নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সোমবারের পর বৃহস্পতিবার ফুটপাথে হকার উচ্ছেদ, অবৈধ পার্কিং লট ও জমি দখল করে অবৈধ নির্মাণ নিয়ে ফের সরব হলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, হকার উচ্ছেদ মানে ফুটপাথ দখলমুক্ত করে জনসাধারণের চলাচলের উপযোগী করা। হকারদের ভাতে মারা সরকারের লক্ষ্য নয়। বৃহস্পতিবার এই বার্তায় দিলেন মমতা। তিনি বলেন, হকারদের উচ্ছেদ করতে বলছি না। তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট একটি জোন করা হবে। একজন হকারকে একটি জায়গাই দেওয়া হবে। কাউকে বেকার করে দেওয়া আমার লক্ষ্য নয়। সেই সঙ্গে এদিন জমি দখল নিয়ে আরএসএস-এর বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, ‘তৃণমূলের বাড়ি ভাঙলে আরএসএস-এর কেন নয়? কোনও একটা দল, পুকুর ভরাট করে তিন তলা বাড়ি করে নিয়েছে। বাড়িটা আরএসএস-এর।’
গত সোমবার হকার উচ্ছেদ প্রসঙ্গে মমতা ‘বাইরে থেকে এসে’ কথাটি ব্যবহার করেন। অর্থাৎ বাইরে থেকে আসা কোনও ব্যক্তি ফুটপাথে ব্যবসা করা হকারদের যে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, সেটা তাদের দেওয়া হবে না। আর সেই বক্তব্য ঘিরে সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য পাল্টা মমতাকে বেঁধেন। তিনি বলেন,“আরএসএস-এর পরামর্শে মুখ্যমন্ত্রী নড়াচড়া করেন। আমি তো অনেকদিন থেকে বলে আসছি এ কথা। এখন মারাত্মক অপরাধমূলক কথা বলেছেন। বাঙালি-অবাঙালি বিভাজন করার চেষ্টা করছেন। বাংলায় বিভিন্ন ভাষাভাষি মানুষ যুগ যুগ ধরে বসবাস করছেন। অনেকে বাংলা সংস্কৃতিকে গ্রহণ করে নিয়েছে। উনি তো ইউসুফ পাঠানকে, কীর্তি আজাদ, শত্রুঘ্ন সিনহাকে এনেছেন। এখন নির্বাচনের পর বাঙালি-অবাঙালি বিভাজন করছেন। এই বিভেদই আরএসএস চায়। উনি সেটা খুব সূচারুরূপে খেলে যাচ্ছেন।”
সেই প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার মমতা বলেন, ‘তৃণমূলের বাড়ি ভাঙলে আরএসএস-এর কেন নয়? সরকারি জমি কিন্তু মিউটেশন করানো। গত সাত বছরে কী কী জমি হস্তান্তর হয়েছে, খোঁজ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনও একটা দল, পুকুর ভরাট করে তিন তলা বাড়ি করে নিয়েছে। বাড়িটা আরএসএস-এর।’ তিনি আরও বলেন, ‘তৃণমূলের বাড়ি ভাঙলে, আরএসএস-এর কেন না? বিক্রমগড়ে তো প্রায়ই শুনতে পাচ্ছি, এই দখল করছে। এটা কি ছেলের হাতের মোয়া হয়ে গিয়েছে? আমি একা বকবক করব?’ বৃহস্পতিবার নবান্ন সভাঘরে বক্তব্য রাখার সময় এই কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি তিনি বলেন, বহিরাগতদের জায়গা দেওয়া হবে না। এদিন হকার নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কণ্ঠে বারবার বিরক্তি লক্ষ্য করা যায়। তিনি বলেন, গড়িয়াহাটে হাঁটার জায়গাই নেই। একজন হকার, চারটে ডালা, এটা চলবে না।
প্রসঙ্গত জমি দখলের অভিযোগ নিয়ে সোমবার মমতা খড়গহস্ত হন। তিনি দলের ব্লক সভাপতির গ্রেফতারির প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। ডাবগ্রামে জমি দখলের চেষ্টা ও এক ব্যক্তিকে খুনের হুমকির অভিযোগে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি দেবাশিস প্রামাণিককে গ্রেফতারের প্রসঙ্গও উঠে আসে। এই প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার ফের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দেখলেন তো ডাবগ্রামের তৃণমূলের ব্লক সভাপতিকে গ্রেফতার করিয়ে দিয়েছি। আমি গ্রেফতারির নির্দেশ দিয়েছিলাম। যে কাউন্সিলরের এলাকায় এইসব হবে তাঁকে গ্রেফতার করতে হবে।” বিজেপি-কে তোপ দাগেন লুঠের টাকা নিয়েও। তিনি বলেন, “লোকাল মাফিয়ারা, বালি মাফিয়া, জমি মাফিয়া ওরা সব করে খাচ্ছে, আমি কেন বদনামটা নেবো? ওরা ডান হাতে টাকা নিচ্ছে, বাঁ হাতে টাকাটা বিজেপিকে দিচ্ছে। আমার দরকার পড়ে না।”
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবারই জলা জমি ভরাট করে দলীয় কার্যালয় তৈরির অভিযোগে আসানসোল আরএসএস-এর ভবনে হাজির হয় পুলিশ। যান বিএসআরও আধিকারিকরা। যদিও আরএসএস-অভিযোগ অস্বীকার করে। সংঘের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এখানে কোনও অবৈধ বিষয় নেই।