• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

সেটে রাহুল যেতেই ফের কর্ম বিরতি টেকনিশিয়ানদের

ক্ষুব্ধ পরিচালকদের পাল্টা কর্ম বিরতির হুমকি টলিউডে নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: টলিউডের পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের ওপর থেকে শনির দশা যেন কিছুতেই কাটছে না। বৃহস্পতিতে তাঁর ওপর থেকে ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার তরফে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও শনিবারে ফের শনির কোপে পড়লেন এই বিতর্কিত পরিচালক। শনিবার ফের কর্ম বিরতির ডাক দিল ফেডারেশন অফ

ক্ষুব্ধ পরিচালকদের পাল্টা কর্ম বিরতির হুমকি টলিউডে

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: টলিউডের পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের ওপর থেকে শনির দশা যেন কিছুতেই কাটছে না। বৃহস্পতিতে তাঁর ওপর থেকে ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার তরফে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও শনিবারে ফের শনির কোপে পড়লেন এই বিতর্কিত পরিচালক। শনিবার ফের কর্ম বিরতির ডাক দিল ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ান ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া। এর আগে যাবতীয় অভিযোগ ভুল প্রমাণিত হওয়ায় শুক্রবার ডিরেক্টরস গিল্ড রাহুলের উপর জারি করা তিন মাসের কর্মবিরতি তুলে নিয়েছিল। কিন্তু সেদিন রাতেই ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস জানান, পূর্বসিদ্ধান্ত বহাল থাকছে। রাহুল প্রযোজনা সংস্থা এসভিএফ-এর পুজোর ছবির সৃজনশীল প্রযোজক হিসেবে থাকবেন। পরিচালক হিসাবে নয়।

পাশাপাশি, এই সংগঠন প্রযোজনা সংস্থাকে শনিবার থেকেই শুটিং শুরুর ছাড়পত্র দেয়। কিন্তু সেটে রাহুল মুখোপাধ্যায় থাকায় টেকনিশিয়ানরা এদিন কাজ করেননি। শনিবার বহু অভিনেতা ও শিল্পী কাজে এসেও বসে থাকতে হল। এরপরেই টেকনিশিয়ান স্টুডিওর সামনে বিক্ষোভ দেখান টলিউডের সমস্ত পরিচালক। এদিন টেকনিশিয়ানসরা কাজে যোগ না দেওয়ায় দীর্ঘক্ষণ মেকআপ ভ্যানেই বসে থাকতে হল প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে। অপেক্ষায় থাকলেন অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য সহ অন্যান্যরাও। টেকনিশিয়ানরা দুম করে কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় অপমানিত হলেন সিনিয়র অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ হলেন সাংসদ ও অভিনেতা দেব।

জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ‘লহু’ নামে একটি বাংলাদেশের সিরিজের শুটিং করছেন পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়। সেই সিরিজের চার দিনের শুটিং হয় কলকাতায়। এরপর বাকি শুটিং করেন বাংলাদেশে। এই নিয়ে অভিযোগ ওঠে রাহুলের বিরুদ্ধে। এমনকি তিনি যে চারদিনের শুটিং কলকাতায় করেছেন, তাঁর বকেয়া মেটাননি বলেও অভিযোগ আসে। বিষয়টি নিয়ে আসরে নামে ডিরেক্টরস গিল্ড। তারা রাহুলের কাছে বিষয়টির সারবত্তা জানতে চায়। রাহুল বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার গেলেও পরে স্বীকার করে নেন যে, তিনি সিরিজটির বাকি অংশের শুটিং বাংলাদেশে করেছেন। এরপরই তাঁর বিরুদ্ধে তিন মাসের কর্মবিরতির নির্দেশ দেয় ডিরেক্টরস গিল্ড। তখন রাহুল ডিরেক্টরস গিল্ডের হাতে তাঁর স্বপক্ষে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ তুলে দেন। তিনি জানান, তাঁর বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ ভুল। সেই তথ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখে শুক্রবার ডিরেক্টরস গিল্ড আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, অভিযোগ ভুল প্রমাণিত হওয়ায় তাঁরা রাহুলকে কর্মবিরতি থেকে অব্যাহতি দিচ্ছেন।

সেই ছাড়পত্র অনুযায়ী, শ্রীকান্ত মোহতার পুজোর ছবির পরিচালনা রাহুল মুখোপাধ্যায় করবেন বলে সম্ভাবনা তৈরি হয়। যদিও রাতে ফেডারেশনের সভাপতি বক্তব্য রাখেন, “পরিচালক হিসেবে নয়, রাহুলকে তাঁরা প্রযোজনা সংস্থার পূর্ব ঘোষণা অনুয়ায়ী সৃজনশীল প্রযোজক হিসেবে মেনে নিচ্ছেন। পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন সৌমিক হালদার।”

উল্লেখ্য, ২৫ জুলাই, বৃহস্পতিবার ডিরেক্টর্স গিল্ডের বৈঠকের পরই ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার তরফে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাহুল মুখোপাধ্যায়ের উপর থেকে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা জানান তাঁরা। ফের পরিচালকের আসনে ফেরেন ‘কিশমিশ’, ‘দিলখুশ’ খ্যাত রাহুল। নিয়ম বিরুদ্ধভাবে শুটিং করার অভিযোগে পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়কে তিন মাসের কর্মবিরতির নির্দেশ দিয়েছিল ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ান ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া। যা শুরু হয়েছিল গত ২০ জুলাই, শনিবার থেকে। যা শেষ হতো আগামী ১৯ অক্টোবর। যে নিষেধাজ্ঞার জেরে, প্রযোজনা সংস্থা এসভিএফ পড়েছিল মহাফাঁপরে! কারণ প্রসেনজিৎ-অনির্বাণকে নিয়ে তাঁদের পুজোর ছবির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন রাহুল।

তবে সংগঠনের আপত্তির পর পরিচালকের আসন থেকে তাঁকে সরিয়ে কার্যনির্বাহী প্রযোজকের দায়িত্ব দেয় প্রযোজনা সংস্থা। সেই ইস্যুতেও আপত্তি তোলা হয়। এরপরই প্রতিবাদে উত্তাল হয় টলিউড। কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, রাজ চক্রবর্তী, অঞ্জন দত্ত-সহ একাধিক পরিচালক এর বিরোধিতা করেন। এরপরই পরিচালক সংগঠনের তরফে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বৃহস্পতিবার। সেই মিটিংয়ে যদিও বিশেষ কোনও সুরাহা হয়নি। তবে শুক্রবার শাপমোচন ঘটে রাহুল মুখোপাধ্যায়ের। ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানানো হয়, “বৃহস্পতিবার বৈঠকে নতুন তথ্য এবং প্রমাণের ভিত্তিতে আমাদের ধোঁয়াশা পরিষ্কার হয়। আমরা জানতে পেরেছি, প্রযোজক যেহেতু অন্য দেশের, তাই সেক্ষেত্রে তাঁরা কীভাবে নিজেদের দেশে কাজ করবেন, সেটার বিষয়ে আমাদের কিছু বলার থাকতে পারে না। তাই এই বিষয়ে রাহুল মুখোপাধ্যায়কে আমরা দোষ দিতে পারি না। সব শিল্পীরই নিজস্ব কাজের স্বাধীনতা থাকা উচিত বলেই আমাদের বিশ্বাস। সেটা দেশে হোক বা দেশের বাইরে। তাই আমাদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত রাহুল মুখোপাধ্যায় পরিচালক হিসেবে ফিরুন আবার। আমরা ওঁর পাশে রয়েছি। এবং ওঁর ভবিষ্যতের জন্য অসংখ্য শুভেচ্ছা।”

প্রসঙ্গত বৃহস্পতিবার ডিরেক্টর্স গিল্ডের বৈঠকে জানানো হয়েছিল, “ছবি যেন বন্ধ না করা হয়। রাহুল পরিচালনা না করে অন্য কোনও পদে থাকলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। আমরা চাই ছবিটা সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হোক।” তার ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার তরফে নতুন ঘোষণায় সম্মিলিতভাবে সমস্যার সুরাহা করা হয়।

কিন্তু, শনিতে টেকনিশিয়ানদের কর্ম বিরতিতে ফের শ্যুটিংয়ে বাঁধার সৃষ্টি হল। এরপরেই টেকনিশিয়ান স্টুডিও-র সামনে বিক্ষোভ দেখান টলিউডের সমস্ত পরিচালকবর্গ। শনিবারের এই প্রতিবাদে উপস্থিত ছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী, দেব অধিকারী, রাজ চক্রবর্তী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, অভিজিৎ সেন সহ প্রায় ১০০ জন পরিচালক। তাঁদের প্রশ্ন, রাহুলের উপস্থিতিতে কলাকুশলীরা কাজ করলেন না। একইভাবে পরিচালকরাও যদি কাজ বন্ধ করে দেন, তাহলে কি শুধু কলাকুশলীরা একটা কাজ তুলে দিতে পারবেন? তাঁরা শনি ও রবিবার পরিস্থিতি পুনর্বিবেচনা করার আর্জি জানিয়েছেন। সেটা না করলে সোমবার থেকে তাঁরাও একইভাবে কাজ না-ও করতে পারেন, এমনও হুমকি দিয়েছেন।