দিল্লি, ২৩ জুলাই– মোদি সরকারের তৃতীয় বাজেটে ছোট ব্যবসায়ী এবং উদ্যোগপতিদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে বলাই যায়৷ বাজেটে দরাজ কেন্দ্রীয় সরকার তার অন্যতম প্রকল্প মুদ্রা যোজনা বরাদ্দের ঊর্ধ্বসীমা বৃদ্ধি করে ব্যবসায়ীদের খুশি করেছে বলেই মত অর্থনীতিবিদদের৷ প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার অধীনে রয়েছে এই মুদ্রা লোন৷ এই বছর অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করেছেন যে মুদ্রা লোনের সীমা ১০ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত৷ তবে এই সুবিধা কিন্তু সেই সমস্ত ঋণ গ্রাহকদের জন্য যাঁরা ‘তরুণ’ ক্যাটেগরির অধীনে ঋণ নিয়েছেন এবং ঠিকমতো ঋণ ফেরত দিয়েছেন৷
এদিন বাজেট পেশের সময় অর্থমন্ত্রী জানান, এমএসএমই-র জন্য ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম থাকছে৷ ১০০ কোটি টাকা মূল্যের সেলফ ফাইনান্সিং গ্যারান্টি ফান্ড এর জন্য তৈরি হচ্ছে৷ এগুলির ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কাজ করবে সরকারি ব্যাঙ্ক৷ সরকারি ব্যাঙ্ক এমএসএমই-র মূল্যায়ন করে ঋণ দেবে৷ আগের ঋণ শোধ করলে তাদের আরও বেশি ঋণ পাওয়ার অধিকার থাকবে৷
এছাড়া, এমএসএমই-দের জন্য এক্সপোর্ট হাব তৈরি করা হবে৷ এ দিন অর্থমন্ত্রী জানান, এমএসএমই-র জন্য একছাদের নীচে উৎপাদন থেকে রফতানির ব্যবস্থা থাকবে৷ কলকাতা-অমৃতসর ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডর তৈরি হবে৷
দেশের অর্থনীতিতে যোগদান এবং কর্মসংস্থানের নিরিখে বড় শিল্পের থেকেও অবদান বেশি ছোট শিল্পের৷ ফলে বাজেট থেকে তাদের প্রত্যাশাও বেশি৷ রাজ্যে ছোট-মাঝারি সংস্থাগুলির সংগঠন ফসমি-র সভাপতি বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাজেটে যে দাবিগুলি রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম ক্রেডিট লিঙ্ক ক্যাপিটাল সাবসিডি প্রকল্প ফের চালু করা৷ ২০২০ সালের মার্চে প্রকল্পটি বন্ধ হয়েছিল৷ তা চালু করে এর আওতায় আর্থিক সাহায্যের অঙ্ক ১৫ লক্ষ টাকার বেশি করার আর্জি জানিয়েছি কেন্দ্রের কাছে৷’ পাশাপাশি বিশ্বনাথ বলেন, ছোট শিল্প সংস্থাগুলির বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের নানা ধরনের নিয়ম রয়েছে৷ তা সব ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে এক হওয়া প্রয়োজন৷ পরিবেশবান্ধব সংস্থা গড়ার মতো প্রস্তাবও দিয়েছেন তাঁরা৷
নমিত বাজোরিয়া, কুচিনা হোম মেকার্স প্রাইভেট লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা আমার বেজায় খুশি এই বাজেটে ব্যবসায়ীক নানা ঘোষণায়৷ তিনি জানালেন, এমএসএমইগুলির জন্য ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম প্রবর্তন, মুদ্রা ঋণের বৃদ্ধি এবং পিপিপি মডেলের অধীনে ই-কমার্স হাব প্রবর্তন শুধুমাত্র এই সেক্টরগুলিতে রাজস্ব বৃদ্ধি করবে না বরং কর্মসংস্থানকেও ত্বরান্বিত করবে এবং উচ্চ মজুরির সুযোগ প্রদান করবে৷ বাজেটে জ্বালানি নিরাপত্তা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে, যা প্রশংসনীয়৷ কিন্ত্ত এবার প্রতিরক্ষা ও রেলপথ সরকারের নজর এডি়য়ে গেছে৷
ছোট শিল্পের জন্য কেন্দ্রের কাছে দরবার করেছে বণিকসভা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মূল্যায়ন সংস্থাও৷ ভারত চেম্বারের সভাপতি এন জি খেতানের প্রস্তাব, এই ক্ষেত্রের সংস্থাগুলি যাতে আরও বেশি করে ডিজিটাল ব্যবস্থার শরিক হতে পারে, সে জন্য নীতি আনা জরুরি৷ বছরে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যবসা করে এমন সংস্থার ই-ওয়ে বিলে সমস্যা হলে এখন ২০০% জরিমানা দিতে হয়৷ তা ১০০% করার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি৷ আর্জি জানিয়েছেন ওই সব সংস্থাকে ই-ইনভয়েস ব্যবস্থার বাইরে আনা এবং তাদের জরিমানায় সুদের হার ১৮% থেকে ১২ শতাংশে নামানোর৷ এমএসএমই-গুলির অন্যতম সমস্যা হল সহজে নিয়মিত পুঁজির জোগাড়৷ সেই পথ সরল করা, জিএসটি সংক্রান্ত নানা সমস্যার সমাধান এবং এই শিল্পের জন্য নীতিগত বেশ কিছু বদলের কথা বলেছেন মার্চেন্টস চেম্বারের সভাপতি নমিত বাজোরিয়াও৷
দেশের ছোট-মাঝারি সংস্থাগুলির হাত ধরে বিপুল কর্মসংস্থান হয়৷ অসংগঠিত ক্ষেত্রেরও অধিকাংশটা জুডে় রয়েছে তারা৷ যে কারণে বস্ত্র, চর্ম, ক্ষুদ্রশিল্প, হস্তশিল্প, খেলনা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সংস্থার জন্য আরও বেশি সামাজিক সুরক্ষা সংক্রান্ত প্রকল্প দরকার বলে মনে করে কেয়ারএজ রেটিং৷ সংস্থার কর্তা সচিন গুপ্ত বলেন, সেটা করতে পারলে এই ক্ষেত্রের প্রসার হবে দ্রুত৷ সুরাহা হবে কর্মীদের৷
বাজেট ২০২৪ এর সরকারের কাছে নোটবন্দি, তডি়ঘডি় জিএসটি চালু এবং লকডাউনের মতো একের পর এক ধাক্কায় জর্জরিত ছোট-মাঝারি শিল্পমহলের দাবি, সহজে ঋণের পাশাপাশি বিবিধ নিয়মের সরলীকরণ এবং ব্যবসা সম্প্রসারণে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো৷ অর্থমন্ত্রীর কাছে এই দাবিই জানাল (এমএসএমই)৷