আমরা অনেক সময়ই বুঝতে পারি না যে আমাদের মুখে বিশ্রী দুর্গন্ধ হচ্ছে৷ অনেক ক্ষেত্রে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখিও পড়তে হয় তার জন্য৷ মুখে বাজে গন্ধ অনেকেরই হয়ে থাকে৷ এমন সমস্যায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়৷ বন্ধু-সঙ্গীরা মুখ ফিরিয়ে নেয় অনেক সময়৷ এমন জটিল সমস্যার সহজ সমাধান আছে৷ এ সম্পর্কে যুগান্তরে লিখেছেন ডা. অনুপম পোদ্দার৷
মুখে দুর্গন্ধ কেন হয়
* খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন
* শারীরিক কিছু রোগ এবং মুখ ও দন্ত রোগের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা
* সঠিক পদ্ধতিতে দন্ত পরিচর্যা৷
* দীর্ঘসময় ধরে না খেয়ে থাকা৷
* মুখের থুথু কমে যাওয়া- থুথু মুখের ব্যাকটেরিয়ার প্রজনন বন্ধ করে কিন্ত্ত কোন কারণে অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে থুথুর পরিমাণ কমে যাওয়ায় ব্যাকটেরিয়াগুলোর দ্রুত প্রজনন হয়ে থাকে, যা দুর্গন্ধের কারণ হয়৷
* যেসব খাবার মুখের পানিশূন্যতা সৃষ্টি করে, তা বেশি খাওয়া৷
* কম জল পান করায়
* দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারি বেশ কিছু খাবার যেমন, পেঁয়াজ, রসুন, মাছ-মাংস সেগুলো খাওয়া৷
* নিয়মিত নিয়মমতো মুখ ও দাঁতের পরিচর্যা না করা৷
* কিছু কিছু শারীরিক সমস্যা থাকা যেমন- নিয়ন্ত্রণহীন ডায়াবেটিস, পেটের পীড়া, লিভারের সমস্যা, টনসিলজনিত সমস্যা ইত্যাদি৷
* মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার অভ্যাসগত সমস্যা৷
* দীর্ঘ সময় কিছু না খাবারের কারণে ও জিহ্বা পরিষ্কার না করার কারণে জিহ্বার উপর সালফারের প্রলেপ পড়ে মুখে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়৷
কী করবেন
মুখের এ দুর্গন্ধ থেকে বাঁচতে আমরা যেসব ব্যবস্থা নেব-
* দৈনিক কম করে হলেও ৩ থেকে ৪ লিটার গ্লাস জল খেতে হবে৷
* ফলমূল, শাকসবজি, দইজাতীয় খাবার বেশি করে খাওয়া উচিত৷
* লেবু, জাম্বুরা, কমলা, কামরাংগা, মাল্টা ও আনারসের শরবত পান করা৷
* গাজর, শসা, টমেটো, আমড়া ও আমলকি ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখা৷
* মুখ ও দাঁতের সঠিক পরিচর্যা করা৷ খাবারের পর ৩০-৬০ মিনিট আমাদের অপেক্ষা করতে হবে, ব্রাশ করার জন্য যেন প্রাকৃতিক উপায়ে থুথুর মাধ্যমে খাদ্য পরিষ্কার হয়ে যেতে পারে ও মুখের নরমাল পিএইচ বহাল থাকে৷ খাবারের পরপরই মুখের পিএইচ এসিডিক থাকে, খাবার পর থুথু প্রথম মুখের পিএইচ নরমাল করে৷ তাই খাবারের পরপরই দাঁত ব্রাশ করার ফলে এনামেলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ অপরদিকে এসিডিক পিএইচ -এ ব্যাকটেরিয়ার প্রজনন হার বেশি৷
* অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল মাউথ ওয়াশ যেমন- ০.২ শতাংশ ক্লোরহেক্সিডিন অথবা ০.৫ শতাংশ পভিডোন আয়োডিন প্রতিদিন ৩ বার, ২ চামচ ৩০ সেকেন্ড ধরে প্রতিবার কুলকুচি করতে হবে৷ গোলাপ জল দিয়ে গার্গল করা যেতে পারে৷
* প্রতি রাতে ১ বার ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করতে হবে৷
* মেনথল গাম ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে খাওয়া যেতে পারে৷
* নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস করা৷
* মুখ ও দাঁতের অসম্পূর্ণ চিকিৎসা সম্পন্ন করে নেওয়া, যাতে খাবার না জমতে পারে৷
* বর্তমানে কোভিড-১৯জনিত কারণে যেহেতু সবসময় মাস্ক পরে থাকতে হয়, এজন্য মুখ দিয়ে সবাইকে শ্বাস নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়৷ তাই সিডিসি গাইডলাইন অনুযায়ী, রোজাকালীন ৪ ঘণ্টা পরপর মাস্ক পরিবর্তন করতে হবে৷ পুনরায় ব্যবহারকৃত মাস্কগুলো ৪ ঘণ্টা পর প্লাস্টিকের ডাস্টবিনে রাখতে হবে পরে ধুয়ে পরতে হবে৷ রুমে একা থাকার সময় মাস্কবিহীন থাকা ভালো৷
* মাছ অনেক সময় দুর্গন্ধের কারণ হয়৷ তাই মাছের উপর লেবুর রস দিলে দুর্গন্ধ মুক্ত হয়৷
যা এড়িয়ে চলাই ভালো
* পিঁয়াজ, রসুন, মরিচ ইত্যাদি খাদ্যের মধ্যে যে কেমিক্যাল থাকে তাহা রক্তবাহিত হয়ে প্রথমে ফুসফুসে আক্রমণ করে পরে তা প্রশ্বাসের মাধ্যমে বেরিয়ে এসে গন্ধের সৃষ্টি করে৷
* ধূমপান পরিহার করতে হবে৷
* খাবার সোডা ও কার্বোনেটেড ফলের রসে উচ্চমাত্রায় চিনি থাকে তাই এগুলো জলশূন্যতার সৃষ্টি করে৷
* মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস বর্জন করতে হবে৷