সীতারাম মুখোপাধ্যায়, আসানসোল: বর্ষার মরসুমে ডেঙ্গি-আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তাই বাড়ি বাড়ি ‘সার্ভে’ করছিলেন পুরকর্মীরা। সেই কাজের উদ্দেশ্যে একটি পরিত্যক্ত আবাসনে গিয়ে থমকে যান তাঁরা। একটি গোঙানির শব্দ শুনে আবাসনের ভিতরে ঢুকে চোখ কপালে ওঠে তাঁদের। দেখেন, ভাঙা খাটে হাত-পায়ে দড়ি বাঁধা অবস্থায় শুয়ে এক বৃদ্ধ। দু’চোখ কান্নায় ভরা। শুক্রবার পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের জয়দেব অ্যাভিনিউ এলাকার এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই বৃদ্ধের নাম মাগারাম ঘোষ। অশীতিপর বৃদ্ধের তিন ছেলে। এক জন ইস্পাত কারখানার কর্মী। দুই ছেলে বেসরকারি সংস্থার কর্মী। দুর্গাপুরেই অন্যত্র বাস করেন তাঁরা। কিন্তু, অসুস্থ এবং বৃদ্ধ বাবার জায়গা হয়নি কারও বাড়িতে। ছেলেরা তাঁদের বাবাকে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার একটি পরিত্যক্ত আবাসনের মধ্যে খাটে শুইয়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে চলে যান তাঁর নিরাপত্তার কথা ভেবে! এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে এলাকায়। এলাকার জনপ্রতিনিধিদেরও কোপে পড়েন ওই তিন ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, সকালে দুর্গাপুর নগর নিগমের স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়েছিলেন ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতার জন্য। তখনই অমানবিক ঘটনা নজরে আসে তাঁদের। খবর যায়, প্রাক্তন কাউন্সিলর মণি দাশগুপ্তের কাছে। তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে বৃদ্ধের বড় ছেলে দয়াময় ঘোষকে ডেকে পাঠান। তাঁকে ভর্ৎসনা করেন। খবর দেওয়া হয় দুর্গাপুর থানার পুলিশকেও। তার মধ্যে পরিত্যক্ত আবাসনে ভিড় জমে যায়। এলাকাবাসীরাও ভিড় জমান। অসুস্থ বৃদ্ধের হাত-পায়ের দড়ি খুলে উদ্ধার করে নিয়ে যান স্বাস্থ্যকর্মীরা।
বৃদ্ধের বড় ছেলে দয়াময়ের যুক্তি, ‘‘বাবা এখানেই থাকতেন। সেইজন্য এখানেই রাখা হয়। বাবার চিকিৎসা হয়েছিল। তাই খাট থেকে যাতে পড়ে না যান, সেই জন্য দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। আমি নিয়মিত আসি। বাবার দেখভাল করি। সংসারের অবস্থা খারাপ হওয়ায় বাবাকে ওই আবাসনে রাখা হয়েছে।’’ তিনি এতে ‘অমানবিক’ কিছু দেখছেন না। যদিও প্রাক্তন কাউন্সিলর মণির মন্তব্য, ‘‘এরকম নির্মম দৃশ্য আগে দেখিনি। মাগারামবাবু খুব ভাল মানুষ বলে এলাকায় পরিচিত। কিন্তু বৃদ্ধের ছেলেরা যে বাবার সঙ্গে এরকম ব্যবহার করবেন, সেটা কল্পনাও করতে পারিনি।’’ তিনি জানান, পুলিশকে তাঁরা ঘটনার কথা জানিয়েছেন। প্রয়োজনে বৃদ্ধের ছেলেদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করবেন। তাঁর সংযোজন, ‘‘এই রকম ঘটনা যাতে সমাজে না ঘটে, সেই নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।’’