লখনউ, ৩ জুলাই: উত্তরপ্রদেশের হাতরাসের ভোলে বাবা সৎ সংঘের হৃদয় বিদারক পদপিষ্টের ঘটনায় বুধবার সকাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১২১ জন। আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তিনি হাসপাতালে গিয়ে আহতদের খোঁজখবরও নেন। ঘটনায় সৎসঙ্ঘের মুখ্য সেবাদর দেবপ্রকাশ মধুকর এবং অন্যান্য উদ্যোক্তা ও সেবাদরের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ধারা অনুযায়ী, একটি এফআইআর দায়ের হয়েছে। মঙ্গলবার স্থানীয় প্রচারক নারায়ণ সাকার বিশ্ব হরি ওরফে ভোলে বাবা আয়োজিত সৎসঙ্গ চলাকালীন এই পদদলিত হওয়ার ঘটনা ঘটে। বুধবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখেন এবং আহত ও নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন।
যেখানে হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা চলছে, সেখানে বুধবার সকাল ১১টা ১৫ নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সরাসরি চলে যান। তিনি আহতদের কাছ থেকে ঘটনার কথা শোনেন এবং তাঁর স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন। তিনি নিহতদের পরিবারের সঙ্গেও দেখা করেন। এরপর তিনি সার্কিট হাউসের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন। মুখ্যমন্ত্রী প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এদিকে আরও পাঁচজন আহত হয়ে মৃত্যুর ফলে সকালবেলা মোটের ওপর মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১৬ থেকে ১২১ হয়ে যায়। রাজ্যের মন্ত্রী সন্দীপ সিং এই পদপিষ্টের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির তথ্য স্বীকার করে নিয়েছেন। ঘটনায় আহতদের মধ্যে ২৮ জনের অবস্থা খুবই সঙ্কটজনক বলে জানা গিয়েছে। মৃতদের মধ্যে ১১৪ জন মহিলা এবং ৭ জন পুরুষ। যার মধ্যে এখনও ১৯ জনের দেহ সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। মঙ্গলবার গভীর রাতে এই ঘটনায় সিকান্দ্রারাও থানায় একটি এফআইআর দায়ের হয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নতুন অপরাধ মামলা ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’র ১০৫, ১১০, ১২৬(২), ২২৩, ২৩৮ ধারা রুজু করা হয়েছে। প্রধান সেবাদার দেবপ্রকাশ মধুকর এবং অন্যান্য অজ্ঞাত সংগঠক ও সেবাদারদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক হত্যাকাণ্ড এবং প্রমাণ লোপাটের ধারায় মামলাটি নথিভুক্ত হয়েছে।
এফআইআর-এর বয়ান অনুযায়ী, এই অনুষ্ঠানে মোট ৮০ হাজার ভক্তের অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, সেখানে প্রায় দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার ভক্ত অনুষ্ঠানে একসঙ্গে সমবেত হন। যার ফলে ওই সৎ সংঘের অনুষ্ঠানে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। পাশাপাশি, ভিড় নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থাও রাখা হয়নি। এভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতেই এই পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে। সূত্রের খবর, এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে পদপিষ্টে আহত ও নিহতদের পড়ে যাওয়া জুতো সংলগ্ন মাঠে ফেলে দেওয়া হয়। যাতে হাতে কোনও প্রমাণ না থাকে।
সূত্রের খবর, অনুষ্ঠান শেষে থিকথিকে ভিড়ের মধ্যে ভক্তরা ভোলেবাবার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু উদ্যোক্তারা লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যেতেই হুড়োহুড়ি ও মারামারি শুরু হয়ে যায়। যার ফলে বেশ কিছু মানুষ সেই দুর্ঘটনার মধ্যে পড়ে গিয়ে পদপিষ্ট হন। পুলিশের এফআইআর-এ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে,“অনিয়ন্ত্রিত ভিড় অনুষ্ঠানস্থল থেকে আরও বেড়ে যাওয়ায় মাটিতে বসে থাকা ভক্তরাও পদপিষ্ট হন। রাস্তার অপার প্রান্তে জল ও কাদা ভরা মাঠের ভিড়কে আয়োজক কমিটি জোরপূর্বক লাঠিসোঁটা দিয়ে থামিয়ে দেয়। এতে ভিড়ের চাপ বাড়তে থাকে এবং নারী, শিশু ও পুরুষরা পদপিষ্ট হতে থাকেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ ও প্রশাসনিক আধিকারিকরা যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে আহতদেরকে হাসপাতালে পাঠান। কিন্তু আয়োজকরা কোনও সহযোগিতা করেন নি।”