দিল্লি, ১৩ জুলাই– লোকসভা ভোট থেকে শুরু হওয়া মোদি সরকারের বিদায়ের ঘণ্টা বিধানসভা ভোটে জোরদার হয়ে বাঁচতে শুরু করল৷ তার আওয়াজ শোনা গেল পশ্চিমবঙ্গ-সহ সাতটি রাজ্যের ১৩টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে৷ যেখানে দুর্দান্ত ফল করছে ইন্ডিয়া জোট৷ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে শনিবার যে ফল বেরিয়েছে তাতে বিরোধী পক্ষ ইন্ডিয়ার কাছে ভরাডুবি ঘটেছে এনডিএর৷ আগামী কয়েক মাসের মধ্যে একাধিক রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে৷ তার আগে এনডিএ জোটের বড় ধাক্কা নিঃসন্দেহে গেরুয়া শিবিরে আতঙ্কের সঞ্চার করবে৷ এখনও পর্যন্ত পাওয়া হিসেব বলছে ১১টি আসনেই জয়লাভ করছে বিরোধীরা৷ সেখানে বিজেপির জয়ী হয়েছে হিমাচল প্রদেশের হামিরপুর এবং মধ্যপ্রদেশের চিঞ্চওয়াড়া৷ নীতীশ কুমারের জেডিইউ জিতেছে একটিতে৷ অর্থাৎ সব মিলিয়ে এনডিএ ২, ইন্ডিয়া জোট ১১৷
উল্লেখ্য মাত্র দুটি আসনে বিজেপি প্রার্থী জিতেছে তা হল মধ্য প্রদেশের চিঞ্চওয়াড়া আসনে বিজেপির প্রার্থী কমলেশ প্রতাপ শাহ ১ হাজার ৭৪৭ আসনে এগিয়ে রয়েছেন৷ আর হামিরপুর আসনে আশীষ শর্মা মাত্র ১ হাজার ৫৭১ ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন৷
সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলই বলছে, দিল্লি ও বাংলা দু’জায়গাতেই বিজেপির কোমর ভেঙে গেছে৷ এ রাজ্যে ১৮ থেকে কমে তারা এখন ১২-তে এসে ঠেকেছে৷ আর দিল্লিতেও মোদি সরকার আর নেই৷ পশ্চিমবঙ্গের চারটি সহ দেশের বাকি ৯টি কেন্দ্রের বেশিরভাগেই কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, ডিএমকে প্রার্থীরা জিতে গিয়েছেন৷ দু-একটি বিধানসভায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চললেও শেষ পর্যন্ত চওড়া হাসি হেসেছে বিরোধীরাই৷
লোকসভা নির্বাচনে যেখানে বিজেপির টার্গেট ছিল ৩৫০ আসন সংখ্যা পার, সেখানেই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার মার্জিনও পার করতে পারেনি গেরুয়া শিবির৷ ২৪২টি আসনে থেমেছিল বিজয়রথ৷ এনডিএ-র জোট শরিকদের নিয়ে সরকার গঠন করেছে তৃতীয়বার৷ তবে যে ধাক্কা এবার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপি পেল তাই যে ভবিষ্যতে বিজেপির পথ আরও পিচ্ছিল করে দিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ যদিও এই ভরাডুবির কোনও প্রতিক্রিয়া লেখা পর্যন্ত বিজেপির তরফে পাওয়া যায় নি৷ অন্যদিকে গোটা দেশ জুড়ে বিজয় উৎসব শুরু হয়েছে ইন্ডিয়া শিবির জুড়ে৷
নির্বাচন কমিশনের হিসাব বলছে, ইন্ডিয়া জোটের কংগ্রেস ৪টি, ৪টিতে তৃণমূল, ডিএমকে এবং আপ একটি করে আসনে জিতেছে৷ অন্যদিকে, হিমাচল প্রদেশের হামিরপুরে বিজেপির এবং মধ্যপ্রদেশের অমরওয়ারায় সামান্য ভোটে জিতেছে বিজেপি৷
উপনির্বাচনের ফলাফল বলে দিচ্ছে, ইন্ডিয়া-এনডিএ জোটের শক্তির লড়াইয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে গোহারা হয়েছে মোদি-শাহ জুটি৷ ১১-২ ফলাফলে হারছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট৷ বাংলার রায়গঞ্জ, রানাঘাট দক্ষিণ, বাগদা ও কলকাতার মানিকতলায় প্রত্যাশা বজায় রেখে জিতেছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ অন্যদিকে, পাঞ্জাবের জলন্ধর পশ্চিম কেন্দ্রে জিতেছেন আম আদমি পার্টির প্রার্থী মহিন্দর ভগৎ৷ তিনি তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের সুরিন্দর কৌরকে হারিয়েছেন৷ উল্লেখ্য, পাঞ্জাবে কংগ্রেস-আপের আসন সমঝোতা হয়নি৷ বিজেপি এখানে তৃতীয় স্থানে৷
হিমাচল প্রদেশের তিনটি কেন্দ্রেই এগিয়ে ছিলেন কংগ্রেস প্রার্থীরা৷ মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখুর স্ত্রী কমলেশ ঠাকুর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির হোশিয়ার সিংকে হারিয়ে দিয়েছেন৷ নালাগড় কেন্দ্রেও কংগ্রেস প্রার্থী হরদীপ সিং বাওয়া বিজেপির কেএল ঠাকুরকে হারিয়েছেন৷
উত্তরাখণ্ডের বদ্রীনাথ ও মঙ্গলৌর দুটি কেন্দ্রেই জিতেছে কংগ্রেস৷ বদ্রীনাথে কংগ্রেসের লাখপত সিং বুটোলা বিজেপির রাজেন্দ্র ভাণ্ডারী হারিয়ে দিয়েছেন৷ তামিলনাড়ুতে এমকে স্ট্যালিনের ডিএমকে প্রার্থী আন্নিয়ুর শিবা বিক্রাবন্দি কেন্দ্রে ২৫ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে রয়েছেন৷ বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের অমরওয়ারায় বিজেপি প্রার্থী কমলেশপ্রতাপ শাহ কংগ্রেস প্রার্থী ধীরেন শাহের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়৷ শেষপর্যন্ত কমলেশ ১৫৫৬ ভোটে জিতে যান৷
বিহারের রুপৌলি কেন্দ্রে এনডিএ জোটের জেডিইউ প্রার্থী কলাধরপ্রসাদ মণ্ডল সাডে় ৬ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে থাকলেও শেষের দিকে পিছিয়ে পডে়ন৷ এখানে ইন্ডিয়া জোট প্রার্থী রাষ্ট্রীয় জনতা দলের বিমা ভারতী পিছিয়ে পডে়ছেন৷ নির্দলের শঙ্কর সিং দ্বিতীয় স্থানে থেকেও পডে় মেকআপ দিয়ে কিছু ভোটে এগিয়ে রয়েছেন৷
হিমাচল প্রদেশের দেহরা বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী হোশিয়ার সিংহের তুলনায় সাত হাজারেরও বেশি ভোটে এগিয়ে সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিংহ সুখুর স্ত্রী কমলেশ ঠাকুর৷ ২০২২ সালের বিধানসভা ভোটে ওই কেন্দ্রে কংগ্রেস এবং বিজেপি প্রার্থীকে হারিয়ে জিতেছিলেন হোশিয়ার৷ গত বছর বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়ে তিনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় ওই আসনে উপনির্বাচন হচ্ছে৷
উত্তরাখণ্ডের বদ্রীনাথের কংগ্রেস বিধায়ক রাজেন্দ্র সিংহ ভান্ডারি ইস্তফা দিয়ে ওই আসনে উপনির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন৷ ওই রাজ্যের মঙ্গলৌরে বিএসপি বিধায়কের মৃতু্যর কারণে উপনির্বাচন হচ্ছে৷ তামিলনাড়ুর বিক্রবন্দীতে ডিএমকে বিধায়কের মৃতু্য এবং পঞ্জাবের জালন্ধর পশ্চিমে আপ বিধায়ক শীতল অঙ্গুরল রিঙ্কুর বিজেপিতে যোগদানের ফলে উপনির্বাচন হচ্ছে বুধবার৷ এ বার ভোটে রিঙ্কু লড়ছেন বিজেপির টিকিটে৷
হিমাচল প্রদেশের দেহরা, হামিরপুর এবং নালাগডে়র তিন নির্দল বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে জনপ্রতিনিধিত্ব সংশোধনী আইন মেনে ইস্তফা দিয়েছিলেন৷ তাই সেখানে ভোট হয়েছে৷ দেহরায় কংগ্রেস প্রার্থী করেছে সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিংহ সুখুর স্ত্রী কমলেশকে৷ বিহারের রুপৌলীর জেডিইউ বিধায়ক বিমা দেবী আরজেডিতে যোগ দেওয়ায় এবং মধ্যপ্রদেশের অমরওয়াড়ার কংগ্রেস বিধায়ক কমলেশ প্রতাপ শাহ বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় সেখানে আবার ভোট৷
বাংলার পাশাপাশি দেশের অন্য ছ’টি রাজ্যেও বিধানসভা উপনির্বাচনে ধাক্কা খেতে চলেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ৷ এগিয়ে কংগ্রেস-সহ ‘ইন্ডিয়া’র শরিকেরা৷ পশ্চিমবঙ্গের চারটি বিধানসভার পাশাপাশি দেশের আরও ছ’টি রাজ্যের যে ন’টি বিধানসভায় ভোট হয়েছিল, তার মধ্যে বিজেপি একটি এবং তার জোটসঙ্গী জেডি(ইউ) একটি আসনে এগিয়ে রয়েছে৷ কংগ্রেস পাঁচটি এবং আম আদমি পার্টি একটিতে এগিয়ে৷ হিমাচলের হামিরপুর এবং রুপৌলিতে এগিয়ে বিজেপি এবং জেডিইউ৷