অন্দরে শিব এনে বিজেপিকে তুলোধনা রাহুলের
দিল্লি, ১ জুলাই– বড় অস্বস্তিতে দিল্লির আপ সরকার৷ ইডি- সিবিআই নিয়ে বেজায় বিপদে আম আদমি পার্টি প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল৷ ইডির পর সিবিআই-ও গ্রেফতার করে তাঁকে৷ আদালতের অনুমতি নিয়ে সিবিআই তাঁকে দিল্লির মদকাণ্ডে দফায় দফায় জেরা করছে৷ সোমবারই রাজধানীর রাউস অ্যাভিনিউ আদালত মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ারের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে থাকার মেয়াদ ১২ জুলাই পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে৷ আর এতেই ক্ষুব্ধ ইন্ডিয়া জোটের সাংসদেরা৷
আদালত নির্দেশ জানার পর সোমবারই এই ইসু্যতে সংসদের বাইরে প্রতিবাদে ফেটে পড়েন ইন্ডিয়া জোটের সাংসদেরা৷ লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধির নেতৃত্বে এদিন এজেন্সি রাজের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে শামি হল সাংসদরা৷ নিট দুর্নীতি নিয়ে সংসদে ঝড় উঠবে, তা নিশ্চিতই ছিল৷ সোমবার সংসদের অধিবেশনের শুরুতেই সর্বভারতীয় মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষায় গোলযোগ নিয়ে আলোচনা চেয়েছিলেন বিরোধীরা৷ কিন্ত্ত সেই দাবি খারিজ হয়ে যাওয়ায় অধিবেশন কক্ষে শোরগোল শুরু করেন তাঁরা৷ এদিন কংগ্রেস নেতার পাশে দাঁডি়য়েই বাইরে বেরিয়ে বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিরোধী সাংসদরা৷ তার মধ্যে তৃণমূল বিশেষ করে সরব হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহারের অভিযোগ তুলে৷ হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে নতুন সংসদ ভবনের মকরদ্বারের সামনে স্লোগান তোলেন সৌগত রায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, সায়নী ঘোষ, সাজদা আহমেদরা৷ তাদের হাতে বড় বড় ব্যানার৷ তাতে কেন্দ্রীয় সরকারকে দুষে লেখা বার্তা৷
তৃণমূলের সঙ্গে একই সুরে সুর মেলাতে দেখা গেল রাহুল গান্ধি, রাঘব চাড্ডাদের৷ নিট ইসু্যতে রাহুল গান্ধির বক্তব্য, ‘দেশের ছাত্রসমাজের পাশে আছি আমরা৷ এটা বোঝানো দরকার যে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যে খেলা চলছে, যে অনিশ্চয়তা ঘনিয়েছে তাদের পরিবারে, তা সংসদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ৷ তাই চেয়েছিলাম, আলোচনা হোক৷ কিন্ত্ত সরকার তো আলোচনা চায় না৷” অন্যদিকে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের দাবি, ‘আমরা বিরোধীদের অনুরোধ করেছি যে আগে রাষ্ট্রপতির ভাষণের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হোক, তার পর যে কোনও আলোচনায় প্রস্তুত৷’
এদিন রাহুলকে দেখে অনেকেই বলছেন তিনি ফের তার পুরানো লড়াকু মেজাজে ফিরে এসেছেন৷ ফের সাদা টি-শার্ট আর কালো ট্রাইজার পরে সংসদে এসেছেন৷ গত সপ্তাহে বিরোধী দলনেতা হিসাবে প্রথম দিন এসেছিলেন একেবারে রাজনীতির চেনা পোশাকে৷ রাহুলের পরনে ছিলেন সাদা কুর্তা-পাজামা৷ পরদিনও একই পোশাকে দেখা গিয়েছে তাঁকে৷
সোমবার ফের পুরনো পোশাকে লোকসভায় রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর ধন্যবাদজ্ঞাপন প্রস্তারের উপর বিতর্কে বক্তব্য রাখেন তিনি৷ নিট প্রশ্নফাঁস কাণ্ড এবং কেন্দ্রীয় এজেন্সির অপব্যবহার নিয়ে সংসদে সরব রাহুল গান্ধি ৷ তুলোধোনা করলেন কেন্দ্রকে৷ কংগ্রেস নেতার মন্তব্য, সরকারের অন্যায় বা ভুল নিয়ে প্রশ্ন তুললেই প্রতিহিংসার সাক্ষী হচ্ছে দেশ৷ বিরোধী নেতাদের জেলে ভরা হচ্ছে৷ আমার উপরেও আক্রমণ হয়েছে৷ কেডে় নেওয়া হয়েছে বাডি়৷ সোমবারের অধিবেশন রাহুল বুঝিয়ে দিলেন তিনিই বিরোধীপক্ষের সেনাপতি৷ অন্যদিকে অস্বস্তিতে সরকার পক্ষ৷
অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন সংসদে রাহুল কুর্তা-পাজামা পরেই আসবেন৷ কিন্ত্ত সোমবার ফের সাদা টি-শাট পরে এসে বুঝিয়ে দিয়েছেন, পোশাকে কী আসে যায়৷ কাজটাই আসল৷ রাহুলের আজ প্রধান কাজ নিট কেলেঙ্কারি নিয়ে সরকারকে চেপে ধরা৷ এছাড়া লোকসভা ভোটের প্রচারে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব তলব করা৷
‘হিন্দুরা নয়, হিংসা ও ঘৃণা ছড়ায় বিজেপি৷’ রাহুল গান্ধির এহেন মন্তব্যকে ঘিরেই উত্তাল হয়ে উঠল লোকসভা৷ বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধী দলনেতার এহেন মন্তব্যের পালটা সংসদে দাঁড়িয়ে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীকে ক্ষমা চাইতে হবে, বলে দাবি তুললেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ৷
লোকসভায় সোমবার ভগবান শিবের ছবি তুলে ধরে সরকারি নীতি ও বিধিবিধানের প্রতিবাদ জানালেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি৷ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে হইহই রব উঠে যায়৷ শুধু শিবের ছবিই নয়, ভাষণে গুরু নানকের প্রসঙ্গেরও অবতারণা করেন কংগ্রেস নেতা৷
শিবের পোস্টার তুলে ধরায় লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা আপত্তি জানিয়ে বলেন, সভার বিধি অনুযায়ী এখানে প্যাকার্ড দেখানো যায় না৷ কিন্ত্ত, অদম্য রাহুল বলে চলেন, ভারতের চিন্তাভাবনার বিরুদ্ধে একটি সংগঠিত, কৌশলগত, সর্বাত্মক আঘাত চলছে৷ সংবিধান রক্ষা এবং সংবিধানের উপর আক্রমণ যারা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে তাদের নিশানা করা হচ্ছে৷
রাহুলের বক্তব্য, “এই দেশ ভয়ের দেশ নয়৷ আমাদের পূর্বপুরুষরা অহিংসার কথা বলেছেন৷ ভগবান শিব তাঁর গলায় সাপ ও ত্রিশূল নিলেও তাঁকে দেখা যায় অভয়মুদ্রায়৷ যার অর্থ ভয় পেয়ো না৷ অন্যদিকে, যারা নিজেদের হিন্দু বলছে তাঁরা দিনরাত শুধু হিংসা, অসত্য ও ঘৃণা ছড়িয়ে চলেছে৷ আপনারা (বিজেপি) হিন্দুই না৷ হিন্দুধর্মে স্পষ্ট লেখা হয়েছে, সত্যের সঙ্গে দাঁড়াও৷ সত্যের জন্য লড়াই কর৷” একইসঙ্গে তিনি জানান, ‘বিজেপি কিংবা আরএসএস হিন্দু সমাজ নয়৷’