শ্রীনগর, ১৬ জুলাই: জম্মুর ডোডা জেলায় সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে গুলি বিনিময়ে ৫ সেনা জওয়ানের মৃত্যু। গতকাল সোমবার রাতেই ডোডার ডেসা বনাঞ্চলে ভারী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান চার সেনা ও একজন পুলিশ। ঘটনায় তাঁরা গুরুতর আহত হন। মঙ্গলবার সকালে তাঁদের মধ্যে প্রথমে তিনজন এবং পরে আরও এক সেনা আধিকারিকের মৃত্যু হয়। মৃত সেই সেনা জওয়ানরা হলেন হলেন ক্যাপ্টেন ব্রিজেশ থাপা, নায়েক ডি রাজেশ, সিপাই ব্রিজেন্দ্র এবং অজয়। পরে সঙ্কটজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও এক নিরাপত্তারক্ষীর মৃত্যু হয়। ফলে এই সেনা-জঙ্গির সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল মোট পাঁচজন। এই নিয়ে উপত্যকায় গত ৩২ মাসে শহিদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৪৮ জন।
এদিকে উপত্যকায় এখনও যৌথবাহিনীর সঙ্গে জঙ্গিদের গুলির লড়াই চলছে। গত বেশ কিছুদিন ধরেই অশান্ত উপত্যকা। গত সপ্তাহে কাঠুয়াতে জঙ্গি হামলায় পাঁচজনের মৃত্যুর পর এটাই দ্বিতীয় বড় হামলা। প্রসঙ্গত গত ৮ জুলাই কাঠুয়াতে সেনার কনভয়ে হামলায় মৃত্যু হয় ৫ জওয়ানের। ১১-১২ জুনের মধ্যে একটি অভিযানে ৬ জওয়ান আহত হন সন্ত্রাসবাদীদের হামলায়। আবার ৯ জুন জঙ্গি হামলায় পুণ্যার্থী বোঝাই একটি বাস খাদে পড়ে যায়। সেই ঘটনায় নিহত হন ৯ জন, আহত হন ৩৩ জন। গত ৪ মে পুঞ্চ জেলায় সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে শহিদ হন বায়ুসেনার এক জওয়ান।
জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন জেলায় প্রবেশ করে হামলা চালাচ্ছে জঙ্গিরা। সেই হামলার মোকাবিলায় সক্রিয় যৌথ বাহিনীর জওয়ানরা। ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় একজন প্রতিরক্ষা মুখপাত্র বলেন,”রাতে প্রায় ৯টার দিকে সন্ত্রাসবাদীদের মুখোমুখি হয় নিরাপত্তারক্ষীরা। জঙ্গিরা ভারী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা করে। ঘটনার তাৎক্ষণিক রিপোর্ট, আমাদের সাহসী হৃদয়ে আঘাত হেনেছে।”
জানা গিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যায় গোপন সূত্রে খবর পেয়ে গোটা উরারবারির দেশা জঙ্গলে জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে যৌথ বাহিনীর নিরাপত্তারক্ষীরা। রাষ্ট্রীয় রাইফেলস ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা সেই অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। জঙ্গিদের হদিশ মিলতেই শুরু হয়ে যায় লড়াই। প্রথমে নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানরা গুলি চালাতে শুরু করে। বেগতিক বুঝে জঙ্গিরাও পাল্টা এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে থাকে। সেই গুলিতে গুরুতর জখম হন পাঁচ জওয়ান। ঘটনার দায় স্বীকার করেছে কাশ্মীর টাইগার্স। পাকিস্তানের মদতপুষ্ট এই সংগঠনটি জইশ-ই-মহম্মদের শাখা সংগঠন বলে পরিচিত।
এই জঙ্গি হামলায় শহিদ সেনা আধিকারিক ব্রিজেশ থাপা বাংলার বাসিন্দা। তাঁর বাড়ি দার্জিলিংয়ে। মঙ্গলবার সেই শহিদ ক্যাপ্টেন ব্রিজেশের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও ঘটনার পর ২৭ বছর বয়সী সেনা ক্যাপ্টেন ব্রিজেশ থাপার বাবা এর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘দেশের জন্য ছেলে শহিদ হয়েছে। কষ্ট হচ্ছে। তবে কোনও আক্ষেপ নেই।’