়কট করেন একই অভিযোগে৷ মমতা জানিয়েছিলেন, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন বৈঠকে থাকতে পারেন৷ কিন্ত্ত তিনিও শনিবার রাষ্ট্রপতি ভবনে গরহাজির ছিলেন৷ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বৈঠকে ছিলেন না বিজেপির সহযোগী জেডিইউর প্রধান তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও!