• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

১ জুলাই নতুন কেন্দ্রীয় আইন লাগু নিয়ে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখছে বার কাউন্সিল

মোল্লা জসিমউদ্দিন: আগামীকাল অর্থাৎ সোমবার সারা দেশজুড়ে চালু হচ্ছে নতুন কেন্দ্রীয় আইন। তাতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ১৭,৫০০ পুলিশ স্টেশনে জনসচেতনতা কর্মসূচি পালন করা হবে। এর পাশাপাশি এই রাজ্যের সমস্ত আদালতে প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল। যদিও গত শুক্রবার এক আইনজীবীর মামলার পরিপেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টের তরফে জানানো হয়েছে যে, ‘কোনও আইনজীবী মামলায়

মোল্লা জসিমউদ্দিন: আগামীকাল অর্থাৎ সোমবার সারা দেশজুড়ে চালু হচ্ছে নতুন কেন্দ্রীয় আইন। তাতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ১৭,৫০০ পুলিশ স্টেশনে জনসচেতনতা কর্মসূচি পালন করা হবে। এর পাশাপাশি এই রাজ্যের সমস্ত আদালতে প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল। যদিও গত শুক্রবার এক আইনজীবীর মামলার পরিপেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টের তরফে জানানো হয়েছে যে, ‘কোনও আইনজীবী মামলায় অংশগ্রহণ করতে চাইলে তা পারবেন। ওইদিন মামলায় অংশগ্রহণকারী আইনজীবীর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবেন না’।

তবে কলকাতার বার এসোসিয়েশনের ঘর বন্ধ থাকবে। কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী বৈদূর্য ঘোষাল জানান, ” মামলাকারীদের স্বার্থে আদালত সচল থাকাটা কাম্য”। বুধবার কলকাতার সিটি সিভিল কোর্টে অবস্থিত ‘বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এর অফিসে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। উক্ত সংস্থার তরফে অশোক দেব (চেয়ারম্যান), শ্যামল ঘটক (কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান) , আনসার মন্ডল, সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়, বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়, প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ওইদিন বার কাউন্সিলের তরফে চেয়ারম্যান অশোক দেব জানিয়েছেন, ”আগামী ১ জুলাই সারা রাজ্যজুড়ে সমস্ত আদালতে আইনজীবীরা কেন্দ্রীয় আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবেন।” এর পাশাপাশি বার কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান শ্যামল ঘটক বলেন, “সাধারণ মানুষ ও বিচারপ্রার্থীদের কাছে নতুন কেন্দ্রীয় আইনের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা কর্মসূচি চলব। এর পাশাপাশি আইনজীবীদের স্বার্থ ও সুরক্ষা যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেই বিষয়ে বার কাউন্সিল লড়াই চালিয়ে যাবে।”

ইতিমধ্যেই এই কেন্দ্রীয় আইনের বিরুদ্ধে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। নতুন কেন্দ্রীয় আইনে পুলিশের অপরিসীম ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তাতে সাধারণ মানুষরা আগামীদিনে বিপদে পড়তে পারেন বলে মনে করছেন বার কাউন্সিলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও বর্তমান সদস্য আনসার মন্ডল। আরেক সদস্য (প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান) সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “নতুন এই কেন্দ্রীয় ৩টি আইনের অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে। যেগুলির সংস্কার প্রয়োজন। ”

আগামীকাল অর্থাৎ সোমবার থেকে বাতিল হতে চলেছে ব্রিটিশ আমলের ভারতীয় দণ্ডবিধি (আইপিসি) এবং ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি) আইন। সেই জায়গায় চালু হচ্ছে নতুন আইন— ন্যায় সংহিতা ও দণ্ড সংহিতা। পুরাতন আইন অনুযায়ী, কেউ প্রতারণায় অভিযুক্ত হলে তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় মামলা রুজু করা হয়। কিন্তু নতুন ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’ চালু হয়ে গেলে প্রতারণার মামলা দায়ের করা হবে ৩১৮ ধারায়। এর পাশাপাশি, বদলে যাচ্ছে খুনের ঘটনায় মামলার ধারাও। বর্তমানে খুনের অভিযোগের ক্ষেত্রে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় মামলা রুজু হয়। নতুন আইনে তা রুজু হবে ১০৩ ধারায়। অনিচ্ছাকৃতভাবে মৃত্যু ঘটানোর ক্ষেত্রে মামলার ধারা ৩০৪-এ থেকে বদলে হবে ১০৬।

এছাড়া, খুনের মামলা-সহ দশ বছরের সাজা রয়েছে, এমন ধারায় মামলা হলে অভিযুক্তকে ৬০ দিনের মধ্যে যে কোনও ১৫ দিন পুলিশ নিজেদের হেফাজতে রাখতে পারবে। গত ডিসেম্বরে নতুন দণ্ড সংহিতা সংক্রান্ত তিনটি বিল পাশ হয়েছিল সংসদে। আইন হিসাবে ওই তিনটি বিল কার্যকর হবে আগামী ১ জুলাই। তারই সঙ্গে বাতিল হয়ে যাবে ১৮৬০ সালে তৈরি ভারতীয় দণ্ডবিধি (ইন্ডিয়ান পেনাল কোড), ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধি (ক্রিমিনাল প্রসিডিয়োর কোড) এবং ১৮৭২ সালের ভারতীয় সাক্ষ্য আইন (ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট)। এই তিন আইনের জায়গা নেবে যথাক্রমে ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’, ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’ এবং ‘ভারতীয় সাক্ষ্য বিল’। নয়া এই আইনের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে অবহিত করতেই দেশের ১৭ হাজার ৫০০ পুলিশ স্টেশনে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে সমস্ত মহিলা, যুব-ছাত্র। প্রবীণ নাগরিক এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নয়া এই আইনের বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

ইতিমধ্যে সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে এই বিষয়ে নির্দেশকা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে। যেখানে প্রতিটি থানার অফিসার ইনচার্জকে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে বলে জানানো হয়েছে। নয়া এই ফৌজদারি আইন কার্যকর করতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেজন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে সাহায্য করছে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো। বিভিন্নভাবে সাহায্য করছে। এমনকি ৩৬টি সাপোর্ট টিম এবং কল সেন্টার খোলা হয়েছে। যার মাধ্যমে নয়া আইন নিয়ে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ এবং গাইড করা হচ্ছে।

পাশাপাশি পুলিশ, জেল, ফরেন্সিক বিভাগ এবং বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত ৫ লাখ ৮৪ হাজার ১৭৪ জনকে এই বিষয়ে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে।অন্যদিকে নয়া আইন নিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে দফায় দফায় বৈঠক করা হচ্ছে। আগামী সোমবার থেকে নয়া আইন কার্যকর হলে যাতে সমস্যা না হয় সে বিষয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন কনফারেন্স করা হয়েছে বলেও খবর। ১৮৬০ সালে তৈরি হওয়া ভারতীয় দণ্ডবিধির জায়গায় আসছে ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’ । এছাড়া ১৮৯৮ সালে যে ‘ক্রিমিনাল প্রসিডিওর অ্যাক্ট’ বা ফৌজদারি দণ্ডবিধি তৈরি হয়েছিল, তার জায়গায় আসছে ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’। ১৮৭২ সালে যে ‘ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট’ তৈরি হয়েছিল, তার বদলে কার্যকর হচ্ছে ‘ভারতীয় সাক্ষ্য আইন’। গত বছর ডিসেম্বর মাসে নয়া ফৌজদারি আইনে অনুমোদন দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।