নিজস্ব সংবাদদাতা,পশ্চিম মেদিনীপুর: সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন অবৈধ জায়গা দখল ও হকার উচ্ছেদে। এরই সঙ্গে তিনি জমি মাফিয়া ও অবৈধ প্রোমোটারিতে কড়া বার্তা দিয়েছেন। একদিকে যখন খোদ মুখ্যমন্ত্রী কড়া বার্তা দিচ্ছেন, তখন অন্যদিকে মেদিনীপুর সদরে নিজের নামে কাগজপত্র এবং কোর্টের অর্ডার থাকা সত্ত্বেও রাতারাতি সেই জায়গা বিক্রি করে দিল শাসক দলের প্রভাবশালী নেতা ও জমি মাফিয়ারা। এমনই অভিযোগ ইউসুফ আলী নামে এক ব্যক্তির। যা নিয়ে প্রশাসন ও নবান্নের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন জমি হারা চাষী ইউসুফ আলী।
ইউসুফের অভিযোগ অনুযায়ী, এক সময় জামকুন্ডা মৌজার ধর্মা এলাকা তখন ঠিকভাবে গড়ে ওঠেনি।আর এই জামকুন্ডা মৌজায় প্রায় ১১ একর ৩২ ডেসিমেলের মালিক ছিলেন দাউদ আলী।এতে যেমন চাষের জমি ছিল তেমনি কিছুটা ছিল বাস্তু।কিন্তু এরপর আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে গন্ডগোলের জেরে এই জমি কার দখলে থাকবে তাই নিয়ে কোর্টে মামলা হয়,৮৪ সালে।দীর্ঘ ৩০ বছর সেই মামলা চলার পর অবশেষে ২০১৫ সালের শেষ দিকে দাউদ আলীর হয়ে রায় দেয় হাইকোর্ট।সেই সঙ্গে অবিলম্বে সেই জায়গা যারা দখল করে আছে তাদের সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয় প্রশাসন কে।কিন্তু এই দীর্ঘ 30 বছরের মামলা লড়াইয়ের মধ্যিখানে এই প্রভাবশালী জমি মাফিয়ারা যারা বর্তমানে শাসক দলের ছত্র ছায়ায় রয়েছে তারা রীতিমত প্লট কেটে কেটে বিক্রি করে দেয় বিভিন্ন ব্যক্তিকে।এই একরের পর একর জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছে পেট্রোল পাম্প,আনন্দ বিনোদনের জন্য জলসাঘর,বিভিন্ন বড় বড় বিল্ডিং এবং ঘরবাড়ি।এই ঘটনায় নিজের জায়গা কি ভাবে পাবে তা ভাবতে ভাবতে আতঙ্কিত এবং হতাশাগ্রস্থ হয়ে মৃত্যু হয় দাউদ আলির।পিতার জায়গাকে ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে এবার রাস্তায় নামে তার ছেলে ইউসুফ আলী।পিতার মৃত্যুর শোক আর অন্যদিকে নিজেদের পৈত্রিক সম্পত্তি ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে তিনি জায়গায় এসে দেখেন তাদের জমি জমা কিছুই নেই। উপরন্ত কোর্টের রায় দেখালে তা কিছুতেই মানছে না জায়গা ঘিরে রাখা মানুষ জনেরা।
এরপর জায়গা ফিরে পেতে তিনি একের পর এক ভূমি দপ্তর,সদর মহকুমা শাসক, জেলাশাসক, পুলিশ সুপার এমনকি তিনি নবান্ন কেও চিঠি করেন।কিন্তু তাতেও জায়গা উদ্ধার হয়নি।এরই মধ্যে ইউসুফ আলী কে একপ্রকার হুমকি দিতে থাকে জোর করে দখল করে রাখা এই অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বলে অভিযোগ তার।যদিও এই অভিযুক্তরা কালু কাজী, মনির কাজী,রবিউল কাজী,মীর এশাক আলী, সাফিরুদ্দিন কাজী,গিয়াসউদ্দিন আলী,আসগর আলী সহ অন্যান্যরা।যাদের মধ্যে অনেকেই বর্তমানে শাসক দলের বিভিন্ন পদে রয়েছেন।এই অবস্থায় নিজের জায়গা ফিরে পাবার জন্য সংবাদ মাধ্যমের পাশাপাশি ফের নতুন করে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে ছেলে ইউসুফ।যদিও এই ঘটনায় কড়া ভূমিকা নিয়েছে শাসক দল।এই নিয়ে ইউসুফ আলী তার বক্তব্যে বলেন,”বাবার পৈত্রিক সম্পত্তি অথচ কিছু জমি মাফিয়া ভূমি দপ্তরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাতারাতি এই জায়গা অন্যের নামে বিক্রি করে দিয়েছে।বহু জায়গায় আবেদন নিবেদন করেছি আমি এখন চাই আমার এই জমি উদ্ধার করে দিক পুলিশ প্রশাসন ও সরকার।
অন্যদিকে যাদের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ তাদের এ বিষয়ে ফোনে জানতে চাওয়া হলে তারা জানায় তারা কোনভাবেই সংবাদমাধ্যমের সামনে আসবে না। তাদের এও বক্তব্য যদি আদালত তাদের ডেকে পাঠায় বা পুলিশ প্রশাসন ডাকে তখন তারা গিয়ে বিষয়টি জানাবে।
এ বিষয়ে জেলার জেলাশাসক ক্যামেরার সামনে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।তবে তিনি একপ্রকার বক্তব্যে জানান যেন এই জমি হারা ব্যাক্তি বিষয়টি নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হয় এবং অভিযোগ জানায়।
যদিও এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে খোদ শাসক দল।তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং ঘোষণা করেছেন এই জমি মাফিয়া এবং হকার উচ্ছেদ নিয়ে।এর উপরে আমাদের কিছু বলার নেই।তবে এক্ষেত্রে যদি দলের কেউ জড়িত থাকে দলগতভাবে অবশ্যই তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।