লখনউ, ২২ জুলাই – কানওয়ার যাত্রার পথে খাবার বিক্রেতাদের নাম লেখা বাধ্যতামূলক নয়। সোমবার উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ড সরকারের নির্দেশিকায় স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি হৃষীকেশ রায় এবং এসভিএন ভাট্টির বেঞ্চ জানায়, উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ড সরকারকে শুক্রবারের মধ্যে নোটিস দিয়ে নিজেদের বক্তব্য জানাতে হবে। আপাতত দুই সরকারের নির্দেশিকায় স্থগিতাদেশ দিল দেশের শীর্ষ আদালত।
কানওয়ার যাত্রায় এই নাম উল্লেখের নির্দেশাবলীর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং নাগরিক সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন। বিষয়টি নিয়ে জনস্বার্থ মামলা করেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও। সব একত্র করে সোমবার শুনানি হয়। সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশ প্রকাশ্যে আসার পরেই নিজের এক্স হ্যান্ডেলে মহুয়া লেখেন, “কোনও দোকানদারের নাম-পরিচয় প্রকাশ্যে আনার প্রয়োজন নেই। সুপ্রিম কোর্ট কানওয়ার যাত্রায় অবৈধ এবং অসাংবিধানিক নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। সংবিধান দীর্ঘজীবী হোক। আমরা যেন সবসময় একে রক্ষা করে চলি।”
বিহার, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে কানওয়ার যাত্রা। প্রতি বছরই শ্রাবণ মাসের শুরুতে এই বিশেষ যাত্রায় শিবভক্তেরা তীর্থক্ষেত্র গুলি ভ্রমণে বের হন। এবার যাত্রার আগে উত্তরপ্রদেশ সরকার নির্দেশ দেয়, কানওয়ার যাত্রার প্রতিটি রুটে যত খাবারের দোকান রয়েছে, তার সবকটিতেই বড় বড় ব্যানার দিয়ে লিখতে হবে দোকান মালিকের নাম। কেবল উত্তরপ্রদেশ নয়, একই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডেও । এই নির্দেশের মূল উদ্দেশ্য ধর্মীয় বিভাজন আরও স্পষ্ট করে তোলা, তেমনটাই অভিযোগ বিরোধীদের। এর আগে পুণ্যার্থীদের সম্মান জানিয়ে কানওয়ার যাত্রাপথে আমিষ বিক্রি বন্ধেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। শুক্রবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, “কানওয়ার যাত্রীদের যাত্রাপথের দুপাশে যে সব খাবারের দোকান রয়েছে, তার মালিকদের বাধ্যতামূলকভাবে দোকানের বোর্ডে নিজেদের নাম লিখে রাখতে হবে।’’ পরে একই সিদ্ধান্তের কথা জানায় উত্তরাখণ্ড সরকারও।
এই নির্দেশিকার বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের হয়। যোগীরাজ্যের তীব্র নিন্দা করে পিটিশন দায়ের করেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তিনি আবেদনে জানিয়েছেন, দোকান মালিকের ধর্মীয় পরিচয় তীর্থযাত্রীদের কাছে স্পষ্ট করার উদ্দেশে যে নির্দেশিকা জারি হয়েছে তা নীতিবিরুদ্ধ। এধরনের বিষয় একাধিক মৌলিক অধিকার খর্ব করে। সমাজের সবচেয়ে স্পর্শকাতর সম্প্রদায়ের উপর অবিচার। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সোমবার একাধিক পিটিশন একত্রিত করে শুনানি শুরু হয় বিচারপতি ঋষিকেশ রায় এবং এসভিএন ভাট্টির এজলাসে। দুই বিচারপতির বেঞ্চ জানায়, এই নির্দেশের ফলে অনেক দোকানের কর্মচারী চাকরিহারা হয়েছেন। আপাতত সরকারি নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়ে তিন রাজ্যকে নোটিস পাঠিয়েছে শীর্ষ আদালত। ২৬ জুলাই এই ইস্যুতে ফের শুনানি হবে।