প্রকৃতির গুণ বলুন আর দোষ বলুন৷ হাঁফিয়ে উঠলেই নিজের খেয়ালে হাঁটা শুরু করে৷ শুরু হয় নানান বিপদ৷ এই যেমন ঝড়, বন্যা, ভূমিকম্প৷ সেদিক থেকে দেখলে মানুষের কুকর্মের দায়ে আমাদের ধরাও এখন বেশ ক্লান্ত৷ আর তাই সে এবার উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করবে বলেই খবর৷
সম্প্রতি ‘নেচারে’ প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে হইচই পডে়ছে বিজ্ঞান পাড়ায়৷ তাঁরা নাকি পৃথিবীকে নিয়ে বেশ চিন্তিত৷ পৃথিবীর ভূগর্ভকে ভাগ করলে, প্রথম ভূত্বক যাকে ম্যান্টল বলা হয়৷ প্রায় ২৯০০ কিলোমিটার পুরু৷ তারপর লিকুইড আউটার কোর থাকে, যেটি প্রধানত লোহা এবং নিকেল ধাতুর তরল স্তর৷ ২২৬০ কিলোমিটার পুরু৷ ইনার কোর এবং ভূত্বকের মাঝামাঝি যার অবস্থান৷ আর শেষে হল ইনার কোর৷ যেটি একদম কঠিন গোলাকার বস্তু৷ এই স্তরকেই আর একটি ‘পৃথিবী’ বলা যেতে পারে৷ ১২২০ কিলোমিটার ব্যস এবং পৃথিবীর ২০ শতাংশ জায়গা জুডে় যার অবস্থান৷ যত কাণ্ড এই ইনার কোরকে নিয়ে৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ইনার কোরই এখন বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে৷
তার আগে একবার বুঝে নিই, এই ইনার-কোরের কাজ কী? ইনার কোর নিয়ে বিজ্ঞানীদের হাতে তেমন কোনও তথ্য নেই৷ অধিকাংশই অনুমান ভিত্তিক৷ কারণ, এই ইনার কোর এত ভিতরে অবস্থান, পৃথিবীকে ফুটো করেও অতদূর পর্যন্ত পৌঁছনো সম্ভব হয়নি৷ আমাদের যতটা দৌড় মহাকাশে, ততটাই পৃথিবীর ভূগর্ভে৷ তাই এই বিষয়ে বেশিরভাগটাই সাদা পাতা৷ তবে, ভূতরঙ্গ এবং ভূচৌম্বকের উপর নির্ভর করে এই ইনার কোর সম্পর্কে কিছুটা ধারণা করতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা৷ মনে করা হয়, লিকুইড আউটারের মতোই ইনার কোর লোহা আকরিক-নিকেল সহ অন্যান্য ধাতু দিয়ে তৈরি, তবে কঠিন জাতীয়৷ এর তাপমাত্রা প্রায় ৫৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ সূর্যের উপরিতলের তাপমাত্রার কাছাকাছি৷ বুঝতে পারছেন, পৃথিবীর বুকের ভিতর কতটা আগুন জ্বলছে৷
এই ইনার কোর কিন্ত্ত পৃথিবীর মতোই বনবন ঘোরে৷ আপনি বলবেন, পৃথিবী যদি ঘোরে তো সবাই ঘুরবে, এতে নতুন কী আছে৷ না, পৃথিবীর সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে ঘোরার দিব্যি ইনার কোরের নেই৷ যে নিজের ইচ্ছে মতো ঘোরে৷ ১৯৩৬ সালে ডেনমার্কের ভূবিজ্ঞানী ইঞ্জে লেহমান ইনার কোরের ঘোরা নিয়ে প্রথম আলোকপাত করেন৷ এরপর প্রচুর গবেষণা হয়৷ ইনার কোরের ঘোরা নিয়ে নানা মুণির নানা মত রয়েছে৷ অস্ট্রেলিয়ার জেমস কুক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌতবিজ্ঞানী এবং প্রফেসর লরেন ওয়াজেক বলেন, ইনার কোর সম্পর্কে এতই কম তথ্য রয়েছে, তাই কোনও কিছু সিদ্ধান্তে আসা বড় কঠিন৷ ১৯৭০ এবং ১৯৮০ সাল থেকে ইনার কোর সম্পর্কে অল্প বিস্তর জানা যায়৷ এখনও পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন ইনার কোর নিয়ে৷
কিছু বিজ্ঞানী মনে করছেন, এই ইনার কোর একটা সময় পৃথিবীর থেকেও দ্রুত ঘুরেছে৷ এখন অনেকটাই ধীরে ঘুরছে৷ একটা সময় পৃথিবী এবং ইনারকোরের ঘূর্ণন সমান-সমান ছিল৷ গত ১২ জুন নেচার পত্রিকায় ইনার কোরের এই মন্থর গতিতে সিলমোহর দেয়৷ ২০২৩ সালে এই বিষয়ে যে গবেষণা পত্র জমা পডে়, তাতে অনেক বিজ্ঞানীর ধারণা, এই ইনার কোর ৭০ বছর অন্তর অন্তর গতি পরিবর্তন করে৷ তবে, এটাও বিজ্ঞানীরা মেনে নিচ্ছেন, মাত্র ২০ বছরের তথ্য নিয়ে এই সিদ্ধান্তে এখনও উপনীত হওয়া যায় না, কিন্ত্ত লক্ষণ মোটেই ভাল নয়৷ ইনার কোর যদি মন্থর গতি কিংবা উল্টো ঘুরতে শুরু করে অবশ্য পৃথিবীর আহ্নিক গতিতে প্রভাব পড়তে পারে৷ দিন আরও ছোট হয়ে যেতে পারে৷