• facebook
  • twitter
Friday, 20 September, 2024

মমতার ডাকে শহিদ দিবসের মঞ্চে অখিলেশ-উদ্ধব

ইন্ডিয়া জোটের অখণ্ডতার বড় বার্তা লখনউ, ২০ জুলাই– প্রতি বছরের মতো চলতি বছরও ২১ জুলাই ধর্মতলায় ‘শহিদ দিবস’ এর আয়োজন করা হয়েছে তৃণমূলের তরফে৷ শহিদ দিবস উপলক্ষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইন্ডিয়া জোটের সব শরিক দলকেই মঞ্চে থাকার আমন্ত্রণ পাঠিয়েছেন৷ কিন্ত্ত, সোমবার থেকে সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হতে চলায় অনেকেই হয়তো সেই অনুরোধ রাখতে পারবেন না৷ তবে

ইন্ডিয়া জোটের অখণ্ডতার বড় বার্তা
লখনউ, ২০ জুলাই– প্রতি বছরের মতো চলতি বছরও ২১ জুলাই ধর্মতলায় ‘শহিদ দিবস’ এর আয়োজন করা হয়েছে তৃণমূলের তরফে৷ শহিদ দিবস উপলক্ষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইন্ডিয়া জোটের সব শরিক দলকেই মঞ্চে থাকার আমন্ত্রণ পাঠিয়েছেন৷ কিন্ত্ত, সোমবার থেকে সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হতে চলায় অনেকেই হয়তো সেই অনুরোধ রাখতে পারবেন না৷ তবে মমতার অত্যন্ত পছন্দের, বিজেপি বিরোধী নয়া জমানার নেতা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো অখিলেশ সেই অনুরোধ ঠেলতে পারেননি৷ তাই আগামিকাল, রবিবার সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তিনি আসতে পারেন তৃণমূল কংগ্রেসের ঐতিহাসিক সভায়৷ সপা সুপ্রিমো উপস্থিত থাকা নিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করে জানিয়েছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ৷ সূত্রের খবর, রবিবার সকালে তিনি বিমানে কলকাতায় আসবেন৷ পাশাপাশি রাজ্য শাসক দল সূত্রে খবর, শিবসেনা (ইউবিটি)-র প্রতিনিধিও এদিনের সভায় উপস্থিত থাকতে পারেন৷ অন্যদিকে আবার মহারাষ্ট্র তরফে উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে উদ্ধব ঠাকরের৷ তবে সেই প্রসঙ্গে তৃণমূল তরফে এখনও কিছু জানানো হয়নি৷

আবার অন্য এক সূত্র বলছে, অখিলেশ যাদব নিজেই ফোন করেছিলেন মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়কে৷ তিনি নিজেই ২১-র মঞ্চে উপস্থিত থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন৷ ‘ভাই’য়ের প্রস্তাব ফেরাননি মুখ্যমন্ত্রী মমতাও৷ তবে যাই হোক অখিলেশের ২১ এর মঞ্চে উপস্থিত থাকা প্রসঙ্গে রাজনীতিক মহলের মত, এটি ইন্ডিয়া জোটের অখণ্ডতার বড় বার্তা৷

অখিলেখের উপস্থিতি প্রসঙ্গে রাজ্য সমাজবাদী পার্টির সাধারণ সম্পাদক হবিবুর রহমান খান নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, রবিবার বেলা ১১টা নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে নামবেন দলনেতা অখিলেশ৷ সপা নেতাকে স্বাগত জানাতে দলের কর্মী-সমর্থকরা বিমানবন্দরে যাবেন৷ তাঁদের সঙ্গে থাকবেন সর্বভারতীয় সহসভাপতি রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কিরণময় নন্দ, রাজ্য সভাপতি মানস ভট্টাচার্য প্রমুখ৷
অখিলেশ যাদবের নেতৃত্বে সমাজবাদী পার্টির রাজ্য কর্মী-সমর্থক ও নেতৃবৃন্দ ধর্মতলার উদ্দেশে যাত্রা করবেন৷ সেই সভার পর দলীয় স্তরে একটি বৈঠক হবে৷ সেখানে রাজ্যে সপার ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা করবেন অখিলেশ যাদব৷ তারপর তিনি সোজা দিল্লি চলে পারেন৷

উল্লেখ্য, উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে তৃণমূল নেত্রীর দীর্ঘদিনের মধুর সম্পর্ক৷ সেই মুলায়ম সিংয়ের আমল থেকে মমতার খুব পছন্দের বিজেপি বিরোধী সপাকে৷ মুলায়মের উত্তরসূরি হিসেবে অখিলেশ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে সেই সম্পর্ক আরও গভীর হয়৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাডি়তে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন সপা সাংসদ৷ এমনকী উত্তরপ্রদেশে ভোটের সময় সপা প্রার্থীর হয়ে সেখানে প্রচারেও গিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী৷

লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় একা লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিলেও জাতীয় স্তরে ‘ইন্ডিয়া জোট’-এর সঙ্গেই রয়েছে তৃণমূল, একাধিকবার সেই বার্তা দিয়েছেন দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক হয়েছিল দিল্লিতে৷ সেখানে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সেই সময় অখিলেশ যাদবের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল৷ সেই সময় জল্পনা শুরু হয়েছিল, ইন্ডিয়া জোটের বাইরে আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে একটি সমান্তরাল জোট তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ রাজ্যে যেমন ভাল ফল করেছে তৃণমূল, তেমনই উত্তর প্রদেশেও চমকপ্রদ ভাল ফল করেছে সমাজবাদী পার্টি৷ কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে তারা আলাদা জোট তৈরি করতে পারে বলে জল্পনা শুরু হয়েছিল৷ এবার সেই জোটের আলোচনা এগোবে কি না, তা জানা যাবে ২১ মঞ্চের সভার পরই৷

লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ ৪০০ পারের লক্ষ্য নিয়ে হাঁটলেও ঝুলিতে এসেছে মাত্র ২৯৩ আসন৷ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি৷ লোকসভা নির্বাচনের পরে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া উপনির্বাচনেও ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি৷ সবমিলিয়ে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দাঁডি়য়ে অখিলেশ যাদবের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে উপস্থিত থাকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে৷

এবারের ২১ জুলাইয়ের অনুষ্ঠানের গুরুত্ব আরও বেশি কারণ এবার লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় তৃণমূল ভালো ফলাফল করেছে৷ ৪২টির মধ্যে ২৯টি আসনে জয়ী হয়েছে রাজ্যের শাসক দল৷ বিজেপির আসন সংখ্যা কমে ১২টি হয়েছে এবং কংগ্রেস জিতেছে ১টি আসনে৷ পাশাপাশি বাংলায় চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছে রাজ্যের শাসক দল৷ ২১ জুলাই এই জয় বাংলার জনতাকে উৎসর্গ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷

লোকসভা ভোটের আগে ইন্ডিয়া জোটের বিভিন্ন বৈঠকে দেখা গিয়েছে, অখিলেশকে গুরুত্ব দিয়ে কথা বলছেন মমতা৷ তিনিও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রায়শই আলোচনা করেন অভিজ্ঞ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে৷ তাই সেই সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে ও আরও মজবুত করতে তাঁর শহিদ দিবস উপলক্ষে ধর্মতলার সভায় আসা বলে অনেকের ধারণা৷

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, সংসদের বাদল অধিবেশন৷ কারণ এই অধিবেশনেই ২৩ জুলাই পেশ হতে চলেছে বাজেট৷ ফলে সংসদের দুই কক্ষে বিরোধী জোটের ভূমিকা নিয়েও সভার ফাঁকে আলোচনা সেরে ফেলতে পারেন দুই শীর্ষ নেতা-নেত্রী৷ বিশেষত, এবারের অধিবেশন হতে চলেছে এমন একটা প্রেক্ষাপটে, যা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ, রাজ্যসভায় বিজেপি দুর্বল এবং লোকসভাতেও তার আগের শক্তি ক্ষয় হয়েছে৷ সে কারণে বিভিন্ন ইসু্যতে সরকারকে চেপে ধরতে মরিয়া বিরোধীরা৷ তার উপর অখিলেশের কাছে হাতে গরম ইসু্য হচ্ছে কাঁওয়াড় যাত্রা নিয়ে উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড সরকারের মুসলিম-বিরোধী ফতোয়া৷ সেইসব জাতীয় প্রসঙ্গও রবিবারের মঞ্চে তুলে ধরে বিজেপিকে সাঁড়াশি আক্রমণ চালাতে পারেন মমতা-অখিলেশ৷