• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

দলের কথা প্রকাশ্যে নয়, অর্জুনকে সতর্ক করলেন সুকান্ত

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: প্রকাশ্যে দলের বিরুদ্ধে কথা না বলার নিদান দিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বুধবার শুভেন্দুর পর এবার আক্রমণ শানালেন অর্জুন সিং-এর বিরুদ্ধে। কার্যত এতে যে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা হচ্ছে, সেই লক্ষ্মণরেখাটা বুঝিয়ে দেন বালুরঘাটের সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। প্রসঙ্গত বুধবার বিজেপির কর্ম সমিতির বৈঠকে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: প্রকাশ্যে দলের বিরুদ্ধে কথা না বলার নিদান দিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বুধবার শুভেন্দুর পর এবার আক্রমণ শানালেন অর্জুন সিং-এর বিরুদ্ধে। কার্যত এতে যে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা হচ্ছে, সেই লক্ষ্মণরেখাটা বুঝিয়ে দেন বালুরঘাটের সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।

প্রসঙ্গত বুধবার বিজেপির কর্ম সমিতির বৈঠকে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি মোদির স্লোগানের বিরোধিতা করে বলেছিলেন, অনেক হয়েছে সবকা সাথ, সবকা বিকাশ। যারা আমাদের সঙ্গে নেই। আমরাও তাদের সঙ্গে নেই। ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ বন্ধ করো’। শুধু তাই নয়, দলীয় বৈঠকে তাঁর বক্তৃতার শেষে শুভেন্দু এও বলেন, বিজেপির সংখ্যালঘু সেল রাখার দরকার নেই। লোকসভা ভোটে তিনটি বিষয় প্রমাণ হয়ে গেছে। তার অন্যতম হল, বাংলায় মুসলমানরা বিজেপিকে ভোট দেয় না। সেজন্য মোদির স্লোগানের প্রয়োজনীয়তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ আর বলব না।’ তাঁর বক্তব্য, ‘বলব যো হামারে সাথ, হাম উনকা সাথ। সব কা সাথ সবকা বিকাশ বন্ধ করো। নো নিড সংখ্যালঘু মোর্চা।’

ভরা সভায় শুভেন্দুর এই দলবিরোধী আচরণ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন সুকান্ত। রাজ্য সভাপতি বলেছিলেন, শুভেন্দুর ওই বক্তব্য দল ‘অনুমোদন’ করে না। সুকান্তের কথায়,‘‘বাংলায় ঐক্যবদ্ধভাবে বিজেপি এগোবে।’’ বোঝাই যায় তাঁর এই বক্তব্যের মধ্যে তীব্র বিরোধিতার সুর লক্ষ্য করা যায়। সুকান্ত ফের সরব হলেন শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ আর এক বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে। তাঁকে প্রকাশ্যে দলের কথা বলতে নিষেধ করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ সেই বিজেপি নেতা ব্যারাকপুরের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং-কে এই নির্দেশ দিলেন সুকান্ত মজুমদার।

জানা গিয়েছে, শুভেন্দুর বিতর্কিত মন্তব্যের একদিন পর বৃহস্পতিবার শুভেন্দুর বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে অর্জুন পাশে দাঁড়ালেন। তিনি বলেন, ”শুভেন্দু যা বলেছেন তাকে শতকরা দুশো ভাগ সমর্থন করি। আমার মনে হয় না, উনি মোদীজীর শ্লোগানের কোনও বিরোধিতা করেছেন, এটাও মনে হয় না মোদীজীর বক্তব্যের সঙ্গে ওঁর বক্তব্যের সংঘাত আছে। শুভেন্দু বলেছেন, ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’! যারা বিজেপির সঙ্গে নেই, তাদের সঙ্গে বিজেপিও থাকবে না। এটা একেবারেই রাজনৈতিক একটা বক্তব্য।”

এদিন শুভেন্দুর মধ্যে শ্যামাপ্রসাদের ছায়া দেখা যাচ্ছে বলে দাবি করেন অর্জুন। তিনি বলেন,”শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ও বলেছিলেন এক দেশ, এক নিশান, এক সংবিধান। যে মানবে না, সে আমাদের দেশে কী করে থাকতে পারে! আমার তো শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে দেখার সৌভাগ্য হয়নি, যেটুকু পড়েছি আর জেনেছি, তাতে মনে হচ্ছে শুভেন্দুর কথায় বাঙালি হিন্দুর মধ্যে সেই জোশটা আবার ফিরে দেখছি। উনি যা বলেছেন, তার সঙ্গে আমি শতকরা দুশো ভাগ সহমত।”

উল্লেখ্য, গতবার জেতা ব্যারাকপুর আসনটি বিজেপির টিকিটে জেতেন তৃণমূল থেকে আগত অর্জুন সিং। তবে এবার আর জিততে পারেন নি। তিনি মাঝে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার তৃণমূলের টিকিট পাননি। তাই ভোটের ঠিক আগে ফিরে আসেন বিজেপি-তে। তবে ফের তাঁর টিকিটি পাওয়া নিয়ে ছিল একাধিক সংশয়। বিজেপির ভিতরের খবর, শুভেন্দুর ‘হস্তক্ষেপ’ না-থাকলে অর্জুনের টিকিট পাওয়া ছিল কার্যত অসম্ভব ছিল। সেজন্য অর্জুন বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন দিল্লি গিয়ে।

বৃহস্পতিবার অর্জুনের সেই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সুকান্ত বলেন, ‘‘দলের কথা দলের মধ্যেই বলা উচিত। সংবাদমাধ্যমের সামনে বলা উচিত নয়।’’ সুকান্তের কথায়, ‘‘বলার হলে অনেক জায়গা রয়েছে। সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা, বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সুনীল বনসল, মঙ্গল পাণ্ডে, অমিত মালব্যরা আছেন। সর্বভারতীয় সাংগঠনিক সম্পাদকও রয়েছেন। তাঁদের বলুন।’’ বিজেপির অনেকে মনে করছেন, ‘এলাকায় দুর্বল সংগঠনের’ কথা বলে ঠারেঠোরে সুকান্ত ব্যারাকপুরের হার নিয়ে অর্জুনকেই প্রশ্নের মুখে ফেলতে চেয়েছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন,‘‘কোনও এলাকায় যদি সংগঠন দুর্বল হয়, তার দায় নিচুতলার কর্মী থেকে উপরতলার সকলের। দায় তো আমাদেরও। আমাদের দায় নেই?’’

তবে অনেকের মতে, এই সতর্কবার্তা সুকান্ত শুধু অর্জুনকেই শোনাননি। তাঁর পাশাপাশি সতর্ক করেছেন দলের আর এক বেলাগাম নেতা সৌমিত্র খাঁ-কেও। কারণ, বৃহস্পতিবার অর্জুনের পাশাপাশি বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ-ও সংগঠন নিয়ে বুধবার সংবাদমাধ্যমের সামনে খোলাখুলি প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেজন্য রাজনৈতিক মহলের ধারণা, অর্জুন, সৌমিত্র দু’জনকেই সতর্ক করতে চেয়েছেন সুকান্ত। এলাকার সংগঠনের ‘দুর্বলতা’র দায় যে সংশ্লিষ্ট এলাকার নেতাদেরই, তা ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন রাজ্য সভাপতি।

এদিকে অর্জুনকে নিয়ে সুকান্তর এই নির্দেশকে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল নেতা কুনাল ঘোষ। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘মনে হয় সুকান্ত মজুমদার অর্জুনকে দূর থেকে সতর্ক করেছেন। আগামী দু’তিন মাস হয়তো বিজেপির রাজ্য সভাপতি ব্যারাকপুর এলাকায় পা রাখবেন না। অন্য কোথাও যেতে হলেও ঘুরপথ ধরে যেতে হবে।’’ পাশাপাশি, শুভেন্দুর মন্তব্য নিয়ে সুকান্তের বিরোধিতাকেও কটাক্ষ করেছেন কুণাল। তিনি ফের বলেন, ‘‘শুভেন্দু আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে বিজেপিতে গিয়েছেন। আমাদের নেতানেত্রীর বিরুদ্ধে কুৎসা করছেন। অথচ একমাত্র শুভেন্দুই বিজেপিকে ভাসিয়ে রেখেছেন। নেতা হিসেবে শুভেন্দুর জুতো পালিশ করার যোগ্যতা সুকান্তদের নেই।’’