সরকারি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ
আমিনুর রহমান, বর্ধমান, ১৭ জুলাই: সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবাকে কলুষিত করছে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক, এমনই অভিযোগ তুলে ওই আধিকারিকের অপসারণের দাবি তুললেন এলাকার স্থানীয় গ্রামবাসীরা। চাঞ্চল্যকর ঘটনা পূর্ব বর্ধমানের গলসির পুরষায়। বিষয়টি নিয়ে গ্রামের লোকজন পূর্ব বর্ধমান জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, জেলাশাসক, জেলা সংখ্যালঘু দপ্তর ও জেলা পরিষদ সহ একাধিক সরকারি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেন। স্বাক্ষরকারীদের দাবি, আগে পুরসা হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরিষেবা তলানিতে ঠেকেছে। আর এর জন্য দায়ী করা হয়েছে ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিককে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আলোড়ন ছড়িয়ে পড়েছে। তবে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস দেন।
সূত্রের খবর, পুরষা হাসপাতালে প্রতিদিন সাত ৮০০ রোগী উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা পেতেন। এখন সেই সব বন্ধ। এই হাসপাতালে শুধুমাত্র গলসি বা পুরষা নয়, আশপাশের বেশ কয়েকটি এলাকার রোগীরা নির্ভরশীল। আগে এই হাসপাতালে বছরে ১০০০ প্রসূতি মায়ের নরমাল ডেলিভারি করানো হতো। বর্তমানে তা কমে ৬০ থেকে ৭০-এ নেমে গিয়েছে। আগে ৩টি অ্যাম্বুলেন্স থাকত, জরুরি পরিষেবা দেওয়ার জন্য। এখন প্রসূতি মায়েরা সময়ে ১০২ অ্যাম্বুলেন্স পায় না বলে অভিযোগ। এর আগে বছরে ৫০০টি স্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অপারেশন হতো। সেটাও কমে ৩০ থেকে ৪০-এ ঠেকেছে। হাসপাতালের বিএমওএইচ পায়েল বিশ্বাসকে হাসপাতালের সমস্ত অব্যবস্থার কথা বারবার বলার পরও অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি বলে দাবি গ্রামবাসীদের। এমনকি লিখিত অভিযোগে তাঁরা জানিয়েছেন, নতুন বিএমওএইচ ডাক্তার পায়েল বিশ্বাসের জন্যই পুরসা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সরকারি পরিষেবা কার্যত শিকেয় উঠেছে। ফলে জেলার নামকরা পুরসা হাসপাতালের সুনাম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পরিষেবা না পেয়ে বর্ধমানের জেলা হাসপাতালে চলে যেতে হয় এলাকার রোগীদের।
গ্রামবাসীদের অভিযোগে জানানো হয়েছে, ২০২২ সালে ৪৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল একটি লেবার রুম তৈরির জন্য। যেটি ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ হবার কথা ছিল। সেই কাজ বন্ধ হয়ে থাকলেও বিএমওএইচ কোনও উদ্যোগ নেননি। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মিশনের ৫২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি ব্লক পাবলিক হেলথ ইউনিট (ল্যাব) তৈরি করা হয়েছিল। যার ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করার পরও রোগীরা সেই ল্যাবের পরিষেবা পাচ্ছেন না। ল্যাবের কর্মীরা একবছর ধরে বসে বসে বেতন নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। এমনকি মেশিন ও যন্ত্রাংশও নাকি পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। এলাকাবাসীদের দাবি, সরকারের দেওয়া পরিষেবা থেকে তাঁরা কার্যত বঞ্চিত হচ্ছেন।
অভিযোগে জানানো হয়েছে, আগে এলাকার ৩৭ টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিত্য প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যেত। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক পায়েল বিশ্বাস আসার পর তা একপ্রকার বন্ধই হয়ে গেছে। এলাকার ভরতপুর ও লোয়া প্রাইমারি হেলথ সেন্টারে সপ্তাহে ছয়দিন ডাক্তার বসার কথা থাকলেও সেখানে ডাক্তার বাবুরা দুই দিন ডিউটি করেন। ফলে সেখানকার গরিব মানুষ সরকারি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। জানা গিয়েছে, এক সময় পুরসা হাসপাতালের নামডাক ছিল। সেই নামডাক নষ্ট হতে বসেছে। তাই এলাকার মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে বিএমওএইচ-এর অপসারণের দাবি তুললেন।
অন্যদিকে পুরসা হাসপাতালের নানান অব্যবস্থার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের করা অভিযোগের বিষয়ে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়রাম হেমব্রম জানান, ‘অভিযোগ এখনও আমি হাতে পাইনি। হয়তো অফিসে রিসিভ সেকশনে জমা পড়েছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে পর্যবেক্ষণ করে তদন্ত কমিটি তৈরি করা হবে। যদি অভিযোগের সত্যতা থাকে তাহলে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।