• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

ডেপুটি স্পিকার নয়, স্পিকার বিমানই শপথবাক্য পাঠ করলেন সায়ন্তিকা ও রেয়াতদের

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: অবশেষে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে নতুন দুই বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রেয়াত হোসেন সরকারকে শপথ বাক্য পাঠ করালেন। এদিন যথারীতি পূর্ব ঘোষণা মতো শুক্রবার একদিনের অধিবেশন শুরু হয় রাজ্য বিধানসভায়। সেই অধিবেশনের মূল বিষয় ছিল নতুন দুই বিধায়কের শপথগ্রহণ। কিন্তু রাজ্যপালের নিযুক্ত প্রতিনিধি হিসেবে ডেপুটি স্পিকার এই শপথবাক্য পাঠ না

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: অবশেষে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে নতুন দুই বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রেয়াত হোসেন সরকারকে শপথ বাক্য পাঠ করালেন। এদিন যথারীতি পূর্ব ঘোষণা মতো শুক্রবার একদিনের অধিবেশন শুরু হয় রাজ্য বিধানসভায়। সেই অধিবেশনের মূল বিষয় ছিল নতুন দুই বিধায়কের শপথগ্রহণ। কিন্তু রাজ্যপালের নিযুক্ত প্রতিনিধি হিসেবে ডেপুটি স্পিকার এই শপথবাক্য পাঠ না করিয়ে তিনি অধ্যক্ষের দিকে দায়িত্ব ঠেলে দেন। সেই মতো বিমানবাবু বরানগর ও ভগবানগোলার নব নির্বাচিত দুই বিধায়ককে শপথবাক্য পাঠ করান। ফলে উপনির্বাচনে জয় লাভ করার ৩১ দিনের মাথায় এই দুই বিধায়ক শপথগ্রহণ করার সুযোগ পেলেন। কার্যত এই শপথগ্রহণের মধ্যে দিয়ে বিতর্ক একেবারে থেমে না গেলেও এখন থেকে তাঁরা বিধানসভার বিভিন্ন অধিবেশন ও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

প্রসঙ্গত বর্তমানে রাজ্যপাল রয়েছেন দিল্লিতে। গতকাল এই বিশেষ অধিবেশনের কথা পত্র মারফত স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপালকে জানালে তিনি দুই বিধায়ক সায়ন্তিকা ও রেয়াত হোসেনকে শপথবাক্য পাঠ করানোর জন্য ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়িত্ব দেন। কিন্তু আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় স্পিকারের উপস্থিতিতে এই দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “তিনি স্পিকারের উপস্থিতিতে কোনওভাবেই এই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। তাহলে স্পিকারকে অমর্যাদা করা হবে।” শুক্রবার শপথ অনুষ্ঠান শুরুর আগে একথা বলেন আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। অবশেষে বিমানবাবু নিজেই দুই বিধায়ককে শপথ বাক্য পাঠ করান। শপথের পর শাসকদলের বিধায়করা বিধানসভায় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন। যদিও এই শপথ অনুষ্ঠানে বিধানসভায় উপস্থিত ছিলেন না বিরোধী দল বিজেপি-র বিধায়করা।

এদিন দুপুর ঠিক ২টো ২৪ মিনিটে প্রথমে শপথ নেন রেয়াত হোসেন সরকার। এরপর সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় শপথগ্রহণ করেন। এর আগে দুপুর ১২টা নাগাদ বিধানসভার ব্যবসা বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি সিদ্ধান্ত নেয় যে, ডেপুটি স্পিকার আশিস বাবু দুই বিধায়কের শপথ বাক্য পাঠ করাবেন। এই বিএ কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, অরূপ বিশ্বাস, শশী পাঁজা সহ অন্যান্য তৃণমূল বিধায়করা। তাঁরা সকলে এই দুই বিধায়কের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের জটিলতা কাটাতে বৈঠকে বসেন। সেখানে আশিস বাবু শপথ বাক্য পাঠ করাতে আপত্তি জানালে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় স্পিকারই এই শপথবাক্য পাঠ করাবেন। যদিও বিরোধী দল বিজেপি-র বিধায়করা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে ওয়াক আউট করে অধিবেশন ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন।

এদিকে বিষয়টি জানার পর তীব্র প্রতিবাদ জানান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তিনি বলেন,”সংবিধানের ১৮৮ ধারা বলে আমার ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব অনুযায়ী, আমি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ৬২ নম্বর ভগবানগোলা এবং ১১৩ নম্বর বরানগর বিধানসভার নির্বাচিত বিধায়ক রেয়াত হোসেন সরকার ও সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথগ্রহণের জন্য ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়োগ করেছি। যা সংবিধানের তৃতীয় তফসিলে উল্লেখ করা হয়েছে।”

উল্লেখ্য, সায়ন্তিকা ও রেয়াতের শপথগ্রহণ নিয়ে রাজ্য বিধানসভা ও রাজভবনের মধ্যে সংঘাত লেগেই ছিল। রাজ্যপাল গত ২৬ জুন এই দুই বিধায়ককে শপথগ্রহণের জন্য রাজভবনে আসার আমন্ত্রণ জানালেও তাঁরা কেউ আসেননি। তাঁরা রাজভবনে যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু রাজ্যপাল এবং দুই বিধায়ক উভয়পক্ষই তাঁদের অবস্থানে অনড় থাকেন। এমনকি বিধানসভায় এসে শপথগ্রহণের দাবিতে এই দুই বিধায়ক বিধানসভা ভবনের সামনে ধর্নায় বসেন। এই দোলাচলের মধ্যে এক সপ্তাহ আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন। তিনি বলেন, “এটা কি হচ্ছে? তাঁরা বিধায়ক হিসেবে শপথ নিতে পারছেন না। হয় স্পিকার অথবা ডেপুটি স্পিকারকে শপথ গ্রহণের দায়িত্ব দেওয়া হোক। কেন তিনি বিষয়টিকে আটকাচ্ছেন? রাজভবনে যা হচ্ছে, তাতে মহিলারা আতঙ্কিত। সেখানে তাঁরা যেতে ভয় পাচ্ছেন।”

এই পরিস্থিতি সামাল দিতে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার একটি বিশেষ অধিবেশনের ডাক দেন। সেই অধিবেশনে আহবান জানিয়ে বৃহস্পতিবার রাজ্যপালকে বার্তা পাঠান অধ্যক্ষ। রাজ্যপাল বর্তমানে দিল্লিতে রয়েছেন। তিনি এই অধিবেশনে বিধানসভায় আসতে সম্মতি না জানালেও দুই বিধায়কের শপথবাক্য পাঠ করানোর জন্য ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়োগ করেন। কিন্তু আশিস বাবু সেই নির্দেশ না মেনে স্পিকারকে দায়িত্ব দেন। আর সেটা নিয়েই সাংবিধানিক নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে রাজ্যপাল দাবি করেছেন। যদিও স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, যেহেতু বিধানসভার অধিবেশন চালু আছে, সেজন্য রাজ্যপালের চিঠি মান্যতা পেল না। রুলস অফ বিজনেসের ২ নম্বর অধ্যায়ের ৫ নম্বর ধারা মেনেই তিনি শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন সায়ন্তিকা, রেয়াতদের।