খায়রুল আনাম: শোকের মহরম পালনের মধ্যেই ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বীরভূমের রামপুরহাট মহকুমার পাইকর থানার করমজি ও মাড়গ্রাম থানার যশোরী গ্রাম দু’টি শোকে পাথর হয়ে গিয়েছে। বুধবার ১৭ জুলাই রাতের দুর্ঘটনার পরে এলাকায় মহরম পালনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানও বন্ধ হয়ে যায়। মহরম পালনের রাত ৯ টা ১০ মিনিটে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে। রানীগঞ্জ–মোড়গ্রাম ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কে রামপুরহাটের পুরাপাড়া গ্রামের কাছে। জানা গিয়েছে, নলহাটির দিক থেকে আসা একটি মোটর বাইকে ছিল ৩ জন সওয়ারী। আর উল্টো দিক থেকে আসা একটি মোটরবাইকে ছিল ৪ জন। এদের কারও মাথায় হেলমেট ছিল না।
রাতের বুক চিরে দু’টি মোটরবাইকই যাচ্ছিল ঝড়ের গতিতে। আশপাশের এলাকায় তখন মহরমের বাজনা বাজছে প্রচণ্ড জোরে। মোটরবাইক আরোহীরা বিভিন্ন জায়গায় মহরম দেখে বেড়াচ্ছিলেন। জাতীয় সড়কে পুরাপাড়া গ্রামের কাছে মোটরবাইক দু’টি যখন মুখোমুখি হয় তখন কেউ-ই গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। ফলে দু’টি বাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে দু’টিরই সামনের অংশ উড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই ২ জনের মৃত্যু হয়। সংঘর্ষের বিকট শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। মহরমের জন্য ওই এলাকায় কর্মরত পুলিশ এবং রামপুরহাট থানা থেকে পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহ ২টি ও আহতদের উদ্ধার করে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে আরও ১ জন মারা যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে মৃত্যু হয় আরও ২ জনের।
চিকিৎসাধীন অপর ২ জনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। প্রথমে এদের পরিচয় জানা না গেলেও পরে তাদের পরিচয় জানার পর তাদের আত্মীয়স্বজনরা হাসপাতালে পৌঁছে যান। বন্ধ হয়ে যায় এলাকার মহরমের অনুষ্ঠান। মৃতদের মধ্যে পাঁচজনই পাইকর থানার করমজি ও মাড়গ্রাম থানার যশোরী গ্রামের বাসিন্দা। মৃতদের মধ্যে মিসবুল হক নবম শ্রেণির ও শেখ রহমতুল্লা দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল। অপর ৩ জনের মধ্যে সামসুল হক (২৫) ও আরিফ মহম্মদ (১৮) পেশায় রাজমিস্ত্রি। এদের সঙ্গেই ছিল তাদের আরেক বন্ধু ১৬ বছরের শেখ নাসিম। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর এই পাঁচজনের মৃতদেহ বৃহস্পতিবার ১৮ জুলাই তাঁদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার পরে তাঁদের নিজ নিজ গ্রামে ধর্মীয় রীতি মেনে কবরস্থ করা হয়।