• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

কাশ্মীর প্রশ্নে ভারতের পাশে দাঁড়াল রাশিয়া

জম্মু ও কাশ্মীর থেকে বিশেষ মর্যাদা খর্ব করার পর কাশ্মীরে গণতন্ত্র বিপন্ন প্রমাণ করতে বিষয়টি রাষ্ট্রসংঘ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায় পাকিস্তান।

ভ্লাদিমির পুতিন ও নরেন্দ্র মোদি। (Photo: Twitter | @narendramodi)

জম্মু ও কাশ্মীর থেকে বিশেষ মর্যাদা খর্ব করার পর কাশ্মীরে গণতন্ত্র বিপন্ন প্রমাণ করতে বিষয়টি রাষ্ট্রসংঘ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায় পাকিস্তান। কাশ্মীর ইস্যুটি আন্তর্জাতিক নয়, দ্বিপাক্ষিক বলে আমেরিকা, ব্রিটেনের মতাে সেই সময় জানায় রাশিয়াও, মান্যতা দেওয়া হয় ভারতের দাবিকে। দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর রাশিয়া সফরে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি ।

রাশিয়ার ভলাদিভস্তকে অনুষ্ঠিত ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামে যােগ দেবেন মােদি। এদিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে পার্শ্ববৈঠকে মিলিত হলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি। উষ্ণ অভ্যর্থনায় মােদিকে স্বাগত জানান পুতিন। বৈঠকের পর যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে যােগ দেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান।

এদিন পাকিস্তানের নাম না করেও প্রতিবেশি দেশকে আক্রমণ করার সুযােগ ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী। কৌশলে বুঝিয়ে দিলেন কাশ্মীর ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক বিষয়, সেখানে কোনও তৃতীয় পক্ষের জায়গা নেই। রাশিয়ার সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান অর্ডার অফ সেন্ট অ্যান্ড্রু দ্য অ্যাপােস্টল দেওয়া হয় মােদিকে। রাশিয়ার সমগ্র জাতিকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মােদি বলেন, এটা ভারতের ১৩০ কোটি মানুষের কাছে গর্বের বিষয়। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভলাদিমির পুতিনকে পাশে বসিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি জানালেন, কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের হস্তক্ষেপে বিশ্বাসী নয় ভারত ও রাশিয়া।

জলপথে মস্কোর সঙ্গে সংযোগ বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, চেন্নাইয়ের ও ভলাদিভস্তকের মধ্যে একটি স্থায়ী জলপথ তৈরি করতে চায় ভারত। জলপথে পণ্য পরিবহণে সময় বাঁচাতে এই নতুন পথ তৈরির প্রয়ােজন রয়েছে। এই জলপথ তৈরি হলে চেন্নাই থেকে ভলাদিভস্তকে পণ্য পরিবহণে সময় লাগবে ২৪ দিন। এখন ভারত থেকে পূর্ব রাশিয়ায় পণ্য পরিবহণ সময় লাগে ৪০ দিন। এতে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের অর্থনীতির উন্নতিতে গতি আসবে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, মহাকাশ গবেষণা, তেল ও গ্যাস সংযােগ সহ বিভিন্ন বিষয়ে দিল্লির সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক উন্নত করার বিষয়ে আলােচনা হয়। ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে ১৫টি মউ স্বাক্ষরিত হয়। মােদি জানিয়েছেন, গগনায়ন অভিযানের জন্য ভারতের মহাকাশচারীদের প্রশিক্ষণ দেবে রাশিয়া।

রুশ প্রেসডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সাংবাদিকদের কাছে জানান, ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্ক কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তামিলনাড়ুর কুকুলমে পরমাণু চুল্লির নির্মাণের ক্ষেত্রে সহযােগিতা করছে মস্কো। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ভালাে বন্ধু বলে সম্বােধন করেন। ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার বন্ধুত্ব শুধুমাত্র রাজধানীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এই সম্পর্কের সঙ্গে দুই দেশের মানুষকে যুক্ত করা হবে বলে জানান।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদিকে বিমানবন্দরে ‘গার্ড অফ অনার’ দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান প্রেসিডেন্ট। সেখানে পৌঁছেই প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মােদি বেরিয়ে পড়েন ভেজদা শিপবিল্ডিং কমপ্লেক্সের উদ্দেশে। শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ এবং কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন নমাে। নরেন্দ্র মােদির সঙ্গে সৌজন্য বজায় রাখতেই এদিন তাঁকে সঙ্গে নিয়ে ভেজদা শিপবিল্ডিং কমপ্লেক্স যান পুতিন। তাঁর সহযােগী ইউরি উষাখােভ জানিয়েছেন, ‘এখান থেকেই আগামীদিনে রাশিয়ার তেল এবং তরল প্রাকৃতিক গ্যাস পাঠানাে হবে ভারত সহ অন্যান্য বিশ্ব বাজারে’। ভেজদা শিপইয়ার্ড তৈরি হচ্ছে ফার ইস্টার্ন শিপবিল্ডিং অ্যান্ড শিপ রিপেয়ার সেন্টারের বেসে। এর দায়িত্বে রয়েছে রসনেট, রসনেফতেগাজ এবং গাজপ্রমব্যাঙ্ক। এখানে তৈরি হবে ভারী টোনেজ জাহাজ, অফসাের প্ল্যাটফর্ম এলিমেন্ট এবং প্রয়ােজনীয় সামুদ্রিক সরঞ্জাম।

পুতিনের দেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি দাবি করেন, তাঁর এই রাশিয়া সফর দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘নতুন শক্তি এবং গতি’ দেবে। তিনিই প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যিনি রাশিয়ার সুদুর পূর্ব অঞ্চল পরিদর্শন করলেন। আমার কাছে তাে মনে হয় প্রকৃতি নিজেই এই দটি দেশকে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। উদাহরণ হিসাবে বলতে পারি, প্রতি ডিসেম্বর মাসেই সাইবেরিয়ান সারসগুলি আমার জন্মস্থান গুজরাতে উড়ে যায়। তাদের কাছে এ যেন এক বেড়ানাের জায়গা। সাইবেরিয়ান সারসগুলি এখান থেকে গুজরাতে উড়ে যায়, আবার বহু ভারতীয়ও সুদূর প্রাচ্যে যান। তাই এ যেন এক প্রাকৃতিক সংযােগ, রাশিয়ার তাস সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি।

আমেরিকার সতর্কবাণী সত্ত্বেও এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম কিনতে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হল ভারত। বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী মােদি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে ভেজদা শিপবিল্ডিং কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী মােদি মঙ্গলবার জানান, ‘কম দামে সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন করার লক্ষ্যে দিল্লি ও মস্কোর মধ্যে পারস্পরিক সমঝােতা করে ভারতে স্বল্প উৎপাদন ব্যয়ের সুবিধা নেওয়া দরকার। আজ যদি প্রযুক্তিগুলি স্থানান্তরিত হয় তবে সামরিক সরঞ্জামের উৎপাদন ভারতে সস্তা হতে পারে এবং আমরা এই অস্ত্রগুলি খুব কম দামে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে সরবরাহ করতে সক্ষম হব। ভারত এবং রাশিয়ার এই সুযােগটি কাজে লাগানাে দরকার।

রাশিয়া থেকে এক টুইট বার্তায় প্রধানমন্ত্রী মােদি তাঁর সাক্ষাৎকারের লিঙ্কটি শেয়ার করেছেন যেখানে তিনি ভারত-রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের কথা জানান। ‘ব্যাঘ্রপ্রেমী ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বাঘ সংরক্ষণ নিয়ে আলােচনা করার পরিকল্পনা করেছেন। আমাদের সম্পর্কের একটা বিশেষ রসায়ন রয়েছে, বিশেষ স্বাচ্ছন্দ্য রয়েছে, রােসিস্কায়া গ্যাজেটা সংবাদপত্রকে বলেন প্রধানমন্ত্রী মােদি।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রপতি পুতিনের সঙ্গে প্রতিটি বৈঠকের পর আমরা আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছি এবং আমাদের সম্পর্ক ক্রমশই গাঢ় হচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের আমন্ত্রণেই সে দেশে গেছেন প্রধানমন্ত্রী মােদি। রাশিয়া সফরে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী জানান, আমি আমার বন্ধু প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্বের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে আলােচনা করারও অপেক্ষায় রয়েছি।