হাথরস, ৪ জুলাই – হাথরসের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর থেকেই বেপাত্তা স্বঘোষিত ধর্মগুরু ভোলে বাবা। তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি কোনও অভিযোগ দায়ের না হলেও পুলিশ ভোলে বাবা এবং অনু্ষ্ঠানের আয়োজকদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। সেই তদন্তের প্রেক্ষিতেই ভোলে বাবার বেশকিছু নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেইসব নথি ও তথ্য দেখেই চোখ কপালে উঠেছে তদন্তকারীদের।
ভোলে বাবা নাম পরিচিত হলেও, তাঁর তথ্য যা বলছে তাতে তিনি মোটেই ভোলাভালা নন। ইটা জেলার পাটিয়ালি তেহশিলে বাহাদুর গ্রামের বাসিন্দা ভোলে বাবা। সেখানেই তাঁর মূল আশ্রম। কিন্তু তদন্তকারীরা তাঁর আরও একটি আশ্রমের খোঁজ পেয়েছেন যেটি রয়েছে মৈনপুরীতে। তথ্য অনুযায়ী, ১৩ একর জমির ওপর তৈরি হয়েছে ওই আশ্রম। চোখ ধাঁধানো ওই আশ্রম কোনও পাঁচতারা হোটেলের থেকে কম নয়। শুধু তাই নয়, যে জমিটিতে এই আশ্রম তৈরি করেছেন ভোলে বাবা তারই দাম নাকি ৪ কোটি টাকা। আশ্রমে অন্তত ১৫ থেকে ২০টি ঘর রয়েছে। তার মধ্যে ৬টি ঘর শুধুমাত্র ভোলে বাবার নিজস্ব কাজের জন্য ছিল। বাকি ৬-৭টি ঘর বরাদ্দ ছিল আশ্রমের কমিটির সদস্য এবং ভলেন্টিয়ারদের জন্য।
বিলাসবহুল জীবনের এখানেই শেষ নয় ভোলে বাবার। এই আশ্রমে আসার জন্য একটি প্রাইভেট রাস্তাও ছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। পাশাপাশি আশ্রমে রয়েছে এক অত্যাধুনিক ক্যাফিটেরিয়াও। তদন্তে এও জানা যাচ্ছে যে, এমন আরও একাধিক সম্পত্তি দেশজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে ভোলে বাবার নামে। তাদের দাম অন্তত কোটি টাকার কাছাকাছি।
ভোলে বাবার আসল নাম সুরজ পাল। শুরু থেকেই সাধু ছিলেন না তিনি। হাথরসের ঘটনার পর তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া পুরনো মামলাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনার পর থেকে ‘ভোলে বাবা’র পাত্তা মিলছে না। কিন্তু তিনি আড়াল থেকে বার্তা দিয়েছেন তিনি। তবে সামনে না এলেও পুলিশের সঙ্গে সবরকম সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি ।
ঘটনার পর থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যোগীর প্রশাসন নিয়ে। ফলে এই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যে কড়া বার্তা দিয়ে উচ্চ পর্যায়ের এক কমিটি তৈরি করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এই কমিটিতে রয়েছেন এলাহাবাদ হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ব্রিজেস কুমার শ্রীবাস্তব। তাঁর নেতৃত্বে কাজ করবেন অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার হেমন্ত রাও এবং অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার ভাবেশ কুমার সিং। নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্নের জবাব খুঁজেবে তদন্তকারী কমিটি। হাথরসের ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা, না কি এর নেপথ্যে কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে। কমিশনের সদর দফতর হবে লখনউয়ে। দু’মাসের মধ্যে সমস্ত জরুরি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে যোগী সরকারকে রিপোর্ট দেওয়ার কথা তাদের। যদি অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হয় তবে তার জন্য সরকারি অনুমতি নিতে হবে।
আপাতত যে সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বলা হয়েছে ওই কমিশনকে, সেগুলি হল আয়োজক সংস্থা জেলা প্রশাসনের সমস্ত শর্ত মেনেছিল কি না। ঘটনাটি দুর্ঘটনা, ষড়যন্ত্র না কি পরিকল্পিত অপরাধ? ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য কী কী পদক্ষেপ করেছিল জেলা প্রশাসন? ৪. আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে কী কী পদক্ষেপ করেছিল পুলিশ? ৫. ঠিক কী কারণে কী ভাবে ঘটনা ঘটল? এসব প্রশ্নের উত্তর মিললেই আসল সত্য সামনে আসবে বলে মনে করছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ ও প্রশাসন।